বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

গণেশের জন্ম বৃত্তান্ত ও প্রথম পূজিত ইতিহাস"

Ashok Dev's photo.Ashok Dev's photo.
সংস্কৃত শিবপুরাণ মতে পঞ্চম অধ্যায়ে ঋষিকপিল দ্বারা মহাদেবের অভিশপ্ত পর্ব :-
সূর্যদেব তার জ্ঞানরঞ্জন হওয়ার অহংকারে দেবতাদের সাথে জ্ঞান তর্কে জড়িত হয়ে পড়ে। একসময়ে সেই তর্ক নিজেদের কার্যবিধির উপরে তর্ক বিতর্কেও শুরু হয়। সূর্যদেব দেবতাদের সাথে তর্কে জেতার জন্য নিজের শক্তি ক্ষমতা প্রদর্শন হেতু সূর্যদেব নিজেকে আলোকহীন করে পৃথিবীকে অন্ধকার করে বসে। ত্রিলোক অন্ধকার দেখে ব্রহ্মা বিষ্ণু উদ্বিগ্ন হয়ে পরে। তারা উভয়েই চিন্তা করলো, এই সমস্যা সমাধান হেতু মহাদেব শরণাপন্ন হওয়া একান্তই প্রয়োজন, কেননা দেবতাদের দেবরুপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সয়ং মহাদেব নিজেই। অতঃপর ব্রহ্মা বিষ্ণু কৈলাসচন্দ্রের উদ্দেশ্য গমন করলেন। কৈলাসে মহাদেব দেখলেন ব্রহ্মা,বিষ্ণু উভয়েই উপস্থিত, তখন মহাদেব বললেন ব্রহ্মদেব, বিষ্ণুদেব আপনাদের আগমনের কারণ? ব্রহ্মদেব বললেন মহাদেব আপনি ত্রিকাল দর্শী শক্তিধর ও শক্তিপতি, হেন পরিস্থিতি আপনার অজ্ঞাত নয়। মহাদেব বললেন ত্রিলোক আলোকহীন যা শুধুমাত্র সূর্যদেবের অহঙ্কারের হট্টমালার কারণে। তখন ব্রহ্মদেব বললেন সূর্যদেবের হটের সমাধান না হলে সৃষ্টির সৃজনশীলতার ব্যাঘাত ঘটবে অতএব আপনি ব্যতীত হেন পরিস্থিতির সমাধান অসম্ভব। মহাদেব বললেন অত্র পরিস্থিতির সমাধান হেতু আমি সূর্যালোকে যাচ্ছি। অতঃপর মহাদেব সূর্যলোকে গমন করলেন। সূর্যলোকে গিয়ে মহাদেব সূর্যদেবকে বিভিন্ন প্রকারে সান্ত্বনা সরুপ বোঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু সূর্যদেব কিছুতেই মানতে নারাজ। শেষে মহাদেব সূর্যদেবকে বললেন, আপনাকে শক্তি প্রদান করা হয়েছে সৃষ্টির বিকাশের জন্য, সৃষ্টির সৃজনশীলতা কাজের ব্যাঘাত ঘটাতে নয়। আপনি আপনার দায়িত্ব পালনের কাজে সামান্য একটি তর্ক বিতর্ক নিয়ে সৃষ্টির সৃজনশীলতার কাজে অন্যায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন না, ভুলে যাবেন না সৃষ্টিকে আলোকিত রাখা আপনার নৈতিক দায়িত্ব। মহাদেব মুখে এই বাক্যে বচ্চন শুনে সূর্যদেব ক্রোধান্নিত হয়ে বললেন, মহাদেব আপনি আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটালে আমার ক্রোধান্নিত তেজশক্তি আপনাকে ধংস করতে পারে তাই অনুরোধ করছি আপনি সূর্যলোক হতে প্রস্থান করুন। সূর্যদেবের মুখের বাক্য বচ্চন শুনে মহাদেব ক্রোধান্নিত হইলেন, বললেন আপনার মধ্যে এত অহঙ্কার জন্মেছে আপনি আমাকে ধংস করার বাক্যে মুখান্নিত হইলেন। আপনার এই অহঙ্কার ধংস ব্যতীত আর কোন পথনির্দেশ আমার সামনে নেই। অতঃপর মহাদেব নিজের ত্রিশূল সূর্যদেবের উপর প্রহার করলেন এবং তত্ক্ষণাত্ সূর্যদেব ত্রিশূল আঘাতে প্রাণপাত হইলেন। অতঃপর সেই স্থানে সূর্যদেব পিতা ঋষিকপিল উপস্থিত হইলেন তিনি দেখলেন তার পুত্রের শব্ পরে আছে। সেই ক্ষণে ঋষিকপিল পুত্র শব্ নিয়ে কান্না করে। ঋষিকপিল বললেন মহাদেব এ আপনি কি করলেন? আপনি আমার পুত্রকে হত্যা করলেন? মহাদেব বললেন অহঙ্কারের বশিভূত হয়ে আপনার পুত্র নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে গিয়েছিল আর আপনার পুত্রের অহঙ্কারের বিনাশ করাটা একান্তই প্রয়োজন ছিল। ঋষিকপিল মহাদেব মুখবাক্য শুনে মহাদেবকে বললো, আমি ঋষিকপিল আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছি যেরকম আপনি আমার পুত্রকে হত্যা করছেন একদিন আপনি নিজেই নিজের হাতে পুত্র হত্যার দ্বায়ী হবেন এ আমার অখণ্ড অভিশাপ। তারপর ঋষিকপিল আবার পুত্র শোকে শোকার্ত হয়েপড়ে অতঃপর মহাদেব বললেন ঋষিকপিল সরে দাঁড়ান। ঋষিকপিল দেখলেন মহাদেব সূর্যদেবের প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন। প্রানান্নিত হয়ে সূর্যদেব বললেন, মহাদেব আমাকে ক্ষমা করুন আমি অহঙ্কার বশিভূত হয়ে নিজের নৈতিক দায়িত্ব ও দেবতার দেবধর্ম ভুলে গিয়েছিলাম। আমার কারণে সৃষ্টির সৃজনশীলতার কাজের ব্যাঘাত ঘটেছে তাই আমি অনুশোচিত এবং আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার সহিত প্রণাম প্রদর্শন করছি যে আপনি আমাকে অহঙ্কার মুক্ত করেছেন। ধন্যবাদ মহাদেব আপনার শ্রীচরণে আমার কোটি কোটি প্রণাম। মহাদেব ঋষিকপিলকে বললেন আমি সূর্যদেবকে নয় সূর্যদেবের অহঙ্কারের হত্যা করেছিলাম যা অনিচ্ছুক বশত করতে বাধ্য হয়েছিলাম। হেন সৃষ্টি বিকাশের জন্য আপনার অবদান কৃতিত্ব অনেক, হয়তো আমার স্থানে আপনিও তাই করতে বাধ্য হইতেন। আপনি কি চান আপনার গোত্রীয় মানবজাতি অন্ধকারে জীবন যাপন করুক। ঋষিকপিল নিজ পুত্রের মুখবাক্য শুনে বললো, মহাদেব আমি জ্ঞানী হয়ে পুত্র মোহে পূর্ণ ঘটনা বিবেচনা না করে নিজমুখে একি অভিশাপে আপনাকে অভিশপ্ত করলাম। যে অভিশাপ আমি সয়ং নিজে চাইলেও শিথিল করতে অক্ষম। মহাদেব বলেন ঋষিকপিল ভুলে যাবেন না ত্রিদেবের যেকোন কর্ম সৃষ্টির কল্যাণে। আপনি সৃষ্টি বিকাশের সপ্তঋষির একজন মহাত্মা আর একজন মহাত্মার মুখবাণী কখনও বিফল যাইনা। আজ আপনার দ্বারা অভিশপ্ত হওয়ার কারণ ভবিষ্যতে মানব কল্যাণ বয়ে আনবে। এতে আপনি অনুশোচিত হইবেন না, আপনার মুখমণ্ডল হইতে সেই অভিশাপই এসেছে যা ভবিষ্যতে প্রতিফলিত হবে।
(শিবপুরাণ মতে ঋষিকপিল দ্বারা মহাদেবের অভিশপ্ত পর্ব সমাপ্ত)
সংস্কৃত শক্তিপুরাণের মতে দ্বিতীয়,তৃতীয়, ষষ্ঠ,অষ্টম, নবম ও দশম অধ্যায়ে :-
"মহাদেবের অন্তকালীন যোগ তপস্যা গমন,
আদিশক্তির দ্বারা মানব কল্যাণে সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্ম, মহাদেব দ্বারা গণেশের হত্যা ও পুনরায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা, গণেশের প্রথম পূজিত বর্ণনা পর্ব ":-
কার্তিক জন্মের পর থেকেই কৈলাশের বাইরে ছিল। দেবী পার্বতীর শত ইচ্ছা সত্তেও কার্তিককে কৈলাশে আনা সম্ভব ছিলোনা। এই নিয়ে মহাদেব পার্বতীর মধ্যে সবসময় তর্ক বিতর্ক হতো। একদিন দেবী পার্বতী মনস্থির করে নিয়েছেন যে আজ কার্তিককে কৈলাশে আনাবোই। মহাদেব তখন জ্ঞান কুন্ডে সপ্তঋষিদের জ্ঞান প্রদান সভায় উপস্থিত। দেবী পার্বতী জ্ঞান সভায় উপস্থিত হয়ে বললেন স্বামী আপনার নিকট কিছু আলাপ আছে। মহাদেব বললো, দেবী আমি জ্ঞান সভা শেষে আপনার নিকট আসবো আলাপচারিতা করবো। দেবী পার্বতী বললেন না, আমার এখন আপনার সাথে আলাপ করতে হবে। মহাদেব বললো দেবী আপনাকে এতো অস্থির দেখাচ্ছে কেন? দেবী পার্বতী বললো আজ এখুনি আমি কার্তিককে আমার সান্নিধ্যে চাই? তখন জ্ঞান সভায় উপস্থিত ঋষি সান্ডুল্য বললেন, মাতা কার্তিকের জন্ম হয়েছে অসুরকে বধ করার জন্য যা মানব কল্যাণে ঐকার্যে তিনি এখনো অবস্থিত। মাতা চারিদিকে অসুরের ত্রাসে জর্জরিত শুধু মাত্র কার্তিকেই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। কারণ আপনার এবং মহাদেবের যোগতেজ দ্বারা জন্মিত কার্তিক ব্যতীত অন্য কোন শক্তি অসুরপতিদের বিনাশ করতে পারবেনা। কারণ অনেক অসুরপতি ত্রিদেবের বরদান প্রাপ্ত যা সয়ং ত্রিদেব চাইলেও বধ করতে পারবেনা। মাতা সৃষ্টির কল্যাণ হেতু কার্তিককে নিয়ে প্রভুর সাথে মতপার্থক্য তর্কে জর্জরিত হবেন না। কিন্তু দেবী পার্বতীর উপর ঋষির কথার কোন প্রভাব পড়লো না। এরপর একে একে ঋষি কপিল,ঋষি মুগুল্য ও অন্য ঋষিগণ বোঝালেন কিন্তু কাজ হলো না অতঃপর মহাদেব দেবী পার্বতীকে বোঝালেন তাতেও কাজ হলো না। দেবী পার্বতী তার কথায় অটল, এরপর দেবী পার্বতী ও মহাদেব তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পরলেন। তর্ক বিতর্ক এমন এক পর্যায় চলে গেলেন, মহাদেব পার্বতীর উপর ক্রোধান্নিত হয়ে গেলেন। দেবী পার্বতী বললেন যদি আজ আমি কৈলাস পুরীতে কার্তিককে না পায় তাহলে আমি কৈলাস ত্যাগ করবো। দেবী পার্বতীর মুখের বাক্য বচ্চন শুনে মহাদেবের ক্রোধ আপোসহীন হয়ে গেল অতঃপর মহাদেব বললো আমি আজ এক্ষুণি অন্তকালীন তপস্যায় যাচ্ছি (অন্তকালীন তপস্যা বলতে মহাদেবের ইন্দ্রিয় তপস্যা যে তপস্যায় মহাদেব মহাকাশ, পৃথিবী ও পাতাল হতে নিজেকে ভিন্ন করে ফেলেন অর্থাৎ এই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড মহাদেব বিহীন হয়ে যাই)। এই বলে মহাদেব নিজেকে অন্তকালীন তপস্যার জন্য জ্ঞান সভা থেকে প্রস্থান করলেন। সপ্তঋষি গণের আকুতি মিনতি উপেক্ষা করে মহাদেব তপস্যায় লিপ্ত হইলেন। তখন দেবী পার্বতী মনমলিন হয়ে ফিরে যায়। এরপর মহাদেবের অন্তকালীন তপস্যার আঁসিবছর অতিবাহিত হয়েছিল,এদিকে অসুরের উৎপাত বেড়ে যায় এবং অসুরজাতি মানবজাতিকে মায়াচন্ন করে হিংস্ররূপে তৈরি করে। মহাদেব বিহীন সেই হিংস্র মানুষ ও মৃত্যুহীন হয়ে উঠে এমনকী দেবতারা নিঃসঙ্গ হয়েপড়ে। তখন দেবতা ও সপ্তঋষিগণ ব্রহ্মার শরণাপন্ন হয়, ব্রহ্মা দেবতা ও সপ্তষীদের নিয়ে বৈকুন্ঠে বিষ্ণুর শরণাপন্ন হয়। ব্রহ্মা বলেন হে পালনহার সৃষ্টির এই পরিণতির কি সমাধান? বিষ্ণু উত্তরে বলেন আমি নিজেও উদ্বিগ্ন, মহাদেব অন্তকালীন আর আমরা কেউ মহাদেবকে ফিরিয়ে আনতে গেলে মহাদেবের রুদ্ররুপ সম্পূর্ণ সৃষ্টিকে বিনাশ করবে। ব্রহ্মদেব বললেন তাহলে উপায়? শ্রী বিষ্ণু বললেন চলুন ব্রহ্মদেব আমরা দুইজন আদিশক্তির শরণাপন্ন হই?(আদিশক্তি যার কোন প্রকৃত রুপ,আকৃতি বা মূর্তি এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে নেই যে নিরাকার। এমনকী কোন ঋষিও তপস্যা গুণে তাকে অর্জন করতে পারেনি এবং এই ত্রিদেবের জন্ম(অর্থাৎ ব্রহ্মা বিষ্ণু মহাদেব) সয়ং আদিশক্তি হতে। য়ার মাত্র দশ মহাবিদ্যা শক্তি ধারণ করেছেন মহাদেব সংহার কর্তা হওয়ার জন্য তাও মানবরুপে শত জন্ম গ্রহন করার পর, যাকে আমরা দেবী দূর্গা বলে জানি। এজন্য দেবী দূর্গাকে আদিশক্তি বলে আখ্যায়িত করা হয় যার মধ্যে দশ মহাবিদ্যা স্থিত।)অতঃপর ব্রহ্মা বিষ্ণু শক্তিলোকের উদ্দেশ্যে গমন করেন। (অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যদি আদিশক্তি নিরাকার হয় কোন মুনিঋষি আদিশক্তিকে ধ্যাণ যোগে অর্জন করতে না পারে তাহলে কিভাবে ব্যাসদেব বেদগ্রন্থে ও বিভিন্ন পুরাণে এই ত্বত্ত কথা লিপিবদ্ধ করলেন। যখন মহাদেব অন্তকালীন হইতে ফিরে আসেন তখন কৈলাসে শ্রী বিষ্ণু অন্তকালীন একশত বছরের তাণ্ডব ও গণেশের জন্ম বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। যদিও মহাদেব সব জানতেন।) তখন বৈকুণ্ঠে সপ্তঋষি ও দেবতারা অপেক্ষারীত। ব্রহ্মা বিষ্ণু শক্তিলোকে গিয়ে উপস্থিত হইলেন,দুজনেই বললেন প্রণাম মাতা। আদিশক্তি প্রণাম গ্রহন করে বললেন, তোমাদের আগমন উদ্দেশ্য কি? মাতা আপনি সর্ব জ্ঞাত, সৃষ্টির সংকট নিরসনে আমরা আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। সৃষ্টির সংকট নিরসনের জন্য আমার শরণাপন্ন না হয়ে আমার স্থিতি দশমহাবিদ্যা পার্বতীর নিকট যাও। দেবী পার্বতীকে বলো সৃষ্টির সংকট নিরসনে সংকট মোচনের জন্ম আবির্ভাবের সময় এসেছে যা একান্তই প্রয়োজন। সমাধান পেয়ে ব্রহ্মা বিষ্ণু শক্তিলোক হতে প্রস্থান করে বৈকুণ্ঠে গমন করেন, বৈকুণ্ঠ হতে সপ্তঋষি ও দেবতাদের নিয়ে কৈলাসের উদ্দেশ্যে গমন করেন। সেই সময় পার্বতী শিবলিং পুজায় মগ্ন ছিলেন। অতঃপর ব্রহ্মা বিষ্ণু ও অন্যান্য সবাই গিয়ে উপস্থিত। পার্বতী সবাই কে দেখে বললো আপনাদের কৈলাসে পদার্পণের কারণ? বিষ্ণুদেব বললেন দেবী সৃষ্টির সৃজনশীলতা সংকট নিরসনে আমরা আপনার শরণাপন্ন হয়েছি, পার্বতী বললেন, বলুন আপনাদের জন্য কি করতে পারি? দেবী সৃষ্টির সংকট মোচনের জন্য আপনাকে এক পুত্রের আবির্ভাব করতে হবে। পার্বতী বললো আপনারা জানেন মহাদেব অন্তকালীন তাহলে মহাদেব ব্যতীত পুত্রের আবির্ভাব কিভাবে সম্ভব? ব্রহ্মদেব বলেন দেবী আপনি আদিশক্তি সরুপ দশমহাবিদ্যা স্থিতি এবং সৃষ্টির প্রকৃতি, আমার বিশ্বাস আপনি চাইলে আমাদের সংকট নিরসন সম্ভব। দেবরা পুরুষ ও প্রকৃতি মিলে সৃষ্টি সম্ভব এখন জিনি পুরুষ তিনি অন্তকালীন শুধু প্রকৃতি কিভাবে সৃষ্টিসাধ্য করবে? বিষ্ণু বলেন আপনাকে কোন একটা উপায় খুঁজতে হবেই অন্যথা সৃষ্টি ধংস হয়ে যাবে। দেবী পার্বতী বললেন ঠিক আছে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। তখন সবাই কৈলাস হতে প্রস্থান করলেন। অতঃপর দেবী পার্বতী শিবলিং পুজার ফুল বিসর্জন দিতে কৈলাসের সরোবরে গেলেন সরোবরের কাছে বসে চিন্তা করলেন, আমার এমন একটা পুত্রের জন্ম দিতে হবে যে সৃষ্টির কল্যাণ বয়ে আনবে এবং আমার অনুসারী হয়ে চলবে। তখন পার্বতী পুজোর ডালি থেকে চন্দন নিয়ে গায়ে মাখতে লাগলেন কিছুক্ষণ পরে সেই চন্দন ও গায়ের ময়লা সহ তুলতে লাগলেন। এইভাবে বেশ কয়েকবার গায়ের ময়লা চন্দন তুলে দেবী পার্বতী সেই মলয়চন্দন দিয়ে এক শিশুর মূর্তি তৈরি করলেন এবং সেই মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন। যেহেতু গায়ের মল থেকে ঐ শিশুর জন্ম সেই শিশুর জ্ঞান বুদ্ধি মল জ্ঞান বুদ্ধি রুপে আবদ্ধ থাকে যা মাতৃ আদেশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। আচার্য হলেও এটা সত্য সে শিশুর আগমনে পৃথিবীতে অসুরেরা যে মানবজাতিকে মায়াচন্ন করেছিল তারা সবাই মায়ামুক্ত হয়ে উঠে। পার্বতী কুমারের বয়স যখন ছয়বছর তখন মহাদেবের অন্তকালীন শতবর্ষ পূর্ণ হয়। একদিন নন্দী সংবাদ নিয়ে আসে যে মহাদেব অন্তকালীন হতে প্রস্থান করবে এবং সরাসরি পার্বতীর সান্নিধ্যে আসবে। অতঃপর এই সংবাদ ত্রিলোক ছড়িয়ে পড়ে। তখন ব্রহ্মদেব ও দেবী সরস্বতী,বিষ্ণুদেব ও দেবী লক্ষ্মী, স্বর্গের সকল দেবতা ও অপ্সরী এবং সপ্তঋষিগণ কৈলাসে এসে উপস্থিত। সবাই দেখে দেবী পার্বতী অতি আনন্দিত, মুখে মহাদেব আগমনের প্রসন্নতা ফুটে উঠেছে। অতঃপর দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতী পার্বতীর দুই সখী সহ পার্বতীকে স্নান কুন্ডে নিয়ে যায়, যাওয়ার সময় দেবী পার্বতী কুমারকে বলে পুত্র আমি স্নান কুন্ডে প্রবেশ করছি তুমি স্নান কুন্ডের প্রবেশ দ্বারে প্রহরায় থাকো দেখবে যাতে কেউ স্নান কুন্ডে প্রবেশ করতে না পারে। তার কিছুক্ষণ পড়ে মহাদেব কৈলাসে এসে হাজির হইলেন এবং মহাদেব নন্দীকে বললেন যাও তোমার মাতার কাছে সংবাদ পৌঁছাও আমি এসেছি। নন্দী গিয়ে সংবাদ পৌঁছাতে যাচ্ছিল পার্বতী কুমার বললো দাঁড়াও ভেতরে যেতে মাতার নিষেধ আছে, নন্দী বললেন কুমার তোমার পিতা মহাদেব এসেছেন সেই সংবাদ মাতার নিকট পৌঁছানোর আদেশ করেছেন আমার প্রভু। পার্বতী কুমার বললো এইযে প্রভুর আদেশ পালনকারী তোমার প্রভুকে গিয়ে বলো অপেক্ষা করতে। নন্দী গিয়ে মহাদেবকে বলে মহাদেব শুনে ক্রোধান্নিত হইলেন, তখন দেবতারা সবাই বললো ক্রোধ করবেন না প্রভু অবুঝ শিশু আমরা গিয়ে বোঝাচ্ছি। এক এক করে সব দেবতারা গিয়ে পার্বতী কুমারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু সবাই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। এক পর্যায়ে দেবতারা ধৈর্যহীন হয়ে পার্বতী কুমারের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় কিন্তু তাতেও সবাই পরাস্ত হয়ে ফিরে আসে। সেইসব দেখে মহাদেবের ক্রোধা অগ্নি রুপ ধারণ করে। তখন মহাদেব নিজেই স্নান কুন্ডের সামনে যায়, পার্বতী কুমার বলে দাঁড়ান ভেতরে যেতে মাতার নিষেধ আছে। মহাদেব বললো পুত্র আমি তোমার পিতা, উত্তরে পার্বতী কুমার বললো প্রনিপাত পিতা। মহাদেব বললো পুত্র আমাকে স্নান কুন্ডের ভেতরে যেতে দাও, পার্বতী কুমার বললো আপনি আমার পিতা হতে পারেন কিন্তু আমার মাতার আদেশ কেউ যাতে স্নান কুন্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। মহাদেব বললো পুত্র আমার ক্রোধের পরীক্ষা নিওনা, পার্বতী পুত্র বললো আপনার ক্রোধ আসলে কিআর হবে আপনার আগে অনেকেই এসেছিল সবাই পলায়ন করেছে। মহাদেব বললো পুত্র তোমাকে অন্তিম বার বলছি আমার পথ অবরুদ্ধ করিওনা সড়ে দাঁড়াও, পার্বতী পুত্র বলে যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণেতো নয়। উপস্থিত সকল দেব, ঋষি, অপ্সরীগণ হতভম্ব হয়ে যায় সবাই বলতে লাগে মহাদেবের ক্রোধের প্রকোপ থেকে পার্বতী পুত্রকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। অতঃপর মহাদেব নিজের পুত্রের উপর ত্রিশূল প্রহার করে। ক্রোধের তেজের কারণে ত্রিশূল হইতে অগ্নি নির্বাহ হয়, ত্রিশূল গিয়ে পার্বতী কুমারের মস্তক ছিন্ন করে মাটিতে পড়ে যায় এবং তেজ অগ্নিতে মস্তক বিস্তীর্ণ হয়ে যায়। মস্তক খণ্ডিত হওয়ার আগে কুমার মা বলে চিৎকার করে উঠে, আর সেই ডাক শুনে পার্বতী স্নান কুন্ড থেকে বেরিয়ে আসে, এসে দেখে তাঁর পুত্রের মস্তক বিহীন শব্ প্রবেশ দ্বারের মুখে পড়ে আছে। পার্বতী বললো, কে এই হত্যা কার্য করেছে? মহাদেব বললো আমি। কেন? কারণ কুমার আমাকে স্নান কুন্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা গ্রস্থ করেছিলো। পার্বতী বললো, এতে কুমারের দোষ কোথায় আমি কুমারকে আদেশ করেছিলাম যাতে কেউ স্নান কুন্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। তাই বলে একটি শিশুর উপর অস্ত্রের প্রহার করবেন এবং আপনারা সকল দেবতারা এসেছিলেন সৃষ্টির সংকট নিরসনের জন্য, আর যে আপনাদের সংকট মোচন করলো সেই শিশুটির উপরে অস্ত্র প্রহার করতে আপনাদের বিবেকে একটু লাগলোনা। মহাদেব বললো,পার্বতী তোমার গায়ের মল থেকে জন্ম নেওয়ার কারণে কুমারের জ্ঞান বুদ্ধি মলাণিত হয়েছিল, ভাল মন্দ গুরুজনের প্রতি ভক্তিমূলক ভাষার প্রদর্শন জ্ঞান তার মধ্যে নেই বললেই চলে। পার্বতী বললো, এইটা আমার পুত্র হত্যার কারণ হতে পারে না। আমি পার্বতী বলছি, আমি আমার পুত্রকে পূণজীবিত রুপে চাই? মহাদেব বললো, তা অসম্ভব কারণ কুমারের মস্তক বিস্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাই যদি হয় তাহলে যে পুত্রের আবির্ভাব সৃষ্টির সংকট মোচনের জন্য করেছিলাম আজ সেই সৃষ্টি নিজের হাতেই বিনাশ করবো। এই বলে পার্বতী দশমহাবিদ্যা রুপ ধারণ করে দূর্গা রুপে নিজেকে বিশাল আকৃতিতে পরিণত করে এবং পৃথিবী বিনাশ কর্ম শুরু করে। সেইরুপ দেখে সমস্ত সৃষ্টি তরথর করে কাঁপতে থাকে। তখন বিষ্ণুদেব বলল, মহাদেব অতিশয় পার্বতী কুমারের প্রাণ পুনরায় প্রতিষ্ঠার যুক্তি খুজুন অন্যথা আজ সৃষ্টির বিনাশ নিশ্চিত, ভুলে যাবেন না দেবী পার্বতী আদিশক্তি সরুপ। তখন মহাদেব বললো, একমাত্র পথ হচ্ছে সূর্যাস্তের আগে পৃথিবীর যেকোনো প্রাণী জীব অথবা মানুষ যার মা দক্ষিণ মূখী ও সন্তান উত্তর মূখী নিদ্রায় সায়িত আছে সেই উত্তর মূখী সন্তানের মস্তক খণ্ডিত করে নিয়ে আসতে হবে, তাহলে দেবী পার্বতী পুত্রের প্রাণ পুন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। ব্রহ্মদেব এই দায়িত্ব দেবরাজ ইন্দ্র ও পবণ দেবকে প্রদান করে। তারা দুইজন ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত দেখে একটি ঐরাবত মা দক্ষিণ মূখী ও তার ঐরাবত সন্তান উত্তর মূখী নিদ্রা যাপন করছে। অতঃপর দেবরাজ ইন্দ্র দেরি নাকরে শিশু ঐরাবতের মস্তক খণ্ডিত করে একটি বস্ত্র ডেকে কৈলাসে নিয়ে চলে আসে। যখন মহাদেব ঐ মস্তক হইতে বস্ত্র উৎথান করে সবাই হতভম্ব হয়ে উঠে, দেবরাজ ইন্দ্র বলে অনেক খোঁজার পরে এই প্রাণীটিকে পেয়েছি। সময়ের অভাবে আমি নিরুপায় প্রভু। ব্রহ্মদেব বলেন মহাদেব সময় শেষ ক্ষণে আপনি অতিশয় পার্বতী কুমারের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করুন। মহাদেব সেই ঐরাবত মস্তক দিয়ে পুত্রের প্রাণ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে এবং পুত্র প্রানান্নিত হওয়ার সাথে সাথে যখন মা করে ডাক দিল তখন দেবী দূর্গার তাণ্ডব রুপ শিথিল করে পার্বতী রুপে স্থিত হয় এবং পুত্রকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে। তখন পার্বতী বলে আমার পুত্রের এই রুপ আসা করিনি। অতঃপর সকল দেব দেবীগণ ও মহাদেব সয়ং নিজে বরধান প্রদান করে পার্বতী পুত্রকে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান ও শক্তিপতি করে তুলে। তখন দেবী পার্বতী বললো ঐরাবত মুখী হলেও এটা আমার সন্তান যে আমাকে মা বলে ডাকবে। এরপর বেশ কিছুদিন সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অসুরজাতির বিনাশ কার্য সমাপন করে কার্তিক কৈলাসে ফিরে আসে। তখন পার্বতী বলেন, আমার কৈলাস পুরী আজ পরিপূর্ণ হয়েছে আমার দুই পুত্র আমার সান্নিধ্য আজ কৈলাসে উৎসব উদযাপন করা হোক। কৈলাসে বিশাল উৎসবের আয়োজন করা হয়, অত্র উৎসবে ব্রহ্মা,বিষ্ণু,স্বর্গ সভার সকল দেবতা, স্বর্গের অপ্সরী ও সপ্তঋষিগণ উপস্থিত হইলেন। তখন সভায় উপস্থিত সবার সামনে বিষ্ণুদেব বলেন, মহাদেব সিদ্ধিদাতাকে দৈবিক কর্মে নিয়োগ করে স্বর্গ সভায় স্থাপিত ও নাম করণ করার সময় এসে গেছে। মহাদেব বললো, হে বিষ্ণুদেব সৃষ্টির সৃজনশীলতা কাজের প্রত্যেক পদে দেবতাদের নিয়োগ পরিপূর্ণ তবে কৈলাসে গণের অধিপতি পদ শুন্য তাই আজ আমি কুমারকে কৈলাসের গণের ঈশ (অর্থাৎ ইষ্টপতি) হিসাবে নিয়োগ করলাম। যেহেতু কুমার কৈলাস গণের ঈশ হয়েছে তাই আজ হতে কুমারের নামকরণ করা হলো গণেশ। তত্ক্ষণাত্ বিষ্ণুদেব বললো, গণেশের জন্মে সৃষ্টির কার্যসাধিত হয়েছে তাই গণেশের পূর্ণ নাম হবে সিদ্ধিদাতা গণেশ। পূর্ণ নামকরণের পর সবাই সিদ্ধিদাতা গণেশের জয় জয় কার করতে লাগলো। বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন স্বর্গের রাজ সভায় অগ্নিদেব বললেন, যেহেতু মহাদেব পুত্র কার্তিক স্বর্গ তথা ত্রিলোককে অসুর অত্যাচারের হাত হতে সুরক্ষিত করেছে আমাদের প্রয়োজন কার্তিককে দেবরাজ হিসাবে ঘোষণা করার। দেবরাজ ইন্দ্র বলে এ কিভাবে সম্ভব, আমি দেবতাদের রাজা আর আমি থাকতে মহাদেব পুত্র দেব সিংহাসন অধিপতি হবে কেমন করে? তখন বরুণ দেব বলেন কার্তিকের অবদান ও কৃতিত্ব কি সেই অধিকার দেয়না? দেবরাজ ইন্দ্র বলেন এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের কোন প্রয়োজন নেই, এই সমস্যার সমাধান সয়ং মহাদেব করবে। পরদিন সকল দেবতারা কৈলাসে যায় মহাদেবের সামনে নিজ নিজ মতবাক্য উপস্থাপন করে, মহাদেব কিছু বলার আগে কার্তিক নিজেই বলে উঠে আমি যা করেছি তা আমার কর্তব্য অত্র কার্যে আমার কোন আধিপত্য লালসা ছিলনা তাই আমি দেব সিংহাসন চাইনা। মহাদেব বললো অতি সুন্দর পুত্র তোমার উদারতা দেখে আমি মুগ্ধ কৃত্তি করেছ কিন্তু কোন লোভ লালসা নেই। এদিকে দেবরাজ ইন্দ্র মনে মনে প্রসন্ন পথের কাটা নিজে থেকে সরে গেছে। স্বর্গের সিংহাসন সমস্যা সমাধান হলেও শুরু হয় প্রথম পূজিত ঘোষণা নিয়ে, কেননা স্বর্গের রাজ সভার বেশির ভাগ দেবতা কার্তিকের প্রশংসায় মুখরিত কারণ তারা দেবরাজ ইন্দ্রের কটাক্ষ মুখবাণীর প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। প্রথম পূজিত ঘোষণা নিয়ে স্বর্গ সভায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়, সেই সংবাদ মহাদেবের নিকট পৌঁছালে মহাদেব ঘোষণা করে যে, যে দেবতা নিজের বাহন নিয়ে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সপ্তবার পরিক্রমা সর্ব প্রথম সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে সেই প্রথম পূজিত ঘোষিত বলে বিবেচিত হইবে। সবাই সেই প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। উত্তরায়ণের দ্বাবিংশ দিবসে প্রতিযোগিতার ফল্স্রুত দিন ধার্য করা হয়। উক্ত দিনে ত্রিদেব ও সর্ব সাধারণের উপস্থিতিতে প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়। প্রতিযোগিতায় সূর্যদেব ও চন্দ্রদেব অংশ নেওয়ার কারণে পৃথিবী সম্পূর্ণ রুপে অন্ধকার হয়ে যায়। প্রতিযোগিতায় গণেশ অংশ গ্রহন না করলে বিষ্ণুদেব বলেন, গণেশ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তোমার অধিকার তুমি অংশ গ্রহন কর ঐদেখ তোমার ভ্রাতা কার্তিকও অংশ গ্রহন করেছেন। তারপরও গণেশ ইচ্ছা প্রকাশ না করায় দেবী পার্বতী বলে পুত্র যাও প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন কর, অতঃপর গণেশ বললো যো আদেশ মাতা। এরপর গণেশ তাঁর বাহন মূসককে আনতে কৈলাসের ভেতরে গেলে অন্ধকার জনিত কারণে মূসককে খুঁজে না পায়। তখন গণেশ চিন্তা করলো সামান্য প্রথম পূজা অধিকার অর্জনের জন্য আজ সমগ্র পৃথিবীটা আলোকহীন আগে আমি এই সৃষ্টি আলোকিত করি তারপর না হয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিব। গণেশ তখন এমন এক দিব্যজোতি প্রজলন করে যার আলোতে সমগ্র সৃষ্টি আলোকিত হয়ে যায়। অতঃপর গণেশ মূসককে নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন হেতু পদার্পণ করবে আবার চিন্তা করলো, একি যারা আমার সর্বাঙ্গে ব্রহ্মাণ্ড আমার মাতাপিতা তাদের প্রদক্ষিন না করে আমি এ কোন ব্রহ্মাণ্ডের প্রদক্ষিণে লিপ্ত হতে যাচ্ছি। তা বলে গণেশ মহাদেব ও পার্বতীর চতুর্ধারে করজোড় হাতে সপ্তবার প্রদক্ষিণ করে এবং প্রদক্ষিণ শেষে প্রণামী মন্ত্র পাঠ করে। সর্বশেষে যখন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য গণেশ মূসককে নিয়ে কৈলাস থেকে বের হয় তখন দেখে কার্তিক প্রতিযোগিতা শেষ করে ফিরে আসেন, তা দেখে গণেশ মূসককে নিয়ে আবার কৈলাস সভায় ফিরে যায়। কার্তিককে দেখে কৈলাসের গণেরা জয় কার্তিকের জয় বলে জয়ধ্বনি করে, অতঃপর ব্রহ্মা ও বিষ্ণু বলেন অবশেষে দেবতাদের এই মনমুগ্ধকর প্রতিযোগিতায় মহাদেব ও পার্বতী পুত্র বিজয়ী হলো। অতঃপর একে একে সব দেবতারা প্রতিযোগিতা শেষ করে কৈলাসের সভায় ফিরে আসেন। দেবী পার্বতী প্রফুল্ল মনে কার্তিককে বিজয়ী ঘোষণা করবে সেইক্ষণে বিষ্ণুদেব বলে মহাদেব কৈলাস নন্দন কার্তিককে বিজয়ী ঘোষণা করুন।উত্তরে মহাদেব বললো, বিজয়ী কৈলাস নন্দন হয়েছে সত্য কিন্তু সে কার্তিক নয় বিষ্ণুদেব। বিষ্ণুদেব বললো তাহলে কে? মহাদেব বললো গণেশ। কার্তিক প্রশ্ন করলো কিভাবে পিতা গণেশ তো প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন পর্যন্ত করেনি? তখন মহাদেব বললো কার্তিক, পুত্র তোমার ব্রহ্মাণ্ড কোনটি? উত্তরে কার্তিক বললো, আমার সর্বাঙ্গীণ ও সর্বাগ্র ব্রহ্মাণ্ড আমার মাতা ও আপনি আপনারা দুইজন, শুধু আমি কেন তথা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সব সন্তানের ব্রহ্মাণ্ড আগে মাতা পিতা। অতঃপর মহাদেব বললেন পুত্র তুমি সপ্তবার ব্রহ্মাণ্ড পরিক্রমা শেষ করার আগেই তোমার ছোট ভ্রাতা গণেশ তাঁর মাতা পিতাকে সপ্তবার পরিক্রমা সম্পূর্ণ করেছে, তাহলে তুমি বলো বিজয়ী কে? তখন কার্তিক বললো আমি মহাদেব পার্বতী পুত্র অত্র সভায় উপস্থিত সকল দেব, দেবী, মহর্ষি ও ত্রিদেবের কাছে গণেশ কে বিজয়ী ঘোষণা করার অনুমতি প্রার্থনা করছি। অত্র সভায় উপস্থিত সকলে সাধু সাধু ধ্বনি উচচারণ করলো। অতঃপর কার্তিক গণেশ কে বিজয়ী ঘোষণা করলো। এভাবে গণেশ বিজয় হয় এবং প্রথম পূজনীয় স্থান অর্জন করে। সেই দিনের পর থেকে সয়ং ত্রিদেবের পুজার আগে এবং সকল পুজার আগে গণেশ পুজা আবশ্যক ও বিধান রুপে স্থিত হয়। প্রথমে গণেশ পুজা ব্যতীত কোন পুজা ফল্স্রুত ও পরিপূর্ণ হয় না। প্রায় একলক্ষ বছর আগের সেই অর্জন তথা কৃত্তিকা সনাতনী সমাজ আজ পর্যন্ত নিয়মানুযায়ী পালন করে যাচ্ছে।
এই গ্রন্থ ইতিহাসের কিছু কিছু অংশ শিবপুরাণের মধ্যে স্থিত আছে। আমি অতি সংক্ষেপে গণেশের জীবনী ঘটনাবলি তুলে ধরেছি। যদি কোন ব্যক্তির এই ঘটনার পূণাঙ্গ জীবনী বর্ণনা জানতে ইচ্ছে হয় তাহলে শক্তিপুরাণ পড়বেন ও কিছু অংশ শিবপুরাণের মধ্যেও পাবেন। উপরোক্ত বর্ণনার আগে আমি পুরাণ গুলোর অধ্যায় উল্লেখ করেছি।
বিঃদ্রঃ :- আমি যা লিখেছি তা সংস্কৃত শক্তিপুরাণ ও শিবপুরাণের মতে। বাংলা সংকলিত কিছু কিছু পুরাণ গুলোতে বিকৃত করা হয়েছে যার সাথে আমার লিখার কিছু ঘটনা অন্য ধরনের পাবেন।
আমার প্রত্যেকটি পোষ্ট্টে একটি কথা উপস্থাপন করি এখনো করছি: আমি মোবাইলে পোষ্ট্ লিখি তাই আমার অনিচ্ছা বশত এখানে অনেক বানান ভুল আছে, তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা জ্ঞাপন করছি।
ॐ জয় মা ॐ
ॐ জয়গুরু অদৈতানন্দ, ॐ জয়গুরু পূর্ণানন্দ
ॐ জয় মা আদিশক্তি। শ্রী মাতা কৃপাহি কেবলম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন