
(সম্পূর্ণ পোস্ট না পড়ে শুধু ফটো দেখেই কেউ কোনো কমেন্ট করবেন না।)
এই পোস্টের সাথে ফটো আকারে যে ছবিটি দিয়েছি, সেটা দেখলে যে কারো মনে হবে, এই ছবিতে উল্লিখিত পুরুষ একজন লম্পট; কারণ, গাছে উঠে সে নদীতে স্নানরত মেয়েদের নগ্ন শরীর দেখছে। শুধু তাই নয়, তাদের কাপড়গুলো পর্যন্ত সে চুরি করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছে, যাতে মেয়েরা তাকে দেখে, চাইলেও পোষাক দিয়ে নিজেদের শরীর ঢাকতে না পারে। এই ছবিটি, কৃষ্ণ চরিত্রকে কলুষিত করার জন্য মুসলমানদের এক প্রধান অস্ত্র।
ছবিটি দেখে আপাত দৃষ্টিতে কৃষ্ণকে লম্পট মনে হলেও প্রকৃত ঘটনা বা প্রকৃত সত্যটা আসলে কী ?
শুরু থেকেই আমাদের হিন্দু ধর্ম প্রচারিত হয়েছে কিছু নির্বোধ ব্যক্তির মাধ্যমে, যাদের উদ্দেশ্য হিন্দু সমাজ ও ধর্মের কল্যাণ করা ছিলো না, উদ্দেশ্য ছিলো বিজনেস।
ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় মেলায় গিয়ে ক্যালেন্ডার সাইজের পোস্টারে শ্রীকৃষ্ণের এই বৃক্ষবিলাসের ছবি দেখেছি, কিন্তু কোনো ছবির নিচে শ্রীকৃষ্ণের এই ঘটনা ঘটানোর বিস্তারিত বা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেখি নি, আর হিন্দু সমাজে সেই ব্যবস্থাও নেই যে, ছোটবেলা থেকেই হিন্দু ছেলে মেয়েরা ধর্মীয় জ্ঞান নিয়ে বড় হবে। তাহলে হিন্দুধর্ম নিয়ে মুসলমানদের সমালোচনার বা প্রশ্নের জবাব হিন্দু ছেলে মেয়েরা দেবে কিভাবে ? এই যথোপযুক্ত জবাব দিতে না্ পেরেই হিন্দু ছেলে মেয়েরা মুসলমানদের কাছে ছোট হয়, কেউ কেউ হিন্দু ধর্ম নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে এবং মুসলমানদের প্রশ্ন জিহাদের মুখে পড়ে আস্তে আস্তে হিন্দুধর্মের মহাসাগর থেকে উঠে ইসলামের নোংরা নর্দমার দিকে এগিয়ে যায়।
যা হোক, এবার দেখা যাক শ্রীকৃষ্ণের এই বৃক্ষবিলাসের ঘটনার পেছনের ঘটনা কী ছিলো এবং তার উদ্দেশ্যই বা কী ?
প্রাচীন কালে লোকবসতি কম থাকায়, কোনো পুরুষের চোখে পড়ার সম্ভাবনা খুব কম ছিলো ব’লে, মেয়েরা নদী বা পুকুরে নগ্ন হয়ে স্নান করতো। এই সময় তারা তাদের পরিধেয় পোষাক নদী বা পুকুরের পাড়ে রেখে জলে নামতো। স্নান শেষে সেই পোষাক পড়ে আবার বাড়ি ফিরে যেতো। অনেক ক্ষেত্রে দারিদ্রতার কারণে, একাধিক শাড়ি না থাকায় মেয়েরা সব সময় জলে কাপড় না ভিজিয়েও স্নান শেষে সেই একই কাপড় পড়তো, এই কারণেও তারা নদী বা পুকুরের পাড়ে কাপড় খুলে রেখে জলে নামতো। এই রীতি সভ্যতার শুরু থেকে চলে আসছিলো শ্রীকৃষ্ণের সময় পর্যন্ত। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন লীলার মাধ্যমে লোক শিক্ষার জন্য পৃথিবীতে এলেন, তখন জলের দেবতা বরুন দেব মেয়েদের এই আচার পরিবর্তনে উদ্যোগী হলেন এবং একদিন শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, মেয়েরা যখন নগ্ন হয়ে আমাতে, মানে জলে নামে তখন আমার খুব অস্বস্তি হয়, আপনি এর একটা বিহিত করুন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, বরুন দেব এর এই আবেদনে সাড়া দিয়ে, তারা অলৌকিক শক্তি ও মায়া বলে সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গার একটি গাছের ডালে উপস্থিত হলেন যেখানে মেয়েরা ইতোমধ্যে কাপড় চোপড় খুলে নদীতে স্নান করতে নেমেছে এবং তার অলৌকিক শক্তির বলেই শাড়ি-কাপড়গুলো তুলে নিয়ে গাছের ডালে রেখে দিলেন। স্নান শেষে মেয়েরা যখন উঠতে যাবে তখন দেখে তাদের কোনো কাপড় চোপড় নেই। এরপর তারা এদিক ওদিক তাকিয়ে উপরে দেখে, কৃষ্ণ গাছের ডালে বসে বাঁশি বাজাচ্ছে আর কাপড়-চোপড়গুলো তার আশে পাশের ডালে ঝুলানো। মেয়েরা, কৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কেনো এটা করেছো ? আমরা এখন বাড়ি যাবো কিভাবে ? আমাদের পোষাকগুলো দাও। স্বাভাবিকভাবেই মেয়েরা হঠাত কোনো কারণে নগ্ন বা উলঙ্গ হয়ে পড়লে তাদের হাত দ্বারা তাদের স্তন ঢাকার চেষ্টা করে, এই ছবিটিতে সেরকমই দেখা যাচ্ছে।
যা হোক, মেয়েদের প্রশ্নের জবাবে শ্রীকৃষ্ণ বলে, তোমরা নগ্ন হয়ে জলে নেমেছো কেনো? জানো না, জলে বরুন দেব বাস করে ? তোমরা যখন নগ্ন হয়ে জলে নামো তখন তার অস্বস্তি হয়। এরপর আর কখনো নগ্ন হয়ে জলে নামবে না।
মেয়েরা সেটা স্বীকার করে নেয় এবং কাপড় চোপড় পড়ে যে যার বাড়ি ফিরে যায়। এর পর থেকেই শুধু মেয়েরা নয়, পুরুষেরাও কেউ কখনো নগ্ন হয়ে জলে নামে না।
এমনকি এই আধুনিক যুগে, টিউবওয়েল এবং ডিপ টিউবওয়েল কল্যানে যেখানে পুকুর-নদীর মতো খোলা জলে স্নান করার রীতি প্রায় উঠেই গেছে, স্নান করার জন্য যেখানে বাথরুম রীতির কালচার গড়ে উঠেছে, যে বাথরুমের ভেতর নগ্ন হলেও দেখার কেউ নেই, সেই বাথরুমের ভেতরও, এখনও অনেক মানুষ সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে স্নান করতে ইতস্তত বোধ করে, কারণটা আর কিছুই নয়; কারণটা, ঐ, শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা।
এখন ছবির প্রেক্ষাপট এবং মুসলিম মানসিকতার বিচার বিশ্লেষণ করা যাক। ছবি দেখেই, আগে পিছে কোনো কিছু চিন্তা না করে মুসলমানরা সরাসরি বলে দেয়, কৃষ্ণ একটা লম্পট, সে মেয়েদের নগ্ন শরীর দেখার জন্যই এটা করেছে। মুসলিমার তো হিন্দুদের চিরশত্রু, তাই তারা এমনটা বলবে, এটাই অস্বাভাবিক । কারণ, এভাবে তারা হিন্দু ধর্মকে যত ছোট করতে পারবে তত ইসলামের লাভ। কিন্তু এর যথোপযুক্ত জবাব, আমাদের মুখে যাদের তুলে দেওয়ার কথা ছিলো, সেই হিন্দু ধর্মীয় আশ্রম এবং আমাদের সাধু-সন্ন্যাসী-মহারাজরা তা করে নি বলেই আমাদের হিন্দুসমাজের আজ এই দুর্দশা।
এখন প্রাকটিক্যাল ভিউতে ঘটনাটি বিশ্লেষণ করুন। ধরুন, কিছু মেয়ে তাদের যাবতীয় পোষাক, নদী বা পুকুরের পাড়ে খুলে রেখে জলে স্নান করতে নেমেছে। এর পর সেখানে কোনো দুষ্টু ছেলে এসে তাদের সব পোষাক নিয়ে- সেখানেরই, যেখান থেকে মেয়েদের স্নান দেখা যায় এবং এমন দূরত্বে যে স্বাভাবিকভাবে কথা বার্তা বললে শোনা যায়, সেই দূরত্বের একটা গাছের ডালে উঠে বসেছে; সেখানে কিন্তু একটা মেয়ে ছিলো না, ছিলো কমপক্ষে ৭/৮ জন, তাহলে এই ঘটনা কি কারোরই চোখে পড়বে না ? যদি কোনো মেয়ের চোখে এই ঘটনাটা ধরা পড়তো তাহলে কিন্তু পরের ঘটনা- গাছের ডালে পোষাগুলো সুন্দর করে এক একটা করে রেখে মনের সুখে বাঁশি বাজানো সম্ভব হতো না। কোনো মেয়ের চোখে সেখানে কারো আগমন যেমন চোখে পড়ে নি, তেমনি কেউ পোষাকগুলো চুরি করতেও দেখে নি, এই তথ্য কিন্তু এটা প্রমান করে যে, কৃষ্ণ সাধারণ মানুষের মতো সেখানে উপস্থিত হয়ে কাপড়গুলো চুরি করে গাছের ডালে উঠে বসে নি, সে অলৌকিক শক্তির বলেই ঐ গাছের ডালে উপস্থিত হয়েছে এবং কাপড়গুলোকে তুলে গাছের ডালে রেখে দিয়েছে, যেটা একজন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের পক্ষে সম্ভব, যদিও শ্রীকৃষ্ণের অনেক অলৌকিক ক্ষমতা এবং ঘটনার কাহিনী আছে, সেগুলো ছাড়া এই ঘটনাও কিন্তু এটা প্রমান করে যে, শ্রীকৃষ্ণই সর্বশক্তিমান এবং তিনি ই পৃথিবীর সকল প্রাণীর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।
অনেকে মনে করে, শ্রীকৃষ্ণের এই বৃক্ষ বিলাসের ঘটনা রাধা এবং তার সখীদের নিয়ে। এখন এই প্রেক্ষাপটে ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাক, এটা কতদূর সত্য হতে পারে ।
চার বেদ, ১০৮টি উপনিষদ, গীতার ১৮টি অধ্যায়ের ৭০০ শ্লোক বিষ্ণু পুরাণ এবং বেদব্যাসের মহাভারত - যেটা শ্রীকৃষ্ণের প্রামান্য জীবনী- কোথাও রাধার কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু যেহেতু কৃষ্ণ প্রায় ১০ বছর গোকুলে ছিলো এবং গোকূল বৃন্দাবনের পাশে অবস্থিত এবং যেহতেু বলা হয় রাধার জন্ম বৃন্দাবনে, সেহেতু কৃষ্ণের বাল্যকালের খেলার সাথীদের মধ্যে রাধা বলে কেউ থাকলেও থাকতে পারে এবং কৃষ্ণের জীবনে এই রাধা উল্লেখযেোগ্য ছিলো না বলেই হয়তো মহাভারতে রাধার কোনো উল্লেখ নেই; কেননা, বৃন্দাবন ছেড়ে আসার পর কৃষ্ণ তার ১২৫ বছরের জীবনে আর কখনো বৃন্দাবন ফিরে যান নি। ধারণা করা হয় কৃষ্ণের ৭ বছর বয়সে রাধার সাথে তার দেখা বা চেনা জানা হয় এবং কৃষ্ণের বৃন্দাবন ছাড়ার সময় অর্থাৎ ১০ বছর ২ মাস বয়স পর্যন্ত রাধা, কৃষ্ণের দেখা পায়। এখন এই ১০ বছর বয়সের মধ্যে যদি কৃষ্ণের এই বৃক্ষবিলাসের ঘটনা ঘটে তাহলে সাধারণত ছবিতে যে সব উন্নতবক্ষা মেয়েদেরকে দেখানো হয়েছে, যারা হাত দিয়ে তাদের বিশাল বড় বড় স্তন ঢেকে কৃষ্ণের সাথে কথা বলছে, সেটা কি সম্ভব ? ৮/৯ বা ১০ বছরের মেয়েদের কি এত বড় স্তন থাকে ? আর জলে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রেখেই যখন নিজেদের বুক আড়াল করা সম্ভব তখন মেয়েরা হাত দিয়ে বুক আড়াল করে কৃষ্ণের সাথে কথা বলতে যাবে কেনো ?
এই বৃক্ষবিলাসের আরও কিছু ছবি আপনারা দেখে থাকতে পারেন, যাতে দেখানো হয়েছে কিছু মেয়ে জলে গলা বা বুক পর্যন্ত ডুবে আছে এবং কিছু মেয়ে জল থেকে ডাঙ্গায় উঠে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বা কৃষ্ণের সাথে কথা বলছে। ভারতীয় সংস্কৃতির একটা মেয়ের পক্ষে, এইভাবে খোলা জায়গায় একটা পুরুষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কি সম্ভব, যেখানে জলে নামলেই নিজেকে লজ্জাস্থানগুলোক আড়াল করা যায় ?
মধ্যযুগে মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়, মুসলিম শাসকদেরকে খুশি করার অংশ হিসেবে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে কৃষ্ণ চরিত্রকে কলুষিত করার জন্য এসব ছবি তৈরি করা হয়েছে এবং প্রচার করা হয়েছে, আর আমরা হিন্দুরা মুসলমানদের এসব ষড়যন্ত্র না বুঝে, প্রকৃত ঘটনা না জেনে বা জেনেও প্রচার না করে মুসলমানদের সেই উদ্দেশ্যকেই সাধন করে চলেছি। এখন সময় এসেছে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরার, যেটা হিন্দুধর্ম ও সমাজ রক্ষার একমাত্র পথ।
শ্রীকৃষ্ণের এই ছবি নিয়ে মুসলমানরা যতই লম্ফ ঝম্প করুক, আসল ঘটনা না জেনে, না বুঝে বা জেনে-বুঝেই যতই তারা শুধু মাত্র বলার জন্য কৃষ্ণকে লম্পট বলুক, তা থেকে কিন্তু এটা প্রমানিত হয় না যে কৃষ্ণ ধর্ষক। কিন্তু ইসলামের নবী মুহম্মদ কিন্তু একজন সাক্ষাত ধর্ষক; সে ঋতুচক্র বিহীন আয়েশাকে, আয়েশার নয় বছর বয়সে ধর্ষণ করেছে, যেদিন রিহানা ও সাফিয়ার গোত্র-পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়, সেদিনই মুহম্মদ ধর্ষণ করেছে রিহানা ও সাফিয়াকে। বিশ্বাস না হলে ৮০০ কুরাইজার গণহত্যা এবং খয়বরের যুদ্ধের ইতিহাস পড়ে দেখুন।
জয় শ্রীকৃষ্ণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন