শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর লীলা ৫:

 Image may contain: one or more people
মহাপ্রভুর নির্দেশে শ্রীনিত্যানন্দ এবং হরিদাস ঠাকুর সর্বত্র হরিনাম প্রচার করেন। ঐ সময়ের সর্ব সবনিকৃষ্ট পতিত হচ্ছেন দুই ভাই-জগাই ও মাধাই। পৃথিবীতে এমন কোন পাপ নেই যা তারা করেনি; মাংসাহার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট-সবকিছু। সারাদিন মদের নেশার বিভোর হয়ে থাকত এই দুইজন। তাদের এই পতিত দশা দেখে নিত্যানন্দ প্রভু এবং হরিদাস ঠাকুর তাদেরকে হরিনাম করতে অনুরোধ করলেন। অনুরোধ শুনে মাতাল দুটি অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল এবং অশ্লীল গালাগালি দিতে দিতে তাদেঁরকে তাড়া করতে শুরু করল। পরের দিন আবার তাঁরা দুই মাতালের কাছে গিয়ে ভগবানের নাম কীর্তন করতে অনুরোধ করলেন। পুনরায় ক্রুদ্ধ হয়ে মাধাই একটি কলসির কানা দিয়ে নিত্যানন্দ প্রভুর মাথায় আঘাত করল, এবং সেই আঘাতের ফলে প্রভুর কপাল কেটে দরদর ধারায় রক্ত ঝরে পড়তে লাগল। কিন্তু নিত্যানন্দ প্রভু এতই করুনাময় যে, এই কাজের জন্য কোন রকম প্রতিবাদ না করে তিনি বললেন “তুমি যে আমাকে কলসির কানা ছুড়ে মেরেছ তাতে আমি কিছু মনে করিনি, কিন্তু আমার একমাত্র অনুরোধ যে তুমি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরির নাম কীর্তন কর। ইতিমধ্যে নিত্যানন্দ প্রভুর আঘাতের সংবাদ পেয়ে মহাপ্রভু অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে সুদর্শন চক্রকে আহ্বান করলেন দুই পাপীকে সংহার করার জন্য। কিন্তু নিত্যানন্দ প্রভু তাদের হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলেন এবং মহাপ্রভুকে তাঁর অবতরনের উদ্দেশ্য মনে করিয়ে দিলেন। মহাপ্রভু অবতরনের উদ্দেশ্য হচ্ছে কলিযুগের সমস্ত অধপতিত মানুষকে কৃষ্ণপ্রেম প্রদানের মাধ্যমে উদ্ধার করা এবং এই দুই ভাই-জগাই মাধাই হচ্ছে সেই অধপতিত মানুষের আদর্শ দৃষ্টান্ত। প্রকৃতপক্ষে, বৈদিক সমাজের বিলুপ্তি ও বর্তমান যুগের প্রভাবে অধিকাংশ মানুষই একেকটি জগাই মাধাইয়ে পরিণত হয়েছে। তবুও আমাদের মতো জগাই মাধাইদের জন্য একমাত্র সৌভাগ্যের বিষয় হল হরিনাম মহামন্ত্রকে জীবনের সম্বলরূপে গ্রহন করা।
জগাই মাধাই সমস্ত পাপকর্ম বর্জন করে পরম দয়ালু ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর চরণে আশ্রয় গ্রহন করল এবং কৃষ্ণপ্রেম লাভ করল।
পাপী তাপী যত ছিল হরিনামে উদ্ধারিল
তার সাক্ষী জগাই আর মাধাই।।

এভাবে মহাপ্রভু সবচেয়ে পতিত ব্যাক্তিদেরও কৃষ্ণপ্রেম বিতরণ করেছেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন কলিযুগের অধপতিত জীবদের সৌভাগ্য আনয়নকারী সুহৃদ। যে দুর্লভ বস্তু-কৃষ্ণপ্রেম হাজার হাজার বছর তপস্যা করে লাভ করা যায় না, যা গোলোক বৃন্দাবনের সবচেয়ে গোপনীয় বস্তু, সেই কৃষ্ণপ্রেম আপামর মানুষকে অকাতরে তিনি বিতরণ করেছেন অত্যন্ত করুণার বশবর্তী হয়ে। শুধুমাত্র দিব্য হরিনাম উচ্চারণের মাধ্যমেই এই দুর্লভতম কৃষ্ণপ্রেম লাভ করা যায়। আর, এই হরিনামকে বিশ্বপরিসরে ছড়িয়ে দিয়েছেন মহাপ্রভুরই এক অন্তরঙ্গ প্রেরিত দূত, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি অভয়চরনারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ।
মহাপ্রভু ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন “পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম, সর্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম।” তাঁর এই ভবিষ্যত বাণীকে সার্থক রূপদান করেছেন শ্রীল প্রভুপাদ। তাঁরই কৃপাতে সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদশূণ্য হয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করছে। তিনিই প্রকৃত জাতিসংঘ গঠন করেছেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু অপার করুণায়। এই হরিনামের ফলেই সবাই লাভ করছে দিব্য আনন্দ ও সুখি জীবন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন