

যার কমেন্টের সূত্র ধরে এই প্রবন্ধটি লিখেছি, নিচে শুরুতেই দেখে নিন তার কমেন্টটি-
"যদি ভারতীয় ভগমান ব্রহ্মাকে একবার পাইতাম তাহলে আদবের সাথে জিজ্ঞাসা করিতাম মানব জাতিকে এ কেমন শিক্ষা দিয়ে গেলেন , আমার মনে হয় পৃথিবীতে এমন নিকৃষ্ঠ গ্রন্থ আর কেউ রচনা করে নাই যা ব্রহ্মা উপহার হিসাবে দিয়ে গেছেন ৷ নমুনা হিসাবে ব্রহ্মা রচিত মনুসংহিতা যেমন -
.যেন কেনচিদঙ্গেন হিংস্যাচ্চেৎ শ্রেষ্ঠমন্ত্যজঃ।
ছেত্তব্যং তত্তদেবাস্য তন্মনোরনুশাসনম্।। (মনুসংহিতা-৮/২৭৯
.অর্থাৎ : শূদ্র কিংবা অন্ত্যজ ব্যক্তি (শূদ্র থেকে চণ্ডাল পর্যন্ত নিকৃষ্ট জাতি) দ্বিজাতিগণকে (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য) যে অঙ্গের দ্বারা পীড়ন করবে তার সেই অঙ্গ ছেদন করে দেবে, এটি মনুর নির্দেশ।
.মানব সভ্যতা ধংশ করতে, আর কিছুর প্রয়োজন আছে কি ?"
এই কমেন্টটি কোন মুসলামান করেছে, আরবিতে লিখা বলে তার নামটি বুঝতে পারি নি । যা হোক, ফেসবুকে নাম গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু; এই কমেন্টের আরো কিছু বক্তব্য ছিলো, যেগুলো অপ্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করি নি; কারণ, সেগুলো ছিলো এই শ্লোকেরই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।
শুরুতেই সে উল্লেখ করেছে-
“যদি ভারতীয় ভগমান ব্রহ্মাকে একবার পাইতাম তাহলে আদবের সাথে জিজ্ঞাসা করিতাম মানব জাতিকে এ কেমন শিক্ষা দিয়ে গেলেন , আমার মনে হয় পৃথিবীতে এমন নিকৃষ্ঠ গ্রন্থ আর কেউ রচনা করে নাই যা ব্রহ্মা উপহার হিসাবে দিয়ে গেছেন ৷ নমুনা হিসাবে ব্রহ্মা রচিত মনুসংহিতা যেমন-”
এ্ই মুমিন জানেই না যে মনুসংহিততা ব্রহ্মা কর্তৃক রচিত নয়, অথচ মনুসংহিতার জন্য সে সব রাগ ঝাড়ছে ব্রহ্মার উপর। ব্যাপারটা এমন যে, এ জানেই না- যাকে সে বাপ বলে মনে করছে, সে আসলে তার বাপ ই নয়, কী বলবেন একে ?
আমার অবশ্য এই পোস্ট লিখার মূল উদ্দেশ্য এই নাম না জানা মুমিনকে জবাব দেওয়া নয়, মূল উদ্দেশ্য মনুসংহতিা রচনার আজানা ইতিহাস তুলে ধরা, কিন্তু এর সাথে, এই মুমিন বাঁশ তো কিছু খাবেই; কারণ, মনুসংহিতা প্রসঙ্গে তার কমেন্টের শেষে সে প্রশ্ন তুলেছে-
“মানব সভ্যতা ধংশ করতে, আর কিছুর প্রয়োজন আছে কি ?”
মানব সভ্যতা কোন গ্রন্থ ধ্বংস করেছে এবং করছে, এটা এই পোস্টে তাকে হাড়ে হাড়ে বোঝাবো।
শুরুতেই নজর দিই মনুসংহিতার দিকে-
শাস্ত্রমতে পরমেশ্বর ‘পরমব্রহ্ম’ এর তিনটি রূপের একটি হলো ব্রহ্মা, যে রূপের মাধ্যমে ব্রহ্ম সৃষ্টিকার্য সমাধা করে থাকে। খেয়াল করবেন, ব্রহ্মা কিন্তু কোনো আলাদা সত্ত্বা নয়, পরমব্রহ্ম এর ই আলাদা একটি রূপ, যেমন ব্রহ্মের অপর রূপ বিষ্ণু ও শিব। ব্রহ্ম যখন যেরূপে তার কাজ করেন, তাকে তখন সেই রূপের নামে আমরা ডাকি; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব আলাদা কেউ নন, তারা একই ব্রহ্মের আলাদা আলাদা তিনটি রূপ। যেমন প্রধানমন্ত্রীর হাতে যদি তিনটি মন্ত্রণালয় থাকে, তখন তিনি যে মন্ত্রণালয়ের হয়ে ফাইলে সই করেন, তখন তিনি সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, কিন্তু বাস্তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী। ব্রহ্ম এবং ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের ব্যাপারটা ঠিক এরকম।
পরমব্রহ্মের এই ব্রহ্মা রূপের নারী শক্তি হলো সরস্বতী, যাকে আমরা স্থূল বিবেচনায় বলে থাকি ব্রহ্মার স্ত্রী। আসলে ব্রহ্মার স্ত্রী বলে কিছু নেই। প্রকৃতির নিয়মে যেমন পুরুষ ও নারীর মিলন ছাড়া কিছু সৃষ্টি হয় না, তাই সেই নিয়মকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই ব্রহ্মার নারী শক্তি হিসেবে সরস্বতীকে কল্পনা করা হয়েছে, আর যেহেতু সৃষ্টি করতে লাগে জ্ঞান, তাই সরস্বতীকে কল্পনা করা হয়েছে জ্ঞানের দেবী হিসেবে। অর্থাৎ ব্রহ্মা তার নারীশক্তি- জ্ঞানরূপ সরস্বতীর মাধ্যমে তার সকল সৃষ্টি কার্য সমাধা করে থাকে।
শাস্ত্রমতে, সৃষ্টির জন্য পরমব্রহ্মের এই রূপ, ব্রহ্মা- প্রথমে তার চিন্তাশক্তি দ্বারা সাতজন পুরুষের সৃষ্টি করে, এরা হলো - মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু ও বশিষ্ঠ - ব্রহ্মার মন থেকে এদের উৎপত্তি, তাই এদেরকে বলা হয় ব্রহ্মার মানসপুত্র। এই সাত জনের নামে বেদ এর মুনি ঋষিরা সাতটি নক্ষত্রের নামকরণ করে, যা একত্রে মহাকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডল নামে পরিচিত। এরপর ব্রহ্মা- দক্ষ, নারদ ও মরীচি নামে আরও তিনজন মানস পুত্রের সৃষ্টি করে, এই তিনজন এবং আগের ৭জন, মোট এই ১০জনকে আবার বলা হয় প্রজাপতি এবং প্রজাপতিদের থেকেই শাস্ত্রমতে পৃথিবীতে সকল প্রাণীর উদ্ভব। মন থেকে উৎপত্তি বলে এদের শ্রেণীগত বা সমষ্টিগত নাম হচ্ছে মনু। এই হিসেবে এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম হচ্ছে মরীচি মনু, অত্রি মনু, অঙ্গিরা মনু ইত্যাদি ইত্যাদি। যেমন- দেশের মন্ত্রীসভায় যারা ঠাঁই পায়, তাদের নামের শুরুতে বা শেষে উল্লেখ করতে হয় মন্ত্রী, তেমনি মন থেকে উৎপত্তি বলেই ব্রহ্মার মানসপুত্রদের সকলের নামের শেষে যুক্ত হয় মনু। কিন্তু লক্ষ্য করার ব্যাপার হচ্ছে, এই ১০ জনের মধ্যে ‘স্বায়ম্ভুব’ বলে কেউ নেই, ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে যার পুরো নাম আমরা মনে করে থাকি ‘স্বায়ম্ভুব মনু’, যাকে মনুসংহিতার রচয়িতা বলা হয়ে থাকে। তাহলে এই স্বায়ম্ভুবটা আসলে কে যে নিজেকে ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে দাবী করে মনুসংহিতা লিখে সমাজের উপর চাপিয়ে দিয়েছে ?
স্বায়ম্ভুব ছাড়া উপরে যাদের নাম উল্লেখ করেছি- সেই ব্রহ্ম, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব থেকে শুরু করে ব্রহ্মার ১০ মানসপুত্র আসলে এরা সবাই ছিলো আমাদের বেদদ্রষ্টা ঋষিদের কল্পনা বা উপলব্ধি, বিশ্বসৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করার জন্য আমাদের মুনি ঋষিরা এই নামগুলোকে কল্পনা করে নিয়েছিলেন, তাই উনারা কেউ এই বাস্তব পৃথিবীর মানুষ ছিলেন না, কিন্তু এই স্বায়ম্ভুব ছিলো বাস্তব পৃথিবীর বাস্তব মানুষ, যে নিজেকে ব্রহ্মার মানস পুত্র হিসেবে দাবী করে নিজের নামের সাথে লাগিয়েছে মনু এবং রচনা করেছে মনুসংহিতা।
কিন্তু স্বায়ম্ভুবকে, নিজেকে ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে দাবী করার এই চালাকিটা কেনো করতে হয়েছিলো ?
যে কারণে মুহম্মদ তার আল্লাহকে বানিয়ে নিয়েছিলো, যে কারণে যীশু নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে দাবী করেছিলো, ঠিক সেই একই কারণে স্বায়ম্ভূবও নিজেকে দাবী করেছিলো ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে। কিন্তু এর পেছনের ঘটনাটা আসলে কী ?
ভারতবর্ষে আর্য সম্পর্কে আমরা যা ই ভাবি না কেনো, প্রকৃত সত্য হচ্ছে- সাঁওতাল, কোল, মুণ্ডা, দ্রাবিড়ের মতো কালো লোকগুলোই ছিলো এই ভারতভূমির আদি বাসিন্দা, আর এরা ছিলো আফ্রিকান নিগ্রো জনগোষ্ঠীর অংশ বা বংশধর এবং এদের গায়ের রং ছিলো কালো। আধুনিক মানুষ হিসেবে দৈহিক গঠন লাভের পর এরা আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে প’ড়ে, কোনো কোনো দল যেকোনোভাবেই হোক ভারতে পৌঁছে যায় এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকে। হোমো স্যাপিয়েন্স নামের যে আধুনিক মানুষ, এদের সবারই উৎপত্তি আফ্রিকার কালো মানুষ হিসেবে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই কালো মানুষগুলোর কিছু কিছু ফর্সা হয়ে শ্বেতাঙ্গ বা মঙ্গোলিয়ান হয়ে গেলো কিভাবে ?
আসলে এরা আফ্রিকা থেকে বের হওয়ার কিছু পরেই পতিত হয় বরফ যুগের কবলে, যে বরফযুগ, মূলত প্রভাব ফেলেছিলো বর্তমানের- ইউরোপ, রাশিয়া এবং চীন এলাকায়।
এই বরফযুগের কবলে পড়ে কালো মানুষ গুলো মরতে মরতে যে কয় জন বেঁচে থাকে তারা ফর্সা হয়ে যায়; কারণ, গায়ের কালো রং এর পেছনে মূল কাজ করে মেলানিন নামের একটি উপাদান, যার শরীরে যত মেলানিন, সে তত বেশি কালো; এই মেলানিন আবার সূর্যের রোদের তাপের সাথে সাথে দেহে বৃদ্ধি পায়; আর যেহেতু বরফ যুগ মানেই সূর্যের রোদের অনুপস্থিতি, সেহেতু সেই কালো মানুষগুলোর শরীরে মেলানিন কমে গিয়ে কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই তারা অনায়াসেই ফর্সা তথা শ্বেতাঙ্গ হয়ে উঠে।
বর্তমানে, অস্ট্রেলিয়া এবং তার আশেপাশে এবং আমেরিকায় যেসব শ্বেতাঙ্গ বাস করে- তাদের আদিভূমি ইউরোপ; কিন্তু রাশিয়া এবং চীনে উদ্ভূত শ্বেতাঙ্গরা রাশিয়া এবং চীনের আশে পাশেই আছে। কলম্বাস ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কার করার পর সেখানে কিছু লোকজনের দেখা পায়, এরা আসলে রাশিয়ার শ্বেতাঙ্গদের অংশ বা বংশধর; কারণ, রাশিয়ার সাথে উত্তর আমেরিকার ভূখণ্ড একসময় যুক্ত ছিলো, যেমন যুক্ত ছিলো অস্ট্রেলিয়ার সাথে বর্তমান ভারতের ভূখণ্ড; কোনো এক ভূ প্রাকৃতিক কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতের অংশটি ঠেলে চলে এসে মূল ভূখণ্ডের সাথে ধাক্কা লাগাতেই গড়ে উঠে হিমালয় পর্বত মালা এবং সেই একই সময় আলাদা হয়ে যায় উত্তর আমেরিকা ও রাশিয়া।
যা হোক, রাশিয়ার যে শ্বেতাঙ্গদের উদ্ভব হলো, এরা ছিলো সাইবেরিয়ার দিকে এবং প্রায় ১০ হাজার বছর আগে সেখানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ায়, এই লোকগুলো সেখানে আর টিকতে না পেরে গরম এলাকার খোঁজে চলে আসে ভারতের দিকে এবং সিন্ধু নদের তীরে গড়ে তুলে সিন্ধু সভ্যতা, যার আরেক নাম মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা সভ্যতা; যে সভ্যতায় উচ্চারিত হয় প্রথম বেদ মন্ত্র এবং এরাই আর্য নামে পরিচিত। এই ভাবে আর্যরা ভারতে আসে। এই তথ্যের ভিত্তিতে- ‘মুসলমানরা ভারতে বহিরাগত’, এই কথার কাউন্টার হিসেবে কোনো কোনো সেকুলার বলে তাহলে আর্যরাও ভারতে বহিরাগত। কিন্তু আর্যরা ভারতে আছে প্রায় ৮/১০ হাজার বছর ধরে, আর মুসলিমরা আছে মাত্র ১ হাজার বছর। তাহলে ভারতের উপর কাদের দাবী বেশি ? তাছাড়া আর্যরা ভারত থেকে কখনো বাইরে কোনো সম্পদ পাচার করে নি, বরং নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নির্মান করেছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ এক সভ্যতা; এর বিপরীতে মুসলমানরা ভারত থেকে শুধু লুঠপাট করেই নিয়ে যায় নি, মুসলিম শাসকদের খিলাফতের নিয়মানুযায়ী ভারতের মুসলিম শাসকরা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ পাঠিয়েছে- মক্কা, সিরিয়া, ইরাকের খলিফার দরবারে, নাজরানা হিসেবে- যা ইংরেজদের ভারত থেকে ব্রিটেনে সম্পদ পাচারের কয়েক শত গুন বেশি।
যা হোক, সিন্ধু সভ্যতার মুনি-ঋষিরা যখন বিশ্বসৃষ্টি ব্যাখ্যা করার জন্য এবং দেবতাদের সাহায্য কামনায় তাদের উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রার্থনাসূচক এবং মানুষের উপকারার্থে নানা তন্ত্র মন্ত্র ও যজ্ঞের জন্য বেদমন্ত্রগুলো উপলব্ধি করলো, তারপর কোনো এক পর্যায়ে সেই সভ্যতায় আবির্ভাব ঘটে স্বায়ম্ভূব নামের কোনো এক চালাক ব্যক্তির, যে ছিলো ঐ সভ্যতার রাজা।
পৃথিবীর সব প্রাচীন রাজা ই প্রজাদের বশে রেখে শাসন কার্য পরিচালনার জন্য নিজেদেরকে তাদের কল্পিত ঈশ্বর বা দেবতার অংশ বা প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করতো, এতে প্রজারা কখনো পরকালের শাস্তির ভয়ে রাজাদের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতো না এবং এই প্রসেসে তারা বংশ পরম্পরায় রাজ্য শাসন করে যেতো। মিশরের এক রাজা, যার শ্রেণীগত নাম ফারাও বা ফেরাউন, সে বংশ পরম্পরায় নিজেদেরকে দেবতা বা ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে ভাবতে ভাবতে একসময় নিজেকেই ঈশ্বর বলে দাবী করে বসে, যার কাহিনী মুসার প্রসঙ্গে ইসলামের ইতিহাসে কিছু পাওয়া যায়। মূলত সাধারণ লোকজনের মাঝে নিজের অলৌকিকত্ব তুলে ধরার জন্য এটা ছিলো প্রাচীন কিছু চালাক মানুষের কৌশল, যে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে মুহম্মদ বলেছে, আমার কাছে বাণী আসে আল্লার তরফ থেকে, আল্লা আমার দোস্ত; যীশু বলেছে আমি ঈশ্বরের পু্ত্র। সেই একই কৌশলে আর্যদের রাজা স্বায়ম্ভূব, হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব মতে, নিজেকে ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে দাবী করে নিজের নামের সাথে লাগায় মনু এবং সুশৃঙ্খল ভাবে রাজ্য পরিচালনার জন্য ঈশ্বরের নাম দিয়ে রচনা করে রাজ্য পরিচালনার কিছু বিধিবিধান যা মনু সংহিতা নামে পরিচিত। ব্রহ্মার মানস পুত্র হিসেবে নিজেকে প্রজাদের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে তার স্বায়ম্ভূব নামটিও সম্ভবত তাকে বেশ সাহায্য করেছে অথবা তখন তাকে সাহা্য্য না করলেও পরবর্তীকালে হিন্দুদের মনে তাকে ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে; কারণ, যা স্বয়ং উদ্ভব হয়েছে, স্বায়ম্ভূব শব্দটি দ্বারা এরকমও কিছু বোঝায়, যা ব্রহ্মার মানসপুত্রদের জন্ম কাহিনীর সাথে পুরোপুরি মিলে যায়।
এবার দেখা যাক মনুসংহিতার বিষয়গুলো আসলে কী ?
একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যা যা প্রয়োজন মনুসংহিতায় আসলে তার সবই রয়েছে। শুরুতে নাকি অনেক শ্লোক থাকলেও উইকিপিডিয়ার মতে বর্তমানে মনুসংহিতার প্রাপ্ত শ্লোক সংখ্যা ২৬৮৩। কোনো কোনো সূত্র বলছে মনুসংহিতা বেদ এর পরেই রচিত । এই তথ্যকে স্বীকার করলে এই প্রশ্ন সামনে আসবে যে তাহলে কর্মসূত্রে গীতার বর্ণবিভাজন মনুসংহিতায় এলো কিভাবে ? গীতাব বাণীর সাক্ষ্য মতে, গীতার জ্ঞান বিশ্বসৃষ্টির শুরু থেকেই ছিলো, পরে এই জ্ঞান পরম্পরা রক্ষা করতে পারে নি বলে কিছুটা নষ্ট হলে কুরুক্ষেত্রের যু্দ্ধে এই জ্ঞান- শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে আবার দেন। কিন্তু গীতার জ্ঞান ব্যাসদেব এর মাধ্যমে মহাভারতে যুক্ত হওয়ার আগে থেকেই গীতোপনিষদ নামে পরিচিত ছিলো, যেটাকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- কিছুটা নষ্ট বা বিকৃত; সেখান থেকে স্বায়ম্ভূব মনু বর্ণবিভাজনের থিয়োরিটি পেতে পারেন এবং বলতে গেলে এই বর্ণবিভাজনই ছিলো মনুসংহিতা রচনার মূল ভিত্তি।
যা হোক, মনুসংহিতা হলো রাষ্ট্রপরিচালনার একটি কমপ্লিট সংবিধান। অনেক মুসলমান বেশ গর্বের সাথে বলে থাকে যে, মদীনা সনদই হলো পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান, যদিও সে সংবিধানের একটা কপিও লিখিত আকারে পাওয়া যায় নি, কিন্তু মনুসংহিতা নামের রাষ্ট্রপরিচালনার দলিল, যা কমপক্ষে ৭/৮ হাজার বছরের পুরোনো, যার কপি এখনও পৃথিবীতে টিকে আছে; এখন আপনারাই বিবেচনা করুন, পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান কোনটা ?
ব্রহ্মার পুত্র ব’লে মনু নিজেকে দেবতাদের অংশ হিসেবে দাবী করে এবং নিজের কর্ম ও গুনের বৈশিষ্টের বিচারে চার বর্ণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে। আর এটা তো বাস্তব যে, ক্ষমতা যার সেই শ্রেষ্ঠ; আর আলোচনা চলাকালীন এটা মনে রাখা জরুরী যে, মনু ছিলো একাধারে ব্রাহ্মণ ও রাজা।
প্রত্যেকেই নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে, মনুও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই মনু এবং তার সমগোত্রীয় লোকজনদেরকে সে ব্রাহ্মণ হিসেবে দাবী করেছে এবং মনুসংহিতায় শ্লোকের মাধ্যমে বলেছে, ব্রাহ্মণরা ব্রহ্মার মুখ থেকে উৎপন্ন হয়েছে, তাই তারা অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ । রাজ্যের সুরক্ষা এবং শাসনকার্যের সুবিধার জন্য ব্রাহ্মণের পরে মনুর প্রয়োজন ছিলো ক্ষত্রিয়দের, তাই চার বর্ণের মধ্যে মনু তাদেরকে স্থান দিয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এরপর টাকা পয়সা এবং সম্পদের উৎস হিসেবে মনুর প্রয়োজন ছিলো ব্যবসায়ীদের, মনু তাদেরকে স্থান দিয়েছে বৈশ্য হিসেবে তৃতীয়ে। এরা সবাই ছিলো আর্য সভ্যতার নিজস্ব জনগোষ্ঠীর লোক। বাকি রইলো শুদ্ররা, এরা হলো ভারতভূমির আদি জনগোষ্ঠীর- সাঁওতাল, কোল, মুণ্ডা বা এই শ্রেণীর লোক, যাদের পেশা ছিলো মূলত- কৃষিকাজ, মাছ ধরা, ধোপা, নাপিত বা এই শ্রেণীর সেবামূলক কাজ। কর্মের ভিত্তিতে হিন্দু সমাজের এই বর্ণবিভাজন মূলত মনুরই কাজ।
মনুসংহিতায় সবচেয়ে উপেক্ষিত জনগোষ্ঠী হলো শুদ্র এবং নারীরা। প্রাচীন কালে নারীরা যেহেতু সরাসরি- দেশরক্ষা বা যুদ্ধ ক্ষেত্রে এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে এমনকি জ্ঞান বিজ্ঞানে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতো না, সেহেতু নারীদেরকেও মনুর খুব উল্লেখযোগ্য কিছু মনে হয় নি। সম্ভবত সে কারণেই মনু, নারীদেরকে তেমন সম্মানের আসন দেয় নি; কিন্তু পরিবারের নারীদের প্রতি পুরুষদের কী কর্তব্য, সেটা মনু নির্দেশ করেছে খুব ভালো ভাবে, যে বিধানগুলো এখনও হিন্দু সমাজ বা পরিবারে মানা হয়, যার ফলে হিন্দু সমাজ বা পরিবার এখনও পৃথিবীতে একটি আদর্শ সুশৃঙ্খল সমাজ বা পরিবার।
এই ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মনু নিজের সুবিধা মতো একটি সংবিধান তৈরি করে এবং সেটাকেই ধর্মের মোড়কে সমাজে প্রচার করে। যার ফলে মনুসংহিতাকে হিন্দু সমাজ সেই প্রাচীন কাল থেকেই একটি ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে মর্যাদা দিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো রাজার সব নীতিই যেমন সমাজের সবার চোখে ভালো লাগে না, তেমনি মনুর সব নীতিও সবার কাছে ভালো লাগে নি এবং লাগবে না- এটাই স্বাভাবিক; যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জঙ্গী দমন নীতি বেশির ভাগ লোকের কাছে ভালো লাগলেও যারা মুহম্মদের জিহাদ তত্ত্বে বিশ্বাসী তাদের কাছে যে ভালো লাগবে না, সেটাই স্বাভাবিক; কোনো কাফের মারার আগেই কেনো হাসিনার পুলিশ তাদেরকে মেরে ফেলছে, সেটাও সেটাও ঐ জিহাদীদের কাছে অসহ্যই মনে হচ্ছে এবং হবে।
যা হোক, এই মনুসংহিতা, যেটা কোনোভাবেই হিন্দুদের কোনো ধর্মগ্রন্থ নয়, আর্যদের রাষ্ট্র পরিচালনার একটি সংবিধান মাত্র, তাতে শুদ্র শ্রেণীর কোনো ব্যক্তি যদি অপর তিন শ্রেণী- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য, যারা ছিলো মনুর বেশ পছন্দের লোক, তাদের উপর উপর কোনো অন্যায় বা সন্ত্রাস করে, তাহলে শুদ্রদেরকে শাস্তি দিতে বলেছে; এতে অন্যায়টা কোথায় ? অপরাধ করলেই তো শাস্তি দিতে বলেছে, বিনা অপরাধে তো আর শাস্তি দিতে বলে নি? মনুর উদ্দেশ্য ছিলো এই শাস্তির কথা জেনে যেন তারা তাদের উপর কোনো সন্ত্রাস বা অপরাধ না করে। এতে তো সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকারই কথা। মনু যে শুদ্রদের উপর অপর তিন শ্রেণীর লোকের অবাধ অত্যাচারের পারমিশন দিয়েছে এমন ও তো নয়; বরং মনু ব্রাহ্মণদেরকে এই ভয় দেখিয়েছে যে, তারা যদি কোনো কারণে নিচু জাতের মেয়েদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে তাহলে তারা সেই নিচু জাতের সমতুল্য হয়ে যাবে। এই কারণেই ব্রাহ্মণরা সাধারণত অন্য কোনো কাস্টের সাথে তাদের ছেলে মেয়ের বিয়ে দিতে চায় না।
যা হোক, মনুসংহিতায় যে সন্ত্রাস বা অপরাধ করার শর্তে শুদ্রদের জন্য নানারকম শাস্তির বিধান রয়েছে, এটাকে উদ্দেশ্য করেই এই আরবি নাম ধারী মুসলমান এই প্রশ্ন তুলেছে যে,
“মানব সভ্যতা ধংশ করতে, আর কিছুর প্রয়োজন আছে কি ?”
দেখে নিন মনু সংহিতার সেই শ্লোক এবং তার অর্থ :
“যেন কেনচিদঙ্গেন হিংস্যাচ্চেৎ শ্রেষ্ঠমন্ত্যজঃ।
ছেত্তব্যং তত্তদেবাস্য তন্মনোরনুশাসনম্।। (মনুসংহিতা-৮/২৭৯
.
অর্থাৎ : শূদ্র কিংবা অন্ত্যজ ব্যক্তি (শূদ্র থেকে চণ্ডাল ) দ্বিজাতিগণকে (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য) যে অঙ্গের দ্বারা পীড়ন করবে তার সেই অঙ্গ ছেদন করে দেবে।
এর উপর ভিত্তি করেই জাকিরি মুসলমানদের প্রশ্ন,
মানব সভ্যতা ধংশ করতে, আর কিছুর প্রয়োজন আছে কি ?
এদের কথা বলার ভাব দেখে ও কথা শুনে মনে হচ্ছে, মনু বিনা কারণে শুদ্রদেরকে মেরে বিনাশ করে দিতে বলেছে! আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি, মনু শাস্তিগুলো প্রদানের কথা বলেছে শুধু অপরাধ করার শর্তে, যেটা সব দেশের, সব রাজ্যের মানুষের ন্যায় রক্ষার জন্য রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধানের সাংবিধানিক কাজ।
মনুসংহিতাকে হিন্দুদের একটি ধর্মগ্রন্থ বিবেচনা করেই হিন্দুদেরকে হেয় করার জন্যই মুমিনরা এই ধরণের প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে দেখা যাক মুসলমানদেরে ধর্মগ্রন্থ কোরান এবং হাদিসে এ ব্যাপারে কী বলা আছে, তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবে মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করেছে কোনগ্রন্থ এবং কারা ? এখানে আর একটা প্রশ্ন করছি, হিন্দুরা কিন্তু একটি সভ্যতা গড়ে তুলেছিলো, সিন্ধু সভ্যতা; কিন্তু মুসলমানরা পৃথিবীর কোথায় কোন সভ্যতা গড়ে তুলেছে ?
সভ্যতা একটু পুরোনো ব্যাপার হয়ে গেলো, সভ্যতার যুগে মুসলমানদের তো জন্মই হয় নি, ওরা সভ্যতা গড়ে তুলবে কিভাবে ? বরং এই প্রশ্ন তোলা যায়, মুসলমানরা তাদের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে আধুনিক কোন দেশ গড়ে তুলেছে? অনেকেই বলবেন মালয়েশিয়া এবং দুবাই। তাই প্রথমে মালয়েশিয়া সম্পর্কে বলি, এই দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, সেই তুলনায় জনসংখ্যা খুবই কম, আর এটা মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও এর জনগোষ্ঠীর ৪০% চীনা আর ৪% ভারতীয়, বাকি ৫৬% মুসলমান, যাদের কাজই হলো তিন/চারটি করে বিয়ে করা আর বাচ্চা উৎপাদন করা। মালয়েশিয়া যে টাওয়ার বানিয়ে সারা পৃথিবীতে লাইমলাইটে এসেছে, সেটা ঐ ৪৪% অমুসলিমের পরিশ্রমের ফলে, আর টাওয়ার বানাতে যে জ্ঞান-বুদ্ধির ব্যবহার হয়েছে সেটাও অমুসলিমদের।
এবার আসি দুবাই এর কথায়। মাটির নিচে খনিজ সম্পদ আর উপরে বালি, এটা ছাড়া দুবাই বাসীর আর কিছুই ছিলো না। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না, বর্তমানের যে আধুনিক চকচকে দুবাই, সেটার মূল কারিগর ভারতের হিন্দুরা। দুবাই এর মুসলমানরা এখনও কোরানের নির্দেশ অনুসারে তিন চারটি বউ রাখে আর তাদেরকে পালা করে সময় দিতে গিয়েই তাদের সময় কাটে, কিন্তু তারা বেঁচে আছে -মাটির নিচের সম্পদ আর কারখানার জন্য জমি ভাড়া দেওয়ায় ভারতীয় টাকার উপর। আর দুবাই এর টাওয়ার বানাতে যে ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করেছে, খোঁজ নিয়ে দেখবেন, তাদের মধ্যে একজনও মুসলমান নেই। তাহলে তারা বর্তমানের ই বা কোন দেশ গড়ে তুলেছে ? কোনো দেশ বা সভ্যতা গড়ে তুলতে না পারলেও মুসলমানরা সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে- পারস্য সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা; আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে রোমান ও গ্রীক সভ্যতা, আর্য তথা সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসেরও তারা বহু চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু আপন শক্তি বলেই এই সভ্যতা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে্ । এখন পৃথিবীর চারটি বৃহৎ শক্তির একটি ভারত, কিন্তু কোনো মুসলিম দেশ এই হিসেবের মধ্যেই নেই বরং অনেক মুসলিম দেশ আছে যেগুলো- ধ্বংসপ্রাপ্ত, যেমন– ইরাক সিরিয়া, আফগানিস্তান।
এখন দেখা যাক, উপরে উল্লখে করা ঐ সমৃদ্ধ সভ্যতাগুলো ধ্বংস করতে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরান ও হাদিস কিভাবে ভূমিকা পালন করেছে ? নিচে দেখে নিন কয়েকটি আয়াত এবং তার কার্যকারিতা :
“ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম চাইলে কখনো তা গ্রহণ করা হবে না”- (কোরান,৩/৮৫)
“তিনি সেই আল্লাহ যিনি তার রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ পাঠিয়েছেন, যেন তাকে সমগ্র দ্বীনের উপর জয়ী করতে পারেন।”– (কোরান, ৪৮/২৮)
“তোমরা তাদের সাথে লড়াই করতে থাকো যতক্ষণ না ফেতনা চুড়ান্তভাবে শেষ হয়ে যায় এবং দ্বীন কেবলমাত্র আল্লার জন্য নির্দিষ্ট না হয়।”- (কোরান, ২/১৯৩)
এই তিনটি আয়াতে বলা হচ্ছে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম মুসলমানদের কাছে এ্যাকসেপ্টেবল নয়, আ্ল্লা মুহম্মদকে ইসলাম সহ পাঠিয়েছে অন্য সকল ধর্মের উপর তাকে জয়ী করার জন্য এবং এজন্য মুসলমানদের প্রতি আল্লার নির্দেশ হচ্ছে লড়াই করতে থাকো ততক্ষণ, যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে সকল ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে একমাত্র ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না হয়। কারণ, ইসলামের চোখে অন্য সকল ধর্ম পালনই হলো ফেতনা বা বিশৃঙ্খলা, একারণেই হিন্দুদের দেব-দেবীর মূর্তিগুলো, কোনো মুসলমানের পাছা কখনো না মারলেও প্রতি বছর বাংলাদেশে কিছু মূর্তি মুসলানরা ভাঙবেই ভাঙবে।
পৃথিবীর সব প্রাচীন সভ্যতা ই ছিলো দেব-দেবীতে বিশ্বাস ও তাদের পূজা ভিত্তিক, কিন্তু মূর্তি হলো মুসলমানদের প্রধান শত্রু; একারণে ঐসব সভ্যতাগুলোকে ধ্বংস করে তার উপর ইসলাম চাপাতে চেষ্টা করেছে মুসলমানরা, পূর্ণভাবে সফল হয়েছে মিশর ও পারস্যে, কয়েক শতক সফলতা ধরে রাখতে পেরেছিলো রোমান, গ্রীক ও সিন্ধু সভ্যতায়।
মুসলমানরা যে সভ্যতা ধ্বংস করেছে, তারও প্রমান আছে কোরানে, দেখুন নিচে-
“কতসব জনপদ আমি ধ্বংস করেছি, সেখানকার লোকেদের উপর আমার আযাব সহসা রাতের বেলা এসে পড়েছে, কিংবা দিনের বেলা যখন তারা বিশ্রামরত অবস্থায় ছিলো।” - (কোরান, ৭/৪)
এই সব সভ্যতাকে ধ্বংস করে ইসলামকে তাদের উপর চাপাতে গিয়ে মুসলমানরা ভারতের ৪০ কোটি হিন্দুসহ সারাবিশ্বে খুন করেছে প্রায় ৬০ কোটি মানুষকে। অবিশ্বাস্য মনে হলে এই তথ্যটি যাচাই করার জন্য ক্লিক করতে পারেন নিচের এই লিঙ্কে-
http://www.danielpipes.org/comments/172982
এই ভাবে সারা বিশ্বে ইসলামকে কায়েম করতে গিয়ে মুসলমানরা পুড়িয়ে দিয়েছে একের পর এক লাইব্রেরী, ধ্বংস করেছে সভ্যতা; এখনও পৃথিবীর যেখানে সেখানে- কাফের মারলেই ডাইরেক্ট বেহেশত- কোরানের এই সূত্রানুসারে, ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ‘চাপাতি-গুলি-বোমা-বন্দুক’ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অমুসলিমদের উপর এবং হত্যা করছে শত শত বা হাজার হাজার মানুষকে; অথচ সেই মুসলমানরা, মনুসংহিতাকে হিন্দু ধর্মের গ্রন্থ বিবেচনা ক’রে তার একটি শ্লোকে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার বিধানকে সামনে এনে প্রশ্ন তুলেছে যে, মানব সভ্যতা ধ্বংস করতে আর কী লাগে ? যেন মনুসংহিতার কারণেই পৃথিবীর সব সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে! কুরবাণীর নামে একদিনে কয়েক কোটি প্রাণীকে নৃশংসভাবে জবাই করে অন্যের পশুপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না রে মুমিন! যারা কুরবানীর নামে পশুহত্যা করে না, তারা এমনিতেই পশুপ্রেমিক।
যা হোক, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মনুসংহিতায় এ ধরণের শাস্তি বিধানের শ্লোক থাকলেও, ব্রাহ্মণরা এধরণের শাস্তি কখনো কোনো শুদ্রকে দেওয়ার যে সুযোগ পেয়েছিলো, তার কিন্তু কোনো প্রমান নেই। এর অর্থ হচ্ছে, মনু শুদ্র শ্রেণীর লোকদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এই আইন করেছিলো এবং তার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। শুদ্রসহ সকল হিন্দুরাই শুরু থেকেই ব্রাহ্মণদের মনে করতো দেবতার অংশ হিসেবে এবং এই বিশ্বাসের সুযোগ ব্রাহ্মণরাই শুদ্র বা অন্যদের উপর নিয়েছে, কিন্তু তার কোনো প্রতিশোধ কোনো হিন্দু কোনোদিন কোনো ব্রাহ্মণের উপর নেয় নি। সুতরাং এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মনুর এই শাস্তি প্রদানের আইন কোনোদিনই কার্যকর হয় নি।
মনুসংহিতা নিয়ে এত কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মনু এমন কিছু বিধি বিধান রচনা করেছিলো, যাতে সমাজের নীচু শ্রেণীর মানুষ এবং নারীদেরকে খুব বেশি সম্মান দেওয়া হয় নি; এসব নিয়ে মুসলমানরা হিন্দু ধর্মকে হেয় করতে চায়। কিন্তু মনুসংহিতা যে হিন্দুধর্মের কোনো প্রামা্ন্য গ্রন্থ নয়, এটা যেমন মুসলমানরা জানে না, গবেষণার অভাবে তেমনি জানে না হিন্দুরাও । আমার এই বহুল পরিশ্রম লব্ধ পোস্ট পড়ে যারা মনুসংহিতা সম্পর্কে প্রকৃত সত্য জানলেন, তারা এখন থেকে মনুসংহিতা সম্পর্কে যেকোনো কটূক্তির জবাব বুক উঁচিয়ে দেবেন আর বলবেন, মনুসংহিতা আর্য সভ্যতার একটি সংবিধান, যে সংবিধান তৈরি হয়েছিলো সেই সময়ের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য, যার সকল বিধি-বিধান মানা হিন্দু সমাজের জন্য বাধ্যতামূলক নয়; কারণ, যেহেতু এটা হিন্দুদের কোনো প্রামান্য ধর্মগ্রন্থ নয়, তথাপিও এই সংহিতার যে বিধানগুলো বর্তমান যুগের সাথে মানানসই সেগুলো আমরা মানতেই পারি, যেমন গণতন্ত্র আমাদের এই দেশের বা এই এলাকার কোনো ধারণা নয়, এটা পশ্চিমা বা ইউরোপীয় ধারণা, কিন্তু সেই ধারণা কি আমরা মানছি না ? ভালো এবং গ্রহণযোগ্য বলেই তো সেটা আমরা মানছি, সেরকম মনুসংহিতার যা কিছু ভালো সেগুলো আমরা মানবো, আর যেগুলো ভালো নয়, সেগুলো আমরা পরিত্যাগ করবো, এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই; কারণ, মনুসংহিতা- কোরান, বাইবেল, ত্রিপিটক বা গীতার মতো কোনো প্রামা্ন্য ধর্মগ্রন্থ নয়।
জয় হিন্দ।
জয়শ্রীরাম। জয় শ্রীকৃষ্ণ।
উওম কুমার দাসের পোস্ট নাম উল্লেখ করা উচিত ছিল
উত্তরমুছুন