শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

হিন্দুদের অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কথা

Image may contain: 2 people , fire and night
অন্নপ্রাশন
হিন্দুধর্মীয সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ উৎসব। দশবিধ শুদ্ধিজনক সংস্কারের অন্যতম একটি হচ্ছে অন্নপ্রাশন। অন্নের প্রাশন বা ভোজনকে অন্নপ্রাশন বলে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সন্তান যদি বালক হয়, তবে ৬ষ্ঠ কিংবা ৮ম মাসে এবং বালিকা হলে ৫ম কিংবা ৭ম মাসে অন্নপ্রাশন করতে হয়। এতে সন্তানের ‍মামার উপস্থিতি বাঞ্চনীয়। এ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করতে হয়। নিমন্ত্রিত আত্মীয়েরা আশীর্বাদ সহযোগে সাধ্যমাফিক উপহারসামগ্রী প্রদান করে।
উপনয়ন
উপনয়ন একটি হিন্দু শাস্ত্রানুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হিন্দু বালকেরা ব্রাহ্মণ্য সংস্কারে দীক্ষিত হয়। হিন্দু ঐতিহ্য অনুসারে, উপনয়ন হিন্দু বালকদের শিক্ষারম্ভকালীন একটি অনুষ্ঠান।
হিন্দুধর্মে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বর্ণের জন্য উপনয়নের ন্যূনতম বয়স যথাক্রমে সাত, তেরো ও সতেরো বছর। উপনয়নকালে বালকদের ব্রহ্মোপদেশ শিক্ষা দেওয়া হয়।মনুস্মৃতি অনুযায়ী, এরপর তারা ব্রহ্মচারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। বাঙালি হিন্দু সমাজে অবশ্য কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রেই উপনয়ন সংস্কার প্রচলিত।
উপনয়ন অনুষ্ঠানে শরীরে যজ্ঞোপবীত বা উপবীত (চলিত বাংলায় পৈতে) ধারণ করা হয়। উপবীত প্রকৃতপক্ষে তিনটি পবিত্র সূতো যা দেবী সরস্বতী, গায়ত্রী ও সাবিত্রীর প্রতীক। উপবীত ধারণের সময় উপবীতধারী গায়ত্রী মন্ত্র শিক্ষা করে। উপনয়নের পর ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের দ্বিজ বলা হয়। দ্বিজ শব্দের অর্থ দুইবার জাত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রথমবার ব্যক্তির জন্ম হয় মাতৃগর্ভ থেকে; এবং দ্বিতীয়বার জন্ম হয় উপবীত ধারণ করে।
শ্রাদ্ধ
শ্রাদ্ধ হিন্দুশাস্ত্রানুযায়ী পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তির উদ্দেশে এবং তাদের আশীর্বাদ কামনায় দান-ধ্যান ও অতিথিভোজন অনুষ্ঠান। সাধারণত মৃত ব্যক্তির সন্তান কিংবা আত্যীয়-স্বজনরা এ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। অবশ্য ব্যক্তি নিজেও মৃত্যুর পূর্বে এ কাজ করে যেতে পারে।
শ্রাদ্ধ প্রধানত তিন প্রকার: আদ্যশ্রাদ্ধ, আভু্যদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ ও সপিণ্ডীকরণ। আদ্যশ্রাদ্ধ অশৌচান্তে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে করণীয়। বর্ণভেদে ব্যক্তির মৃত্যুদিবসের ১১, ১৫ অথবা ৩০ দিন পরে এটি অনুষ্ঠিত হয়। মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকজন এ-কদিন ফলমূল, নিরামিষ এবং লবণ ছাড়া আতপ চালের ভাত খায়। শ্রাদ্ধের আগের দিন মৃত ব্যক্তির পুত্ররা মাথার চুল ফেলে দেয় এবং শাস্ত্রীয় নিয়ম-কানুনসমূহ পালন করে। শ্রাদ্ধের দিন সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া-প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ায়। নিকট অতীতে ধনী ব্যক্তিরা কয়েক হাজার পর্যন্ত লোককে খাওয়াত; বর্তমানে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের কারণে সেই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে। শ্রাদ্ধ উপলক্ষে ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়-স্বজনদের নানারকম দান-ধ্যানও করা হয়।
উপনয়ন, বিবাহ ইত্যাদি শুভকাজের পূর্বে পিতৃপুরুষের আশীর্বাদ কামনায় যে শ্রাদ্ধ করা হয়, তার নাম আভু্যদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ। আর সপিণ্ডীকরণ শ্রাদ্ধ হলো যা ব্যক্তির মৃত্যুর এক বছর পরে করা হয়। এ তিনটি ছাড়া আরও কয়েক প্রকার শ্রাদ্ধ আছে। যেমন, মহালয়া প্রভৃতি বিশেষ হিন্দু আচার উপলক্ষে এবং বিশেষ তিথিতে কারও মৃত্যু হলে তার উদ্দেশে যে শ্রাদ্ধ করা হয় তার নাম পার্বণশ্রাদ্ধ। পার্বণশ্রাদ্ধে সাধারণত পিতৃপক্ষের তিন পুরুষ ও মাতৃপক্ষের তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড দান করা হয়। এক সঙ্গে একজন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে যে শ্রাদ্ধ করা হয় তার নাম একোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধ। অম্বষ্টকা নামেও এক প্রকার শ্রাদ্ধ আছে; তবে এর প্রচলন কম। হিন্দুদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান গয়ায় বিষ্ণুপাদপদ্ম শ্রাদ্ধ করা প্রশস্ত। অনেক ধনী ব্যক্তি পিতা-মাতার শ্রাদ্ধ গয়াধামে গিয়ে করে থাকেন। শ্রাদ্ধ বিষয়ে শূলপাণির শ্রাদ্ধবিবেক ও রঘুনন্দনের শ্রাদ্ধতত্ত্ব বঙ্গদেশে অতি প্রামাণ্য গ্রন্থরূপে বিবেচিত হয়।

1 টি মন্তব্য: