প্রশ্নঃ--মহালয়া মানে কি এবং কেনই বাএই মহালয়া আপনারা কি জানেন ?????.উত্তরঃ-সবাই নিশ্চই জানেন মহালয়া মানে দূর্গাপূজার দিন গোনা , মহালয়ার ৬দিন পর মহাসপ্তমী,তাই দেবিকে আমন্ত্রন জানানো ইত্যাদি।মহালয়ার তার চেয়েবড় গুরুত্ব আছে, সেটা কি আপনারা কেউ জানেন???.মহালয়া মানে পিতৃপক্ষের শেষ আরদেবীপক্ষের শুরু । হিন্দুধর্ম মতে, পিতৃপক্ষ (সংস্কৃত: पितृ पक्ष) পূর্বপূরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত।পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনিই সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকেপিতৃলোকে নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মেরএকজনেরমৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মেরএকজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় (ঈশ্বর) লীন হন এবং এইপ্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের উর্ধ্বে উঠে যান। এই কারণে, কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানহয়ে থাকে এবং এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যম একটিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।.ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। আসল দূর্গা পূজা হলো বসন্তে , সেটাকে বাসন্তী পূজা বলা হয় । শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবীর অকাল-বোধন বলা হয় ।.সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে , বিবাহ করতে গেলে প্রয়াতদের উদ্দেশ্যেঅথবা যাদের পিতা-মাতা নেই তাদের পিতা-মাতার জন্য, সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি- অঞ্জলি প্রদান করতে হয় । তর্পণ মানেখুশি করা । ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগে এদিনে এমনই করেছিলেন । সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরূষের স্মরন করেন,পূর্বপূরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্নাদের মর্তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্নার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া।.পিতৃপক্ষেরও এটি শেষদিন। পৌরাণিক মতে, মহাভারতের মহাযুদ্ধে কর্ণ যখন মারা যান, তখন তার আত্মাকে খাদ্য হিসেবে গয়না উৎসর্গ করা হয় । বিস্মিত,বিমূঢ় কর্ণ এর কারণ জানতে চান দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে । ইন্দ্র জানান যে,কর্ণ তার জিবদ্দশায় কখনও পূর্বপুরুষের প্রতি খাবার,জল অর্পন করেননি, বরং তার দানের বিষয় ছিল শুধুই সোনা। আর সেই কর্মফলই তার প্রতি ফিরে এসেছে। কর্ণ তা জানতেন নাবলে তাকে ১৬ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসতে সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে তিনিপিতৃপুরুষকে জল এবং খাবার অর্পন করতে পারেন । এই সময়কালই পিতৃপক্ষ হিসাবেপরিচিত হয় । মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী,চতুর্দশী ও অমাবস্যা। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীহ্মা মায়ের পুজার।এই দিনেই দেবীর চহ্মুদান করা হয় । মহিষাসুরমর্দিনীদেবী দূর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস ।.পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। ব্রম্মার বরঅনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবেনা। ফলতঅসীম হ্মমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হতে চায় । ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সন্মিলিত ভাবে “মহামায়া” এর রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহবাহিনী দেবী দূর্গা নয় দিন ব্যাপি যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করলেন ।
বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
বেদে আল্লাহ শব্দটির কোন উল্লেখ নেই
বেদ সম্বন্ধে সম্পূর্নই অজ্ঞ জাকির নায়েক দাবী করেছে যে বেদ এ ‘আল্লাহ’ শব্দটি আছে।তাহলে পরোক্ষভাবে সে স্বীকার করে নিল যে দেবভাষা সংস্কৃত সকল ভাষার আদি এবং আরবি ভাষারও উত্পত্তি ওই সংস্কৃত ভাষা থেকেই!
মূল আলোচনা শুরুর পূর্বে পাঠকদের স্মরন করিয়ে দেই আরবীতে ‘আল্লাহ’ শব্দটি দুইটি অংশ ‘Al'(The) এবং ‘Ilah'(Subject of worship) নিয়ে গঠিত।
মূল আলোচনা শুরুর পূর্বে পাঠকদের স্মরন করিয়ে দেই আরবীতে ‘আল্লাহ’ শব্দটি দুইটি অংশ ‘Al'(The) এবং ‘Ilah'(Subject of worship) নিয়ে গঠিত।
ঋগবেদ এ ইলা এবং অলা নামক দুটি শব্দ আছে।জাকির যে মন্ত্রেই এই শব্দদুটো পাচ্ছে সেখানেই ইসলামিক তাকিয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রলাপ বকছে যে সঠিকভাবে উচ্চারন করলে তা নাকি আল্লাহ হয়!(নতুন সংস্কৃত উচ্চারন পদ্ধতি আবিস্কার)।আরো মজার বিষয় হল ইলা এবং অলা দুটি আলাদা শব্দ ই কিভাবে একটি নির্দিষ্ট শব্দ(আল্লাহ) নির্দেশ করে?
ভন্ড জাকিরের দাবী(অপ্রকৃতিস্থের প্রলাপ) অনুযায়ী ঋগবেদ ২.১.১১,৩.৩০.১০,৯.৬৭.৩০,১.১৩.৩ এই চারটি মন্ত্রে ‘আল্লাহ’ শব্দটি রয়েছে।মন্ত্রগুলোর সরলার্থ সহ দেখে নেয়া যাক-
অলাত্নো বল ইন্দ্র ব্রজো গোঃ পুরা হন্তোর্ভয়োমানো
ব্যয়ার।
সুঘান পথো অক্ষণোন নিরজে গোঃ পরাবন বাণীঃ পুরুহূতং ধমন্তী।।
(ঋগবেদ ৩.৩০.১০)
ব্যয়ার।
সুঘান পথো অক্ষণোন নিরজে গোঃ পরাবন বাণীঃ পুরুহূতং ধমন্তী।।
(ঋগবেদ ৩.৩০.১০)
অনুবাদ-হে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের চালনাকারী,শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিদের বিঘ্ন সৃষ্টিকারীরা অবশ্যই তোমার নিকট শাস্তি প্রাপ্ত হয়।সত্ ও সাধুদের জন্য তুমি পথ করেছ সুপ্রশস্ত।
স্পষ্টতই যেহেতু সুক্তটি ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে সেহেতু অলা এখানে ইন্দ্রের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ইলা সরস্বতী মহী তিস্রো দেবির্ময়োভুবঃ।
বহিঃ সীদংত্বস্রিধ।।
(ঋগবেদ ১.১৩.৯)
বহিঃ সীদংত্বস্রিধ।।
(ঋগবেদ ১.১৩.৯)
অনুবাদ-মাতৃভাষা ,মাতৃসভ্যতা ও মাতৃভূমি(ইলা) এইতিন দেবী;তারা যেন কল্যানময়রুপে অন্তঃকরনে অবস্থান নেয় অনন্তকাল।
এখানে ইলা মাতৃভূমি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
ত্বমগ্নে অদিতির্দেব দাসুসে ত্বং হোত্রা ভারতী বর্ধসেঘিরা।
ত্বমিলা ষতহিমাসি দক্ষসি ত্বং বর্ত্রহা বসুপতে সরস্বতী।।
(ঋগবেদ ২.১.১১)
ত্বমিলা ষতহিমাসি দক্ষসি ত্বং বর্ত্রহা বসুপতে সরস্বতী।।
(ঋগবেদ ২.১.১১)
অনুবাদ-হে প্রকাশমান পরমাত্মা,সকলের আশ্রয়দাতা,আমাদের এই স্তব গ্রহন কর।তুমি এই বর্নিল ঋতুময় মাতৃভূমিকে সম্পদশালী কর,নাশ কর অসত্ এর।
এখানে ত্বম-ইলা(তুমি ইলা) অর্থাত্ ইন্দ্রের অপর একটি নাম হিসেবে ইলা ব্যবহৃত হয়েছে।
অলায়স্য পরাশুরননশ্য ত্বম পবস্ব দেব সোম।
অখুঃ চিদেব দেব সোম।।
(ঋগবেদ ৯.৬৭.৩০)
অখুঃ চিদেব দেব সোম।।
(ঋগবেদ ৯.৬৭.৩০)
অনুবাদ– হে মঙ্গলদায়ক,ঐশ্বর্যশালী পরমেশ্বর,তুমি সাধুলোকের শত্রুদের ধ্বংস কর,অসত্ এর বিনাশ কর।
এখানে অলা বলতে সোমকে নির্দেশ করা হচ্ছে।
এখানে অলা বলতে সোমকে নির্দেশ করা হচ্ছে।
জাকির নায়েকের মতে প্রতিটি সংস্কৃত অভিধান এ ই আল্লাহ শব্দটি আছে এবং এর অর্থ হিসেবে ঈশ্বর দেয়া আছে।সবচেয়ে বিখ্যাত সংস্কৃত অভিধান যা Dr. Monier Williams কর্তৃক লিখিত (A Sanskrit-English Dictionary, Motilal Benarasidass, Delhi,1981) এ আল্লাহ বলে কোন শব্দ নেই।যে কাছাকাছি শব্দগুলো সেখানে আছে তা হল অলা যার অর্থ সেখানে দেয়া ‘কাঁকড়াবিছের লেজের হুল”, অলাত যার অর্থ দেয়া আছে “কয়লা” এবং আল যার অর্থ দেয়া হয়েছে “বিষাক্ত পোকা থেকে নির্গত তরল বিষ।”
অন্যতম বিখ্যাত সংস্কৃত অভিধান (The Student’s Sanskrit-English Dictionary by Vaman Shivaram Apte, Motilal Benarasidass, Delhi, 2005) এ একটি শব্দ আছে যা হল অল্লা যার অর্থ দেয়া হয়েছে “মা”
সুতরাং ইসলামিক অপপ্রচারকদের থেকে সতর্ক থাকুন।
শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
একটি অকৃজ্ঞ ও লোভী ইঁদুর এবং মহাতপা মুনীর কাহিনী

গৌতম মুনির আশ্রমে মহাতপা নামে এক মুনি বাস করতেন। তিনি ছিলেন পরম যোগী। ঋষি মহাতপা যখন ভগবানের মহিমা কীর্তন করতেন সেসময় একটি ইঁদুর এসে চুপটি করে ঋষির সামনে বসে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে সেই মহিমা শ্রবণ করত।ইঁদুরের মত একটি জীবের মধ্যেও এত ভক্তি দেখে ঋষি মহাতপার সেই ইদুরের প্রতি অত্যন্ত করুণা হল।তিনি ভাবলেন, এই ছোট্ট জীব ইঁদুরের সবসময় বৃহৎ জীবদের ভয়ে থাকতে হয়।যেকোনো সময় কোনো বৃহৎ জীবের হাতে তার প্রাণ যেতে পারে।তিনি ঠিক করলেন এই ইঁদুরটির
এরকম জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন যাতে সে ভয় না পেয়ে সসম্ভ্রমে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।
ঋষি মহাতপার এমনই অলৌকিক শক্তি ছিল যে তিনি যাকে যা বলতেন সেটিই সত্যি হতো।তাই ইঁদুরটির দুঃখ দূর করার জন্য ঋষি মহাতপা ভগবানের কাছে ইঁদুরটিকে সিংহে রূপান্তরিত করার জন্য প্রার্থনা করলেন। আর তক্ষুনি সেই ছোট্ট ইঁদুরটি এক বিরাট সিংহে রূপান্তরিত হল।
যেহেতু এখন সে সিংহ হয়েছে তাই সে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে গর্জন করতে করতে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। অন্য জন্তুরা তাকে অবনত হয়ে সম্মান নিবেদন করতো এবং তার নামে 'জয় পশুরাজ কি -জয়' বলে জয়ধ্বনি দিত।বনের অন্যান্য পশুরা আসল ব্যাপারটি কিছুই জানতো না।প্রকৃত সত্যটি জানতেন শুধু ঋষি মহাতপা। কৃত্রিম সিংহটিও এই ব্যাপারে সচেতন ছিল যে তার প্রকৃত বংশপরিচয় জানেন শুধু ঋষি মহাতপা। তার মনে ভয় ছিল যে কোনদিন যদি কেউ তার আসল পরিচয় জেনে ফেলে যে সে সিংহ নয়,সে একটি ইঁদুর, তাহলে সেদিন থেকে কেউ আর তাকে ভয় পাবে না,সম্মান করবে না।তার এই মানসিক সমস্যা দূর করে নিশ্চিত হবার জন্য কৃত্রিম সিংহটি একদিন ভাবল,যদি ঋষি মহাতপাকে হত্যা করা যায়
তাহলেই আর কেউ কিছু জানতে পারবে না।
তাহলেই আর কেউ কিছু জানতে পারবে না।
পরদিন সিংহ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঋষি মহাতপাকে হত্যা করতে এলো। কিন্তু ঋষি তাঁর যৌগিক ক্ষমতাবলে সিংহের অভিপ্রায় জানতে পারলেন। মূর্খ সিংটি আসলে তার ক্ষমতা টিকে থাকার লোভে অন্ধ হয়ে একথা বুঝতে পারে নি যে, যে তাকে ইঁদুর থেকে সিংহে পরিণত করেছিল, সে পুনরায় তাকে ইঁদুর করে দিতে পারে।আর হলোও তাই।ঋষি মহাতপা সিংহের বদমতলব বুঝতে পেরে তাকে আবার ইঁদুরে পরিণত করে দিলেন।
হিতোপদেশঃ
প্রথমত,ঋষি মহাতপার দিক দিয়ে দেখতে গেলে ইঁদুরের প্রতি তাঁর করুণা যথার্থ করুণা ছিল না।প্রকৃত করুণা হল সেটাই যার ফলে যেকোনো জীবই ভগবানের সান্নিধ্য লাভের যোগ্য হয়ে ওঠে। এই গল্পের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইঁদুরটি ভক্তিভরে প্রতিদিন ভগবানের মহিমা শ্রবণ করত।কিন্তু ইঁদুরটিকে আরও বেশি করে ভগবানের মহিমা কীর্তন না শুনিয়ে বা ভগবানের প্রসাদ সেবন না করিয়ে(যার ফলস্বরূপ হয়তো ইঁদুরটি পরবর্তী জন্মে অধ্যাত্ম সাধনশীল মানবজন্ম লাভ করতে পারতো) তিনি তাকে সিংহে পরিণত করলেন। এটা এখানে বিধির উপর বিধানগিরির অপরাধ হয়ে গেল। ভগবানই আমাদের একমাত্র স্রষ্টা, তিনি জানেন,জীবের কর্মফল অনুযায়ী কাকে কোন জীবন দান করলে তার মঙ্গল হবে।প্রকৃত ভক্ত তাই যোগীর ন্যায় অলৌকিক শক্তি কামনা করেন না,যার ফলে অহংকার উৎপন্ন হয়ে ভক্তিজীবনকে নষ্ট করে।অতএব পার্থিব করুণা প্রকৃত করুণা নয়।এর দ্বারা পরিশেষে কারোরই কল্যাণ হয় না। পারমার্থিক করুণাই প্রকৃত করুণা।
দ্বিতীয়ত, সিংহ বা ইঁদুরটির দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমরা এই শিক্ষা লাভ করি যে আমরা এই জগতের কোনো শক্তি বা বিষয়ই যে আমার নয় এই কথা ভুলে গিয়ে লোভে বা অহমিকায় অন্ধ হয়ে যদি আমরা স্রষ্টার বিরুদ্ধাচরণ করি,তাহলে যা কিছু আমরা অর্জন করি না কেন তা সবই হারিয়ে ইঁদুরটির(পুনর্মুষিক ভবঃ) মতোই আমাদের অবস্থা হবে। তাই সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাটি হল,সকল সময়ে ভগবানের শরণাগত থাকা।
গল্পটি পড়ে আপনার অনুভূতির কথা বা কি শিখতে পারলেন তা কমেন্টে জানাবেন।
শেয়ার করে সকলকে জানার সুযোগ করে দিন।
শিবলিঙ্গ সম্পর্কে ৭টি তথ্য আপনার যাবতীয় ধারণা বদলে দেবে!

শিবলিঙ্গের পূজা হিন্দুদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। শিব মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গের অবস্থান বহু প্রাচীন যুগ থেকেই ভারতে প্রচলিত রয়েছে।
এই রীতি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণাও মানুষের মনে রয়ে গিয়েছে। এখানে রইল শিবলিঙ্গ সম্পর্কে ৭টি তথ্য, যা সকলেরই জেনে রাখা প্রয়োজন.....
১. শিবলিঙ্গের পূজা কেবল ভারত আর শ্রীলঙ্কায় সীমাবদ্ধ নয়:
প্রাচীন রোমে ‘প্রায়াপাস’ নামে যে বিগ্রহের পূজা হতো, অনেকের মতে সেটি শিবলিঙ্গই ছিল। হরপ্পা-মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু শিবলিঙ্গ।
প্রাচীন রোমে ‘প্রায়াপাস’ নামে যে বিগ্রহের পূজা হতো, অনেকের মতে সেটি শিবলিঙ্গই ছিল। হরপ্পা-মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু শিবলিঙ্গ।
২. শিবলিঙ্গে থাকে মোট তিনটি অংশ:
সবচেয়ে নীচের চারমুখী অংশটি থাকে মাটির নীচে। তার উপরের অংশটি আটমুখী, যা বেদীমূল হিসেবে কাজ করে। আর একেবারের উপরের অর্ধবৃত্তাকার অংশটি পূজিত হয়। এই অংশটির উচ্চতা হয় এর পরিধির এক তৃতীয়াংশ। এই তিনটি অংশের সবচেয়ে নীচের অংশটি ব্রহ্মা, তার উপরের অংশটি বিষ্ণু ও একেবারে উপরের অংশটি শিবকে প্রতীকায়িত করে। বেদীমূলে একটি লম্বাকৃতি অংশ রাখা হয়, যা শিবলিঙ্গের মাথায় ঢালা জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই অংশের নাম গৌরীপট্ট, যা মূলত যোনিপ্রতীক।
সবচেয়ে নীচের চারমুখী অংশটি থাকে মাটির নীচে। তার উপরের অংশটি আটমুখী, যা বেদীমূল হিসেবে কাজ করে। আর একেবারের উপরের অর্ধবৃত্তাকার অংশটি পূজিত হয়। এই অংশটির উচ্চতা হয় এর পরিধির এক তৃতীয়াংশ। এই তিনটি অংশের সবচেয়ে নীচের অংশটি ব্রহ্মা, তার উপরের অংশটি বিষ্ণু ও একেবারে উপরের অংশটি শিবকে প্রতীকায়িত করে। বেদীমূলে একটি লম্বাকৃতি অংশ রাখা হয়, যা শিবলিঙ্গের মাথায় ঢালা জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই অংশের নাম গৌরীপট্ট, যা মূলত যোনিপ্রতীক।
৩. শিবলিঙ্গ পূজার মধ্যে কোনও অশ্লীলতা নেই:
শিবলিঙ্গ একই সঙ্গে শিবের সৃজনাত্মক ও ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতীক। অনেকে যে একে পুরুষাঙ্গের পূজা হিসেবে ব্যাখ্যা করে অশ্লীলতা বলে মনে করেন, তা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা। তা ছাড়া, হিন্দু ধর্মে শিবকে নিরাকার বলে মনে করা হয়। কাজেই তাঁর লিঙ্গ যে একেবারেই প্রতীকী বিষয়, তা বোঝা প্রয়োজন।
শিবলিঙ্গ একই সঙ্গে শিবের সৃজনাত্মক ও ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতীক। অনেকে যে একে পুরুষাঙ্গের পূজা হিসেবে ব্যাখ্যা করে অশ্লীলতা বলে মনে করেন, তা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা। তা ছাড়া, হিন্দু ধর্মে শিবকে নিরাকার বলে মনে করা হয়। কাজেই তাঁর লিঙ্গ যে একেবারেই প্রতীকী বিষয়, তা বোঝা প্রয়োজন।
৪. স্বামী বিবেকানন্দের ব্যাখ্যা:
স্বামীজী ‘অথর্ববেদ’-এর শ্লোক উদ্ধৃত করে শিবলিঙ্গকে আদি ব্রহ্মের স্বরূপ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর মতে, আদি ও অন্তহীন ব্রহ্মের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।
স্বামীজী ‘অথর্ববেদ’-এর শ্লোক উদ্ধৃত করে শিবলিঙ্গকে আদি ব্রহ্মের স্বরূপ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর মতে, আদি ও অন্তহীন ব্রহ্মের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।
৫. শিবলিঙ্গের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
শিবলিঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাবে এর লম্বাকৃতি অংশটিতে পরপর তিনটি খাঁজ কাটা রয়েছে। বিজ্ঞানী নিলস বোরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই তিনটি খাঁজ আসলে অণুর তিনটি উাপাদান— প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রনের প্রতীক। এই তিনটি উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। অর্থাৎ কার্যত ব্রহ্মাণ্ডের গঠনের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।
শিবলিঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাবে এর লম্বাকৃতি অংশটিতে পরপর তিনটি খাঁজ কাটা রয়েছে। বিজ্ঞানী নিলস বোরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই তিনটি খাঁজ আসলে অণুর তিনটি উাপাদান— প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রনের প্রতীক। এই তিনটি উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। অর্থাৎ কার্যত ব্রহ্মাণ্ডের গঠনের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।
৬. শিবলিঙ্গের বৈদিক ব্যাখ্যা:
শিবলিঙ্গ যেহেতু ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক সেহেতু শিবলিঙ্গ পূজা করার অর্থ, আদি শক্তির সঙ্গে চৈতন্যের মিলনকে স্মরণে রাখা। এই ‘মিলন’-এর অর্থ অবশ্য শারীরিক মিলন নয়, বরং এ এক অতিপ্রাকৃত মিলন। প্রসঙ্গত এ কথাও বলা প্রয়োজন যে, সংস্কৃত ভাষায় ‘লিঙ্গ’ শব্দটির অর্থ কিন্তু পুরুষাঙ্গ নয়, বরং চিহ্ন। নির্গুণ শক্তি যখন সগুণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে তখন লিঙ্গই হয়ে ওঠে সেই রূপান্তরের চিহ্ন।
শিবলিঙ্গ যেহেতু ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক সেহেতু শিবলিঙ্গ পূজা করার অর্থ, আদি শক্তির সঙ্গে চৈতন্যের মিলনকে স্মরণে রাখা। এই ‘মিলন’-এর অর্থ অবশ্য শারীরিক মিলন নয়, বরং এ এক অতিপ্রাকৃত মিলন। প্রসঙ্গত এ কথাও বলা প্রয়োজন যে, সংস্কৃত ভাষায় ‘লিঙ্গ’ শব্দটির অর্থ কিন্তু পুরুষাঙ্গ নয়, বরং চিহ্ন। নির্গুণ শক্তি যখন সগুণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে তখন লিঙ্গই হয়ে ওঠে সেই রূপান্তরের চিহ্ন।
৭. শিবলিঙ্গের গায়ে যে সাপটি থাকে তা আসলে সুপ্ত চেতনার প্রতীক:
শিবলিঙ্গের গায়ে অনেক সময়ে যে সাপটি প্যাঁচালো অবস্থায় দেখা যায়, সেটি আসলে কুলকুণ্ডলিনীর প্রতীক। এই শক্তির জাগরণকে চিহ্নিত করে শিবলিঙ্গ।
শিবলিঙ্গের গায়ে অনেক সময়ে যে সাপটি প্যাঁচালো অবস্থায় দেখা যায়, সেটি আসলে কুলকুণ্ডলিনীর প্রতীক। এই শক্তির জাগরণকে চিহ্নিত করে শিবলিঙ্গ।
হিন্দুদের অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কথা

অন্নপ্রাশন
হিন্দুধর্মীয সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ উৎসব। দশবিধ শুদ্ধিজনক সংস্কারের অন্যতম একটি হচ্ছে অন্নপ্রাশন। অন্নের প্রাশন বা ভোজনকে অন্নপ্রাশন বলে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সন্তান যদি বালক হয়, তবে ৬ষ্ঠ কিংবা ৮ম মাসে এবং বালিকা হলে ৫ম কিংবা ৭ম মাসে অন্নপ্রাশন করতে হয়। এতে সন্তানের মামার উপস্থিতি বাঞ্চনীয়। এ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করতে হয়। নিমন্ত্রিত আত্মীয়েরা আশীর্বাদ সহযোগে সাধ্যমাফিক উপহারসামগ্রী প্রদান করে।
উপনয়ন
উপনয়ন একটি হিন্দু শাস্ত্রানুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হিন্দু বালকেরা ব্রাহ্মণ্য সংস্কারে দীক্ষিত হয়। হিন্দু ঐতিহ্য অনুসারে, উপনয়ন হিন্দু বালকদের শিক্ষারম্ভকালীন একটি অনুষ্ঠান।
উপনয়ন একটি হিন্দু শাস্ত্রানুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হিন্দু বালকেরা ব্রাহ্মণ্য সংস্কারে দীক্ষিত হয়। হিন্দু ঐতিহ্য অনুসারে, উপনয়ন হিন্দু বালকদের শিক্ষারম্ভকালীন একটি অনুষ্ঠান।
হিন্দুধর্মে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বর্ণের জন্য উপনয়নের ন্যূনতম বয়স যথাক্রমে সাত, তেরো ও সতেরো বছর। উপনয়নকালে বালকদের ব্রহ্মোপদেশ শিক্ষা দেওয়া হয়।মনুস্মৃতি অনুযায়ী, এরপর তারা ব্রহ্মচারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। বাঙালি হিন্দু সমাজে অবশ্য কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রেই উপনয়ন সংস্কার প্রচলিত।
উপনয়ন অনুষ্ঠানে শরীরে যজ্ঞোপবীত বা উপবীত (চলিত বাংলায় পৈতে) ধারণ করা হয়। উপবীত প্রকৃতপক্ষে তিনটি পবিত্র সূতো যা দেবী সরস্বতী, গায়ত্রী ও সাবিত্রীর প্রতীক। উপবীত ধারণের সময় উপবীতধারী গায়ত্রী মন্ত্র শিক্ষা করে। উপনয়নের পর ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের দ্বিজ বলা হয়। দ্বিজ শব্দের অর্থ দুইবার জাত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রথমবার ব্যক্তির জন্ম হয় মাতৃগর্ভ থেকে; এবং দ্বিতীয়বার জন্ম হয় উপবীত ধারণ করে।
শ্রাদ্ধ
শ্রাদ্ধ হিন্দুশাস্ত্রানুযায়ী পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তির উদ্দেশে এবং তাদের আশীর্বাদ কামনায় দান-ধ্যান ও অতিথিভোজন অনুষ্ঠান। সাধারণত মৃত ব্যক্তির সন্তান কিংবা আত্যীয়-স্বজনরা এ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। অবশ্য ব্যক্তি নিজেও মৃত্যুর পূর্বে এ কাজ করে যেতে পারে।
শ্রাদ্ধ হিন্দুশাস্ত্রানুযায়ী পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তির উদ্দেশে এবং তাদের আশীর্বাদ কামনায় দান-ধ্যান ও অতিথিভোজন অনুষ্ঠান। সাধারণত মৃত ব্যক্তির সন্তান কিংবা আত্যীয়-স্বজনরা এ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। অবশ্য ব্যক্তি নিজেও মৃত্যুর পূর্বে এ কাজ করে যেতে পারে।
শ্রাদ্ধ প্রধানত তিন প্রকার: আদ্যশ্রাদ্ধ, আভু্যদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ ও সপিণ্ডীকরণ। আদ্যশ্রাদ্ধ অশৌচান্তে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে করণীয়। বর্ণভেদে ব্যক্তির মৃত্যুদিবসের ১১, ১৫ অথবা ৩০ দিন পরে এটি অনুষ্ঠিত হয়। মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকজন এ-কদিন ফলমূল, নিরামিষ এবং লবণ ছাড়া আতপ চালের ভাত খায়। শ্রাদ্ধের আগের দিন মৃত ব্যক্তির পুত্ররা মাথার চুল ফেলে দেয় এবং শাস্ত্রীয় নিয়ম-কানুনসমূহ পালন করে। শ্রাদ্ধের দিন সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া-প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ায়। নিকট অতীতে ধনী ব্যক্তিরা কয়েক হাজার পর্যন্ত লোককে খাওয়াত; বর্তমানে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের কারণে সেই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে। শ্রাদ্ধ উপলক্ষে ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়-স্বজনদের নানারকম দান-ধ্যানও করা হয়।
উপনয়ন, বিবাহ ইত্যাদি শুভকাজের পূর্বে পিতৃপুরুষের আশীর্বাদ কামনায় যে শ্রাদ্ধ করা হয়, তার নাম আভু্যদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ। আর সপিণ্ডীকরণ শ্রাদ্ধ হলো যা ব্যক্তির মৃত্যুর এক বছর পরে করা হয়। এ তিনটি ছাড়া আরও কয়েক প্রকার শ্রাদ্ধ আছে। যেমন, মহালয়া প্রভৃতি বিশেষ হিন্দু আচার উপলক্ষে এবং বিশেষ তিথিতে কারও মৃত্যু হলে তার উদ্দেশে যে শ্রাদ্ধ করা হয় তার নাম পার্বণশ্রাদ্ধ। পার্বণশ্রাদ্ধে সাধারণত পিতৃপক্ষের তিন পুরুষ ও মাতৃপক্ষের তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড দান করা হয়। এক সঙ্গে একজন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে যে শ্রাদ্ধ করা হয় তার নাম একোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধ। অম্বষ্টকা নামেও এক প্রকার শ্রাদ্ধ আছে; তবে এর প্রচলন কম। হিন্দুদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান গয়ায় বিষ্ণুপাদপদ্ম শ্রাদ্ধ করা প্রশস্ত। অনেক ধনী ব্যক্তি পিতা-মাতার শ্রাদ্ধ গয়াধামে গিয়ে করে থাকেন। শ্রাদ্ধ বিষয়ে শূলপাণির শ্রাদ্ধবিবেক ও রঘুনন্দনের শ্রাদ্ধতত্ত্ব বঙ্গদেশে অতি প্রামাণ্য গ্রন্থরূপে বিবেচিত হয়।
কেন আমি হিন্দু?
আমি একজন হিন্দু, আমার জন্ম এক হিন্দু বাবা ও হিন্দু মায়ের ঘরে, তাই জন্মসূত্রে আমি একজন হিন্দু। আমার কোনো ধর্মীয় প্রবক্তা বা আমার কোনো নির্দিষ্ট একটি ধর্মগ্রন্থ নেই বরং আমার আছে শত শত, হাজার হাজার ধর্মীয় ও দার্শনিক গ্রন্থ। হিন্দু ধর্মকে বিশ্বের বর্তমান 'ধর্মমত'-গুলোর সাথে আপনি তুলনা করতে পারবেন না। কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেও আপনি হিন্দু হতে পারেন। হিন্দু ধর্ম সেই সভ্যতার শুরু থেকেই চলে আসছে, টিকে আছে নানা প্রতিকূলতাকে ও সমালোচনাকে সাথে নিয়ে।
আমি প্রতিনিয়ত মন্দিরে যেতাম না। আমি নিয়মিত ধর্মীয় আচার-নিষ্ঠা পালন করতাম না। কেউ আমার উপর কখনো চাপ প্রয়োগ করেনি এসব নিয়ম-নিষ্ঠা পালন করার জন্য। ছোটবেলায় ধর্মীয় উৎসবসমূহে অংশ নিতাম ও খুব উপভোগ করতাম। ঈশ্বর আমার বন্ধুর মতো। আমি ঈশ্বরকে ভয় পাই না। যদি আমি হিন্দুধর্মের কিছু আচার-নিষ্ঠাকে চ্যালেঞ্জও করি তবুও কেউ আমাকে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে পারবে না বা প্রাণে মেরে ফেলবে না। কারণ একজন হিন্দু হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ও বস্তুনিষ্ঠভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারি, কোনো প্রকার শর্তাবলী ছাড়াই। এমনকি প্রকাশ্যে সমালোচনা করতেও পারি। আমাকে কেউ মেরে ফেলবে না। আসলে হিন্দুধর্ম কোনো ধর্মমত নয়, এক বিশ্বাস ও রীতি-নীতি। মানুষের সভ্য হবার পদ্ধতি ও 'মানুষ' হওয়ার সংস্কৃতি। এ কোনো এমন ধর্ম নয় যা কোনো এক ব্যক্তির দ্বারা প্রচারিত অথবা এর কোনো সংগঠিত সংঘ বা সমিতি নেই। হিন্দুধর্মে কোনো সংস্থাপণ বা কর্তৃত্বধারী গোষ্ঠী নেই।
আমাদের ঈশ্বর সম্পর্কে ভাবনা একজন ব্যক্তিগত ঈশ্বরের মতো নয়। এ তো আমাদের কাছে ভাবনারও অতীত যে আমি একজন 'ব্যক্তির মতো ঈশ্বর'-এর আরাধনা করব -- যিনি কিনা এমন যে, মেঘের মাঝে লুকিয়ে থেকে তার পছন্দমত 'বার্তাবাহক'-এর মাধ্যমে নির্দেশ দিচ্ছেন এমনভাবে যেন আমাদের তাকে উপাসনা করতেই হবে, আর না করলেই শাস্তি।
আসলে হিন্দুধর্ম হলো একজন ব্যক্তির ধর্ম, ব্যক্তির জন্য ধর্ম, ব্যক্তির দ্বারা ধর্ম যার শিকড় রয়েছে গীতার মতো ধর্মগ্রন্থে আর সাধনা রয়েছে চণ্ডীর মতো ধর্মগ্রন্থে। পুরো বিষয়টা হলো একজন ব্যক্তির ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানো তার নিজস্ব ব্যক্তিগত মাধ্যমে, তার নিজস্ব মানসিকতা ও অন্তর্নিহিত বিবর্তনের মাধ্যমে। কেউ কাউকেও হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করতে পারবে না। এ কোন ধর্মমত নয়, বরং এক জীবনপ্রণালী, জীবনে চলার রীতি-নীতি সম্বলিত ব্যবস্থা।
সকল কিছুই হিন্দুধর্মে গ্রহণযোগ্য কারণ, কোনো একক কর্তৃত্বধারী বা সংগঠন নেই যা এর ব্যবস্থাকে বাতিল ঘোষণা করবে বা এর বিরুদ্ধে প্রশ্ন করবে। তাই একমাত্র এখানেই আপনি পাবেন জীবনের অর্থ। সৃষ্টির সকল কিছুকে ভালোবাসাই হলো পরম সত্য.......- ঈশ্বর বিরাজিত সকল কিছুতেই...... কিছুই ঈশ্বর থেকে দূরে নয় কারণ ঈশ্বর সকল কিছুতেই.... সকল জীব ও জড়কে ঈশ্বর জ্ঞানে সম্মান করা উচিত আমাদের...... এ'সবই হিন্দুধর্ম আমাদের শিক্ষা দেয়। এই কারণেই একে বলে সনাতন ধর্ম, চিরন্তন বিশ্বাস। এ এক ধর্ম নামক রীতি দ্বারা চালিত যার অর্থ 'জীবন চলা'-র প্রথা। হিন্দুধর্মের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে নিজের প্রতি সৎ থাকা। এর কোনো একক ধ্যান-ধারণা নেই। এটি সকল কিছুর কাছেই উন্মুক্ত। হিন্দুরা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে যিনি আবার নানা রূপধারণও করতে পারেন প্রয়োজন অনুযায়ী। হিন্দুদের কাছে ঈশ্বর সময়হীন ও আকারহীন। বর্তমান হিন্দুদের আদি পূর্বপুরুষরা বিশ্বাস করতেন চিরন্তন সত্য ও মহাজাগতিক নিয়ম-কানুনে। এইসব সত্য বা নিয়ম-কানুন সবার কাছে উন্মুক্ত যে এ সম্পর্কে আরো গভীরে যেতে চান। কিন্তু হিন্দুদের মাঝেও এমন অংশবিশেষ রয়েছে যারা কুসংস্কারেও বিশ্বাস করে। হিন্দুধর্মের দার্শনিক দিকগুলো এসব কুসংস্কারকে ভুল প্রমাণ করে। কেউ কাউকেও হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করতে পারবে না এ কোনো ধর্মমত নয়, এ'টা একমাত্র 'ধর্ম'।
অভারতীয়রা হিন্দু শব্দটির জন্ম দেয় সিন্ধু নদের উপত্যকায় উৎপত্তির জন্য। এর ফলে ওই অঞ্চলের মানুষদের তখন হিন্দুধর্মাবলম্বী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
ধর্মমতগুলো এক 'মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রী'-তে রূপান্তরিত হয়ে যা বিবাহ-ধর্মান্তর এসবের মাধ্যমে নিজের গোষ্ঠীর লোকসংখ্যা বাড়িয়ে 'মার্কেট শেয়ার' বাড়াতে চাইছে।
কিন্তু আমি একজন হিন্দু। আমি মানি - 'অহিংসা পরমো ধর্ম' - অসহিংসতা হচ্ছে সর্বোচ্চ কর্তব্য। আমি একজন হিন্দু কারণ হিন্দুধর্ম অহিংসতার ডাক দেয়। আমি একজন হিন্দু কারণ আমি আমার মনকে কোনো বিশ্বাস ব্যবস্থার সাথে শর্ত জুড়ে দিই না। আমি একজন হিন্দু কারণ হিন্দুধর্ম হচ্ছে জগতের প্রথম উৎপন্নিত ব্যবস্থা যা মানুষকে 'মানুষ' হ'তে শিখায়। কিন্তু কোনও একজন হিন্দু পুরুষ/মহিলা, যে তার জন্মগত ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়, সে তার নিজস্ব আদর্শ, সংস্কৃতি ও জীবনের মূল্যবোধকে মূল্য দেয় না।
কেন শনিদেবের দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে কেন হনুমানের শরণ নেন হিন্দুরা ?
শনিদেবের দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে কেন হনুমানের শরণ নেন হিন্দুরা
হনুমান চল্লিশা’ পাঠ এবং শ্রীহনুমানের পূজা নিয়মিত করলে শনির প্রকোপ কমে আসে। এই বিশ্বাসের মূলেও কিন্তু রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি।
শনির দৃষ্টি রুখতে হনুমান সহায়।
‘শনির দৃষ্টি’ শব্দবন্ধটি মোটেই শ্রুতিসুখকর কিছু নয়। সাধারণত, এর দ্বারা দুর্ভাগ্যের এক বিশেষ পর্বকে বোঝায়। অথচ পুরাণ অনুযায়ী শনিদেব কারোর উপরে বিনা কারণে রুষ্ট হন না। আলস্য, কর্মবিমুখতা প্রভৃতি কারণেই শনিদেবের দৃষ্টি পড়ে কারোর উপরে। প্রতিকারের উপায় হিসেবে সেই পুরাণেরই শরণ নেন বিশেষজ্ঞরা। ‘হনুমান চল্লিশা’ পাঠ এবং শ্রীহনুমানের পূজা নিয়মিত করলে শনির প্রকোপ কমে আসে। এই বিশ্বাসের মূলেও কিন্তু রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি।
দেখা যাক ঠিক কী কী কারণে বজ্রাঙ্গবলী প্রতিরোধ করতে পারেন শনির প্রকোপকে।
• শনিদেব এবং হনুমান দু’জনেরই একটা যোগসূত্র রয়েছে। হনুমান শিবের অবতার। আর শনিদেব শিবভক্ত। তিনি শিবের কৃপাতেই তাঁর ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছেন।
• ‘সূর্য সংহিতা’ অনুসারে, হনুমান জন্মেছিলেন শনিবারেই। বহু শাস্ত্রেই উল্লিখিত রয়েছে, হনুমানের গাত্রবর্ণ শনিদেবের অনুরূপ।
• শনিদেবের পিতা সূর্যদেব হনুমানের শিক্ষাগুরু। শনিদেবের সঙ্গে পিতা সূর্যদেবের একবার যুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছিল। সূর্যদেব হনুমানকে বিপুল ক্ষমতা দান করেন। তিনি শনিদেবকে প্রতিহত করতে পারেন।
• শনিদেবের আচরণ নিষ্ঠুর বলে প্রতিভাত হয়। কিন্তু, হনুমা সেই তুলনায় দয়ালু, প্রেমময়।
• শনিদেবের জন্ম অগ্নি থেকে। আর হনুমান পবনপুত্র। হুতাশনকে স্তিমিত করতে পারে পবনই।থিত রয়েছে, হনুমান শনিদেবকে রাবণের কবল থেকে মুক্ত করেন। সে কারণে শনিদেব হনুমানের প্রতি কৃতজ্ঞ।
• হনুমান ও শনিদেবের আর একটি দ্বন্বের কথাও জানা যায়। একবার শনিদেব হনুমানকে তাঁর প্রভাবগ্রস্ত করার জন্য তাঁর স্কন্ধে আরোহণ করেন। হনুমান তাঁর দেহকে এতটাই বাড়িয়ে নেন যে, শনি বিপর্যস্ত বোধ করেন। শেষে শনিদেবকে হনুমান রেহাই দেন।
• শনিদেব ও হনুমানের মধ্যে একটা একটা আধ্যাত্মিক যোগও রয়েছে। হনুমান আত্মত্যাগের প্রতীক। আর শনিদেবে অহংবোধকে চিহ্নিত করেন। সুতারং অহং থেকে জাত কর্মকে খণ্ডণ করতে পারে একমাত্র বিনয় ও আত্মবিলোপ। সেটা হনুমানের ছাড়া আর কেই বা করতে পারেন!
সনাতন ধর্মে অমানবিক বর্ণ প্রথা ও বেদের বাণী

বর্ণ প্রথা শ্রী ভগবানের সৃষ্টি। কিন্তু তিনি তা গুণ কর্ম অনুসারে নির্ণয় করতে বলেছেন , বর্তমান হিন্দু সমাজের রীতি অনুসারে জন্ম অনুসারে তা নির্ণয় করতে বলেন নি। বেদ বা গীতায় জন্মসুত্রে বর্ণ নির্ণয়ের পক্ষে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ -ও নেই ।
হিন্দু সমাজের ব্যবহারিক জগতের বিধি বিধান দেশ কাল পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝে পরিবর্তন হয়। এমন -ই এক সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সময় কিছু মানুষ জন্মানুসারে বর্ণ নির্ণয়ের প্রথা সুরু করেন। যারা সুরু করেছিলেন বা যারা কঠোর ভাবে তা মানতেন ,তাঁরা কেউ কেউ সুবিধাবাদি হলেও, সবাই খারাপ ছিলেন না। সুবিধাবাদী লোক গুলো ছাড়া বাকী যারা এই প্রথার প্রবর্তক ছিলেন তাঁরা আধুনিক অর্থনীতির ”শ্রম বিভাজন ” নীতি প্রচলন করে সমাজ থেকে বেকারি উতখাত করতে চেয়েছিলেন।
আশা করা গেছিল যে এর ফলে এক-ই পেশার মানুষের সন্তান সেই পেশায় দক্ষতা সহজেই পিতা ও পরিবার থেকে সিখে নেবে। পরিবার এক্ষেত্রে প্রসিক্ষন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এর সাথে আধ্যাত্মিকতার কোনও অনিবার্য সংযোগ নেই। পেশা যাই হোক না কেন , সে ঈশ্বর লাভ করতেই পারেন।কিন্তু কালে সেই উদারতাও বন্ধ হতে সুরু হলে বুদ্ধাবতারে ভগবান বর্ণ , যজ্ঞ , বলি প্রভৃতি প্রথার বিকৃত রূপের নিন্দা করেন।
এই প্রসঙ্গে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা এই যে , সারা পৃথিবীতে পুরোহিত শ্রেণী ও শাসক স্রেনি একত্রে অবহেলিত মানুষকে চুটিয়ে শাসন ও শোষণ করেছে , ভারতেও তা হয়েছে। কিন্তু এ দেশের হিন্দু সমাজের ওই শাসক ও পুরোহিত শ্রেণী থেকেই আবার অবতার ও সাধক গন এসে ধর্ম ও দেশ রক্ষা করেছে যা অন্য দেশে বা অন্য রিলিজিওনে প্রায় কখনও ঘটে নি। জন্মসুত্রে শাসক শ্রেণীর কৃষ্ণ বা বুদ্ধ কিম্বা পুরোহিত শ্রেণীর রামানুজ বা চৈতন্য দেব বা রামকৃষ্ণ দেব তাঁদের যুগ হিসেবে যথা সম্ভব হিন্দু ও ভারতীয় সমাজের বৈপ্লবিক সংস্কার করেছেন। তাঁদের অবদানকে তাই স্রদ্ধানত চিত্তে স্বীকার করতে হবে। উচ্চ বর্ণ মানেই তাই নিকৃষ্ট ,মানবতা বিরোধী জীব নয়— এ সত্য ও মানতে হবে। তথা কথিত উচ্চ বর্ণে আবির্ভূত হয়েও এই দিব্য পুরুষেরা বর্ণ ,শ্রেণী , মতের ঊর্ধ্বে তাঁদের জীবন ও আদর্শ কে স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা হিন্দু ও ভারতীয় সমাজের যতটুকু সংস্কার করতে পেরেছিলেন, তার পরেও আরও কাজ বাকী রয়ে গেছে। এই প্রজন্মের সকল বর্ণের হিন্দুকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। প্রনবানন্দ মহারাজ যেমন বলতেন যে , সবার আগে চাই হিন্দুতে হিন্দুতে মিলন, তারপর হিন্দু অহিন্দুর মিলন এমনিতেই সুসম্পন্ন হবে।
কুরুক্ষেত্রের যে স্থানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতাদান করেছিলেন
কুরুক্ষেত্রের যে স্থানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতাদান করেছিলেন
এই সেই পবিত্র মন্দির। যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের বিগ্রহ আছে। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য মন্দিরের ভেতরে ছবি তোলা বারন আছে । বাইরে থেকে যত ইচ্ছা তোলা যাবে । এই মন্দির টি কুরুক্ষেত্রের একাংশে অবস্থিত ।
এই মাটি পবিত্র । এখানেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতা বলেছিলেন। অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন। এই মাটি স্পর্শ করলে মহাপাপীও পবিত্র হয়ে যায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশীষ প্রাপ্ত হয় । মন্দিরের ভেতরে হনুমান জী আছেন । মন্দিরের বাইরে ভগবানের বাহন গড়ুর জীর বিগ্রহ আছে ।এই মন্দির পরিক্রমা করলে অক্ষয় ফল প্রাপ্ত হয় । হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র উচ্চারণ করে ভক্ত গন পরিক্রমা করেন ।
এই সেই পবিত্র মন্দির। যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের বিগ্রহ আছে। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য মন্দিরের ভেতরে ছবি তোলা বারন আছে । বাইরে থেকে যত ইচ্ছা তোলা যাবে । এই মন্দির টি কুরুক্ষেত্রের একাংশে অবস্থিত ।
এই মাটি পবিত্র । এখানেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতা বলেছিলেন। অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন। এই মাটি স্পর্শ করলে মহাপাপীও পবিত্র হয়ে যায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশীষ প্রাপ্ত হয় । মন্দিরের ভেতরে হনুমান জী আছেন । মন্দিরের বাইরে ভগবানের বাহন গড়ুর জীর বিগ্রহ আছে ।এই মন্দির পরিক্রমা করলে অক্ষয় ফল প্রাপ্ত হয় । হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র উচ্চারণ করে ভক্ত গন পরিক্রমা করেন ।
দ্রৌপদী কূপ। সিঁড়ি দিয়ে সুড়ঙ্গের মধ্যে নামতে হয় । কুরুক্ষেত্রের এক প্রান্তে অবস্থিত ।
সনাতন হিন্দু ধর্মের মূল গ্রন্থসমূহ
সনাতন হিন্দু ধর্মের মূল গ্রন্থসমূহ: # বেদ ৪ টি- মন্ত্র সংখ্যা- ২০,৪৩৪ ১.ঋগবেদ. মন্ত্রসংখ্যা- ১০,৫৮৯ ২.সামবেদ. মন্ত্রসংখ্যা- ১,৮৯৩ ৩.যজু:বেদ. মন্ত্র সংখ্যা- ১,৯৭৫ ৪.অথর্ববেদ. মন্ত্রসংখ্যা- ৫,৯৭৭ # উপবেদ ৪ টি. ১. আয়ুর্বেদ. ২.ধনুর্বেদ. ৩.গন্ধর্ববেদ. ৪.অর্থশাস্ত্র. # বেদাঙ্গ -৬ টি. ১.শিক্ষা- পাণিনী ২.কল্প- বিভিন্ন ঋষি সম্প্রদায় ৩.ব্যাকরণ- পাণিনী. ৪.নিরুক্ত- যাস্ক. ৫.ছন্দ- পিঙ্গলাচার্য. ৬.জ্যোতিষ- গর্ণ. # বেদের উপাঙ্গ-৪ টি. ১.পুরাণ. ২.মীমাংসা. ৩.ন্যায়. ৪.ধর্মশাস্ত্র #বেদের জ্ঞানকাণ্ড- ২ টি. ১.আরণ্যক. ২.উপনিষদ. # আরণ্যক - ৪ টি. ১.ঐতেরেয়. ২.কৌষীতকী ৩.শতপথ ব্রহ্মণ. ৪.ছান্দোগ্য. # উপনিষদ -১২ টি. ১.বৃহদারণ্যক মন্ত্র- ৪৩৫. ২.ছান্দোগ মন্ত্র- ৬৬৮ ৩.তৈত্তিরীয় মন্ত্র- ৬৮. ৪.ঐতরেয় মন্দ্র- ৩৩ ৫.ঈশোপনিষ মন্ত্র- ১৮ ৬.কেন উপনিষদ- ৩৫ ৭.কঠো উপনিষদ- ১১৯. ৮.প্রশ্ন উপনিষদ- ৬৭ ৯.মুণ্ডকোপনিষদ- ৬৫. ১০.মাণ্ডুক্যউপনিষদ- ১২ ১১.শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ. মন্ত্র. - ১১৩. ১২.কৌষীতকী উপনিষদ মন্ত্র. - ৪৯. # ষড় দর্শন -৬ টি. ১.সাংখ্যা দর্শন - মহর্ষি কপিল. ২.যোগ দর্শন- পাতঞ্জলি. ৩.ন্যায় দর্শন - গৌতম. ৪.বৈশেষিক দর্শন-কণাদ. ৫.পূর্ব মীমাংসা - জৈমিনী. ৬.উত্তর মীমাংসা বেদান্ত দর্শন- ব্যাসদেব. # মীমাংসা - ২ টি. ১.কর্ম মীমাংসা ২.ব্রহ্ম মীমাংস বা বহ্মসূত্র. # স্মৃতি সংহিতা(সমাজ ব্যবস্থাপক শাস্ত্র) ২০টি ১.মনু সংহিতা ২.অত্রি সংহিতা. ৩.বিষ্ণু সংহিতা. ৪.হরিত সংহিতা. ৫.যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা.৬.পরাশর সংহিতা. ৭.ব্যাস সংহিতা. ৮.উশনা সংহিতা. ৯.অঙ্গিরা সংহিতা. ১০.যম সংহিতা. ১১.অপস্তম্ভ সংহিতা ১২.সম্বর্ত সংহিতা. ১৩.কাত্যায়ন সংহিতা.১৪.বৃহস্পতি সংহিতা. ১৫.শঙ্খ সংহিতা ১৬.লিখিত সংহিতা. ১৭.দক্ষ সংহিতা. ১৮.গৌতম সংহিতা. ১৯.শতাতপ সংহিতা.২০.বশিষ্ট সংহিতা. # পুরাণ - ২ টি. ১.মহাপুরাণ. ২.উপ-পুরাণ. # মহা পুরাণ -১৮টি. ১.ব্রহ্ম পুরাণ মন্ত্রসংখা-১০,০০০. ২.শিব পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-২৪,০০০. ৩.পদ্ম পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-৫৫,০০০. ৪.বিষ্ণু পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-২৩,০০০. ৫.ভাগবত পুরাণ মন্ত্রনংখ্যা-১৮,০০০. ৬.মার্কণ্ডেয় পুনাণ মন্ত্রসংখ্যা-৯,০০০. ৭.অগ্নি পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-৫,৪০০. ৮.ভবিষত পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৪,৫০০. ৯.ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৮ ,০০০. ১০.মৎস পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৪,০০০. ১১.লিঙ্গ পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১১,০০০. ১২.বরাহ পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-২৪,০০০. ১৩.কুর্ম্ম পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৭,০০০. ১৪.গরুড় পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৯,০০০. ১৫.ব্রহ্মা পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১২,০০০. ১৬.নারদীয় পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-২৫,০০০ ১৭.স্কন্ধ পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-৮১,১০১. ১৮.বামন পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১০,০০০. # রামায়ণ. # মহাভারত. # দেবী ভগবত(শক্ত সম্প্রদয়) # শ্রীমদ্ভাগবদ(বৈষ্ণব সম্প্রদায়) # চৈতন্য চরিতামৃত. # শ্রীমদ্ভাগবত গীতা মন্ত্রসংখ্যা-৭০০ শ্রেষ্টগ্রন্থ (৫ম বেদ) # শ্রীশ্রী চণ্ডী.মন্ত্রসংখ্যা-৭০০
শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
দেহচক্রের কথা

দেহচক্রের কথা শুনলেই আমরা একটু চিন্তিত হয়ে যাই। মনের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন উকিঁঝুকি দিতে থাকে। আমাদের দেহে আবার চক্র আসবে কোথা থেকে? এ চক্রগুলো কোথায় থাকে, এ চক্রগুলোর কাজ কী ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেকেই জানি না, আমাদের দেহে একটি দুটি নয়, সাত সাতটি চক্র আছে। আমরা বেশির ভাগ সময় অনেক গোপন সত্য জানা থেকে পিছিয়ে থাকি। আমাদের দেহের নিম্নাঙ্গে, তলপেটে, নাভিতে, হৃদয়ে, কণ্ঠে, দু চোখের মাঝে ও মাথার ওপরে আছে সাতটি চক্রের অবস্থান। চক্রগুলো হলো, মূলাধার চক্র, স্বাধিষ্ঠান চক্র, নাভিচক্র, হৃদচক্র, বিশুদ্ধ চক্র, আজ্ঞা চক্র ও সহস্রার চক্র।
-
দেহ একটা রঙের বাক্সের মতো। 'দিব্যশক্তি' শিশুর মতো এ দেহে রঙতুলি নিয়ে নানা ভঙ্গিমায় খেলা করতে থাকে। খেলার জন্য তার পছন্দের জায়গা ‘চক্র’। এক-একটি চক্র তার কাছে এক-একটি প্লে-গ্রাউন্ড। খামখেয়ালিভাবে সে চক্রে চক্রে নেচে বেড়ায়। তার নৃত্যের তালে তালে আমাদের জীবন হয়ে উঠে ছন্দোময়, প্রেমময় ও আলোময়। তাই ইংরেজি ‘হিউম্যান বিইং’ শব্দটি মানুষের জন্য সঠিকভাবে প্রযোজ্য। Human Being=`Hue+ Man+ Being’ where Hue means Color, Man means Manifestation and Being means Light. অর্থাৎ হিউম্যান বিইং অর্থ ‘রঙরূপ আলো’। প্রতিটি চক্রের সাথে দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জড়িত। যখন যে চক্রে দিব্যশক্তি খেলা করে তখন সে চক্রের ওপর ভাল-মন্দ দুরকমের প্রভাব পড়ে। যেমন, বিশুদ্ধ চক্রে খেলা করলে কথা বলার শক্তি ও গানের সুরধারা আসে। আবার সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ও মন খারাপ হয়ে থাকে। এভাবে অন্যান্য চক্রের ওপরও প্রভাব ফেলে থাকে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ দিব্যশক্তির এই খেলায় এক পর্যায়ে সব মন্দ হয়ে ওঠে ভালো। এমনকি রোগ সারানোসহ বিভিন্ন মিরাকলও ঘটে।
-
এবার জানা যাক চক্র বিষয়ে -----
-
-
দেহ একটা রঙের বাক্সের মতো। 'দিব্যশক্তি' শিশুর মতো এ দেহে রঙতুলি নিয়ে নানা ভঙ্গিমায় খেলা করতে থাকে। খেলার জন্য তার পছন্দের জায়গা ‘চক্র’। এক-একটি চক্র তার কাছে এক-একটি প্লে-গ্রাউন্ড। খামখেয়ালিভাবে সে চক্রে চক্রে নেচে বেড়ায়। তার নৃত্যের তালে তালে আমাদের জীবন হয়ে উঠে ছন্দোময়, প্রেমময় ও আলোময়। তাই ইংরেজি ‘হিউম্যান বিইং’ শব্দটি মানুষের জন্য সঠিকভাবে প্রযোজ্য। Human Being=`Hue+ Man+ Being’ where Hue means Color, Man means Manifestation and Being means Light. অর্থাৎ হিউম্যান বিইং অর্থ ‘রঙরূপ আলো’। প্রতিটি চক্রের সাথে দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জড়িত। যখন যে চক্রে দিব্যশক্তি খেলা করে তখন সে চক্রের ওপর ভাল-মন্দ দুরকমের প্রভাব পড়ে। যেমন, বিশুদ্ধ চক্রে খেলা করলে কথা বলার শক্তি ও গানের সুরধারা আসে। আবার সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ও মন খারাপ হয়ে থাকে। এভাবে অন্যান্য চক্রের ওপরও প্রভাব ফেলে থাকে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ দিব্যশক্তির এই খেলায় এক পর্যায়ে সব মন্দ হয়ে ওঠে ভালো। এমনকি রোগ সারানোসহ বিভিন্ন মিরাকলও ঘটে।
-
এবার জানা যাক চক্র বিষয়ে -----
-
মূলাধার চক্র (Root/Ovaries/Testes)
-
মূলাধার চক্র দেহের মেরুদন্ডের শেষ প্রান্তে বা নিম্নাংশে অবস্থিত। এটিকে কুণ্ডলিনী বলে। এ চক্রের চারটি দল। এর রঙ লাল। এটি আমাদের চেতনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ চক্রটি চেতন থেকে অবচেতন পর্যন্ত বিস্তৃত। জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি- এ চারটির নিয়ামক এ চক্র। কামশক্তির আধার এটি। এটিতে আছে অস্থিধাতুর শক্তি। এ চক্রে দিব্যশক্তি খেলা করলে কামনা বাড়ে। জন্ম হয়। মৃত্যু হয়। রোগ হয়।
-
স্বাধিষ্ঠান চক্র (Abdomen/Pancreas glands)
-
স্বাধিষ্ঠান চক্র দেহের তলপেট বা অগ্নাশয় নিয়ে গঠিত। এ চক্রের ছয়টি দল। এর রঙ গাঢ় গোলাপি। এটি আমাদের লোভ, কামনা, বাসনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটিতে আছে মেদ ধাতুর শক্তি। এ চক্রে দিব্যশক্তির নৃত্যে কামনা বাড়ে। বাসনা বাড়ে। লোভ বাড়ে। বমি হয়। ডায়ারিয়া হয়। ভয় কাজ করে।
-
মণিপুর বা নাভিচক্র (Solar plexus/Adrenal glands)
-
মণিপুর চক্র দেহের নাভি বা বৃক্কাশয় বা পাকস্থলির নিচের শিরাজাল নিয়ে গঠিত। এ চক্রের দশটি দল। এটির রঙ বেগুনি। এটি আমাদের উচ্চ চেতনা, জীবনীশক্তি, আবেগ, বাসনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটিতে আছে মাংসধাতুর শক্তি। তেজশক্তির আধার এটি। এ চক্রে দিব্যশক্তি মণিপুরি নৃত্য করে। দিব্যশক্তির উন্মাদ নাচের তালে দেহের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। পেটের পীড়া হয়।
-
অনাহত বা হৃদচক্র (Heart/Thymus gland)
-
হৃদচক্র আমাদের বুকের মাঝখানে অবস্থিত। এ চক্রের বারটি দল। এর রঙ সোনালি-গোলাপি। এটি আমাদের আবেগ, রাগ-অনুরাগ, প্রেম, বিরহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটির অনেক গভীরে আত্মা থাকে। এটিতে আছে রক্ত ধাতুর শক্তি। এ চক্রে দিব্যশক্তির খেলায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। প্রেম-ভালবাসা হয়। বিরহ আসে। বুক-পিঠ ব্যথা করে। হৃদরোগ হয়।
-
বিশুদ্ধ চক্র (Throat/Thyroid gland)
-
বিশুদ্ধ চক্র আমাদের কণ্ঠে অবস্থিত। এ চক্রের ষোলটি দল। এর রঙ ধূসর। এটি আমাদের ভাবপূর্ণ মন ও বাহির মনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ চক্র মানসিক শক্তি ও মনের সব ভাব প্রকাশ করে থাকে। এটিতে আছে স্নিগ্ধশক্তি। এ চক্রে শিশু খেলা করলে কথা বলার শক্তি আসে। গানের সুর আসে। সর্দি, কাশি, গলা-ঘাড় ব্যথা ও মন খারাপ হয়।
-
আজ্ঞা চক্র (Third Eye/Pineal gland)
-
আজ্ঞা চক্র আমাদের দু ভুরুর মাঝখানে অবস্থিত। এ চক্রের দুটি দল। এর রঙ সাদা। এটি আমাদের গতিময় মন, ইচ্ছা, দিব্যদৃষ্টি, মানসিক গঠন ও মনের সব চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটিতে আছে মজ্জা ধাতুর শক্তি। এ চক্রে দিব্যশক্তির খেলায় মন কাজ করে। চিন্তাশক্তি আসে। ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা আসে। কবিতা, উপন্যাস লেখাসহ সব সৃষ্টিশীল কাজ করার ক্ষমতা আসে। মাথা ঘোরায়। কখনও কখনও মাথা চিন্তাশূন্য হয়ে পড়ে।
-
সহস্রার চক্র (Crown/Pituitary gland)
-
সহস্রার চক্র আমাদের মাথার ঠিক ওপরে অবস্থিত। এ চক্রের সহস্রটি দল। এটিতে নির্দিষ্ট কোনো রঙ নেই। এটি আমাদের উচ্চ চেতনা বা অধিচেতনা, অর্ন্তদৃষ্টি, বোধিসত্ব চেতনা, দিব্য চেতনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটির তিনটি অংশ আছে : সচ্চিদানন্দ (সৎ, চিৎ, আনন্দ), নিচ থেকে উপরে আনন্দ অংশ, এর উপরে চিৎ (দর্পণ) অংশ এবং এরও উপরে সৎ (মহাশূন্যতারুপী অন্ধকার) অংশ। এ চক্রে দিব্যশক্তির খেলায় দিব্যজ্ঞান আসে। মানুষ জাগতিক ও মহাজাগতিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে জানতে পারে। মাথার তালু জ্বলে যায়।
আমাদের দেহের চক্রগুলো একই সাথে গোলাকার ও লম্বাকার। সব চক্রের কেন্দ্র হৃদয় বা অনাহত বা হৃদচক্র। চক্রগুলো সবসময় দেহের মধ্যে সক্রিয় থাকে। প্রতিটি চক্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটিতে কাজ হলে অন্যটির উপরও প্রভাব পড়ে। প্রতিটি চক্র দেহের সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি মানুষের ইচ্ছানুযায়ী দিব্যশক্তি কাজ করে থাকে, অন্যদিকে উল্টাটাও সত্য।
বিভিন্ন যোগী, ঋষি, সাধক-সাধিকারা এই চক্রের অনুশীলন করে থাকেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে এটি করা কঠিন। কেউ যদি নিজে নিজে এটি করতে চান, করতে পারেন কিন্তু এতে ঝুঁকি থেকে যায়। এজন্য একজন গুরু বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসা প্রয়োজন।
হিন্দু ধর্ম্ম গ্রন্থ হমে বাৎস্যায়ন আট প্রকার বিয়ে কথা উল্লেখ করেছেন
১। ব্রাহ্ম বিয়ে।
২। প্রজাপত্য বিয়ে।
৩। আর্য্য বিয়ে।
৪। দৈব বিয়ে।
৫। অসুর বিয়ে বা আসুরিক বিয়ে।
৬। গন্ধর্ব বিয়ে।
৭। পিশাচ বা পৈশাচিক বিয়ে।
৮। রাক্ষক বিয়ে।
-
যে আট রকম বিয়ের কথা বলা হলো তার মধ্যে প্রথম চার রকম-ব্রাহ্ম, প্রজাপত্য, আর্য্য ও দৈব বিয়ে থাকে বিভিন্ন মন্ত্র ক্রমে।
বর্তমানে প্রজাপত্য বিয়ের চলনই বেশি। এই সব প্রথায় বিয়ে করতে বর ও কনের কোনও প্রকার চেষ্টা করতে হয় না। পিতামাতা বা আত্নীয় স্বজনই এই ধরনের বিয়ের ব্যবস্থা করে থাকেন। কেবল বিভিন্ন মন্ত্র অনুযায়ী বা পদ্ধতি অনুযায়ী বিভিন্ন নামকরণ।
এ ছাড়া যে সব বিয়ে আছে, সেগুলির জন্য বর এবং কন্যার নিজের ব্যবস্থা করা দরকার। এ গুলিতে পিতামাতা বা আত্নীয় স্বজনের কোন দায়িত্ব নেই। যেমন ধারা গান্ধর্ব বিয়ে। এ বিয়ে বর এবং কনে পরস্পরকে ভালবেসে নিজে থেকে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেনি এবং নিজেও কোনও পুরুষকে আকর্ষণ করতে পারেনি, তা হলে তাদের বিয়ে হবে আসুরিক মতে। যদি পিতামাতাকে টাকা বা বেশ উপহার দিয়েও ঐ নারীকে বিয়ে করতে স্বীকৃত না করা যায়, তাহলে তা হয় পৈশাচিক বা রাক্ষস বিবাহ।
গান্ধর্ব বিবাহ -- গান্ধর্ব ইত্যাদি বিয়ের প্রথম দরকার নারীকে আকর্ষণ করা। তা করতে হলে একটি সুনিপুণা ঘটকী আবশ্যক।
যদি কোনও প্রেমিক তার মনের মত নির্বাচিত নারীকে পেতে অসমর্থ হয়-তা হলে তার দরকার-ঐ নারীর ধাত্রী কন্যার সঙ্গে বন্দোবস্ত করা। ধাত্রী কন্যাকে পাঠানো যেতে পারে ঐ নারীর কাছে। নারীর কাছে গিয়ে ধাত্রী কন্যা পাণি প্রার্থী যুবকের গুণ, বিদ্যা, সম্পত্তি, বিষয় ইত্যাদি নিয়ে নানান প্রশংসা করা। এইসব কাজের জন্যে নিপুণা ও কৌশলময়ী একজন বিশ্বস্ত ধাত্রী কন্যা দরকার। তরুণীর বাড়ীর কোন বিশ্বাসী ও ধাত্রী কন্যা ভাল হয় ও আবশ্যক। অবশ্য ধাত্রী কন্যা তরুণীর সমবয়সী হওয়া প্রয়োজন। তার বেশ প্রভাব থাকা উচিত। সে তরুণীকে বেশ নিভৃতে নিয়ে গিয়ে পূর্বে যেসব সম্বন্ধ তার জন্য এসেছে-বা যে বরের সঙ্গে পিতামাতার মত আছে বিয়ে দিতে, সেগুলির একে একে নিন্দা করবে। যেমন, অমুকর ছেলে? আর রাম-লোকটা মদ খায়, আমি নিজে চোখে দেখেছি, বা নিজে কানে শুনেছি। আর তার বাপ এককালে ধনী ছিল এখন তার সর্বস্ব বিক্রি হয়ে গেছে এবারের তাকে ত পথে বসতে হবে। অন্য মেয়ের সঙ্গে তার ভালবাসা আছে। এই সব বলে তরুণীর মনে বীতরাগ জন্মে দেবে। তারপরে বলবে-আমি যে ছোকরার কথা বলছি, তার বাপের অনেক ভূসম্পত্তি আছে। অনেক বিদ্যা, অনেক গুণ, বহু টাকা রোজাগার করে। ভবিষ্যতে ঠিক রাজরাণী হয়ে থাকবে। এই সব কথা বলে তরুণটির নানা গুণ ব্যাখ্যা করবে। তারপর দু’জনে নিভৃতে দেখা হবে, প্রেমলিপি বা প্রেমের কথা হবে। দু’জনের সঙ্গ গভীর প্রেম ও মিলন হবে ভালো। শেষে গোপনে কোন ব্রাহ্মণ ডেকে এনে হোম করবে-বিয়ে হবে অগ্নিদেবকে সাক্ষী করে পরে অবশ্য আত্নীয়দের বলা চলে। এই হলো গান্ধর্ব বিয়ে।
যদি কোনও প্রেমিক তার মনের মত নির্বাচিত নারীকে পেতে অসমর্থ হয়-তা হলে তার দরকার-ঐ নারীর ধাত্রী কন্যার সঙ্গে বন্দোবস্ত করা। ধাত্রী কন্যাকে পাঠানো যেতে পারে ঐ নারীর কাছে। নারীর কাছে গিয়ে ধাত্রী কন্যা পাণি প্রার্থী যুবকের গুণ, বিদ্যা, সম্পত্তি, বিষয় ইত্যাদি নিয়ে নানান প্রশংসা করা। এইসব কাজের জন্যে নিপুণা ও কৌশলময়ী একজন বিশ্বস্ত ধাত্রী কন্যা দরকার। তরুণীর বাড়ীর কোন বিশ্বাসী ও ধাত্রী কন্যা ভাল হয় ও আবশ্যক। অবশ্য ধাত্রী কন্যা তরুণীর সমবয়সী হওয়া প্রয়োজন। তার বেশ প্রভাব থাকা উচিত। সে তরুণীকে বেশ নিভৃতে নিয়ে গিয়ে পূর্বে যেসব সম্বন্ধ তার জন্য এসেছে-বা যে বরের সঙ্গে পিতামাতার মত আছে বিয়ে দিতে, সেগুলির একে একে নিন্দা করবে। যেমন, অমুকর ছেলে? আর রাম-লোকটা মদ খায়, আমি নিজে চোখে দেখেছি, বা নিজে কানে শুনেছি। আর তার বাপ এককালে ধনী ছিল এখন তার সর্বস্ব বিক্রি হয়ে গেছে এবারের তাকে ত পথে বসতে হবে। অন্য মেয়ের সঙ্গে তার ভালবাসা আছে। এই সব বলে তরুণীর মনে বীতরাগ জন্মে দেবে। তারপরে বলবে-আমি যে ছোকরার কথা বলছি, তার বাপের অনেক ভূসম্পত্তি আছে। অনেক বিদ্যা, অনেক গুণ, বহু টাকা রোজাগার করে। ভবিষ্যতে ঠিক রাজরাণী হয়ে থাকবে। এই সব কথা বলে তরুণটির নানা গুণ ব্যাখ্যা করবে। তারপর দু’জনে নিভৃতে দেখা হবে, প্রেমলিপি বা প্রেমের কথা হবে। দু’জনের সঙ্গ গভীর প্রেম ও মিলন হবে ভালো। শেষে গোপনে কোন ব্রাহ্মণ ডেকে এনে হোম করবে-বিয়ে হবে অগ্নিদেবকে সাক্ষী করে পরে অবশ্য আত্নীয়দের বলা চলে। এই হলো গান্ধর্ব বিয়ে।
পৈশাচিক বিয়ে --- যদি কোন তরুণ-তরুণীর মধ্যে গান্ধর্ব বিয়ে করার উপায় না থাকে, তাহলে আর এক উপায় চলতে পারে। এ প্রথা বাৎস্যায়নের যুগে ছিল। দু’জনে আগে প্রেম করবে, তারপর সুযোগ বুঝে গোপনে নারীকে কোন মাদকদ্রব্য খাইয়ে অধজ্ঞানহীন ও উত্তেজিত করে যৌন মিলন করবে। তারপর পুরোহিত ডেকে সেই নারীকে বিয়ে করবে। নারী রাজী হলে- কারণ সে জানবে তার অন্য গতি নাই।
রাক্ষস বিয়ে --- যদি কোনও রুপসী নারীকে লাভ করা দুস্কর হয়ে পড়ে, তখন তাকে কোনও বাগান বা পথ থেকে লোকজনের সাহায্যে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে পরে ব্রাহ্মণ ডেকে হোম করে বিয়ে করার নাম রাক্ষস বিয়ে। পুরাকালে ক্ষত্রিয় রাজারা এইভাবে বাহুবলে বহু নারীকে ধরে এনে বিয়ে করত। বর্তমানে এর চলন প্রায় নাই।
আসুরিক বিয়ে ---- যদি কোন লোক রুপসী তরুণীর কোন আত্মীয় বা আত্মীয়কে অর্থের সাহায্যে ভুলিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে হাত করে তাকে এনে বিয়ে করে -- উক্ত লোকটির সাহায্যে --- একে বলা হয় আসুরিক বিয়ে। আসুরিক বিয়ে আজকাল মাঝে মাঝে হয়, তবে লোকে তা বুঝতে বা জানতে পারে না। তাবে কন্যার বা আত্মীয়ের অমতে এ সব করা উচিত নয়।
জ্ঞান হচ্ছে পরমতত্ত্ব
জ্ঞান হচ্ছে পরমতত্ত্ব। বিজ্ঞান হল সেই জ্ঞান যে জ্ঞানের উদয় হলে ‘আমি ব্রহ্ম’ এরূপ বিশ্বাসে মন দৃঢ় হয়। ব্রহ্ম ছাড়া আর অন্য কোন বস্তুর কথা মনেও আসে না এবং সেই বিজ্ঞানী মানুষের বুদ্ধি সর্বতোভাবে শুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই বিজ্ঞান দুর্লভ। জগতে সেই শুদ্ধ জ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ কম। সেই বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানী যা এবং যেমন তা সর্বদাই শিব স্বরূপ সাক্ষাত পরাৎপর ব্রহ্ম।
কিন্তু সেই বিজ্ঞান লাভের পথ হল বিশুদ্ধ শিব ভক্তি। এই ভক্তিই হল ওই বিজ্ঞানের মাতৃ স্বরূপ যা ভোগ ও মোক্ষ রূপ ফল প্রদানকারী। আর বাবা মহাদেবের কৃপাতেই মানুষ সেই ভক্তি লাভ করতে পারে। ভক্তি ও জ্ঞানে কোন কোনও পার্থক্য নেই। ভক্ত ও জ্ঞানী উভয়েই সর্বদা সুখদায়ক হয়ে থাকেন। যিনি ভক্তির বিরোধী তাঁর জ্ঞান লাভ হয় না।
কিন্তু সেই বিজ্ঞান লাভের পথ হল বিশুদ্ধ শিব ভক্তি। এই ভক্তিই হল ওই বিজ্ঞানের মাতৃ স্বরূপ যা ভোগ ও মোক্ষ রূপ ফল প্রদানকারী। আর বাবা মহাদেবের কৃপাতেই মানুষ সেই ভক্তি লাভ করতে পারে। ভক্তি ও জ্ঞানে কোন কোনও পার্থক্য নেই। ভক্ত ও জ্ঞানী উভয়েই সর্বদা সুখদায়ক হয়ে থাকেন। যিনি ভক্তির বিরোধী তাঁর জ্ঞান লাভ হয় না।
“ভক্তৌ জ্ঞানে ন ভেদো হি তৎকর্তুঃ সর্বদা সুখম্ ।
বিজ্ঞানং ন ভবত্যেব সতি ভক্তি বিরোধিনঃ ।।
ভক্তাধীনঃ সদাহং বৈ তৎ প্রভাবাদ্ গৃহেষ্বপি।
নীচানং জাতিহীনানাং যামি দেবি ন সংশয়ঃ ।।”(শিবপুরাণ রুদ্রসংহিতা)
বিজ্ঞানং ন ভবত্যেব সতি ভক্তি বিরোধিনঃ ।।
ভক্তাধীনঃ সদাহং বৈ তৎ প্রভাবাদ্ গৃহেষ্বপি।
নীচানং জাতিহীনানাং যামি দেবি ন সংশয়ঃ ।।”(শিবপুরাণ রুদ্রসংহিতা)
মহাদেব মহেশ্বর সর্বদা ভক্তের অধীন থাকেন এবং ভক্তির প্রভাবে জাতি হীন নীচ মানুষদের গৃহেও তিনি অবস্থান করেন। গুণ ভেদে ভক্তি দুই রকম – সগুণা এবং নির্গুণা। যে ভক্তি শাস্ত্রবিধি দ্বারা প্রেরিত বা বৈধী অথবা হৃদয়ের সহজ অনুরাগ দ্বারা প্রেরিত বা স্বাভাবিক সেই ভক্তিই উচ্চকোটির ভক্তি। এছাড়া যে কামনামূলক ভক্তি হয়ে থাকে তা নিম্নকোটির ভক্তি। সগুণ এবং নির্গুণ ভক্তি আবার নৈষ্ঠিকী ও অনৈষ্ঠকী ভেদে দুই ভাগে বিভক্ত। নৈষ্ঠিকী ভক্তি ছয় প্রকারের এবং অনৈষ্ঠকী ভক্তি একই প্রকারের হয়। প্রকৃত বিদ্বান ব্যক্তি বিহিতা এবং অবিহিতা ভেদে নানা প্রকারের বলে মনে করে থাকেন। সগুণা এবং নির্গুণা উভয় ভক্তির নয়টি অঙ্গ।
“শ্রবণং কীর্তনং চৈব স্মরণং সেবনং তথা।
দাস্য তথার্চনং দেবি বন্দনং মম সর্বদা।।
সখ্যমাত্মার্পণং চেতি নবাঙ্গানি বিদুর্বুধাঃ।” ---------- শিবপুরাণ রুদ্রসংহিতা
“শ্রবণং কীর্তনং চৈব স্মরণং সেবনং তথা।
দাস্য তথার্চনং দেবি বন্দনং মম সর্বদা।।
সখ্যমাত্মার্পণং চেতি নবাঙ্গানি বিদুর্বুধাঃ।” ---------- শিবপুরাণ রুদ্রসংহিতা
শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, সেবন, দাস্য, অর্চন, সর্বদা শিব বন্দনা, সখ্য এবং আত্মসমর্পণ। এছাড়াও ভক্তির বিভিন্ন উপাঙ্গও রয়েছে।
=> যে ব্যক্তি স্থির হয়ে সমগ্র মনকে শিবকেন্দ্রিক করে আসনে উপবেশন করে শরীর ও মনের দ্বারা শিবকথা শিব কীর্তনে শ্রদ্ধা ও সম্মান জ্ঞাপন করে প্রসণ্ণতাপূর্বক সেই অমৃত সমান কথা-কীর্তন রস পান করেন তার সেই সাধনাকে বলা হয়ে থাকে শ্রবণ।
=> যিনি তার হৃদাকাশে মহাদেব মহেশ্বরের দিব্য জন্ম-কর্ম-লীলা চিন্তা করে প্রেমভরে তা উদাত্তকণ্ঠে গীত করেন তার এই ভজন সাধনকে বলা হয় কীর্তন।
=> নিত্য মহাদেব পরমপুরুষ তৎপুরুষ মহেশ্বরকে সর্বদা ও সর্বত্র ব্যাপক (সকল বস্তুর মধ্যেই তিনি বিদ্যমান) জেনে যিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সব সময়ে নির্ভয়ে থাকেন তার সেই ভক্তিকে বলা হয়ে থাকে স্মরণ।
=> অরুণোদয় থেকে শুরু করে সব সময়ে প্রভুর কৃপাকে বা তার অনুকূলতাকে মনে রেখে মন-বুদ্ধি-চিত্ত-হৃদয় এবং ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা নিরন্তর মহেশ্বরের সেবা করা হয় তাকেই সেবন নামক ভক্তি বলা হয়।
=> নিজেকে প্রভুর সেবক মনে করে অন্তর থেকে সর্বদা প্রভূ ভোলানাথের প্রিয় সম্পাদন করাকে দাস্য বলা হয়।
=> নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী শাস্ত্রীয় বিধি দ্বারা পরমাত্মারূপী আমাকে সর্বদা পাদ্য-অর্ঘ্য ইত্যাদি ষোড়শোপচারে বা পুষ্প-গন্ধ ইত্যাদি পঞ্চোপচারে পূজন করাকেই অর্চন বলা হয়ে থাকে।
=> অন্তরে ধ্যান ও বাক্য দ্বারা স্তোত্র বন্দনামূলক মন্ত্রাদির পাঠ করতে করতে শরীরের আট অঙ্গে ভূমি স্পর্শ করে ইষ্টদেবকে নমস্কার করাকে বলা হয় বন্দন।
=> প্রাণেশ্বর মহাদেব মহেশ্বর মঙ্গল-অমঙ্গল যা কিছুই সংঘটিত করেন না কেন তা ভক্তের মঙ্গল সাধনের জন্য অন্তরের এই রকম দৃঢ় ভক্তিকে বলা হয়ে থাকে সখ্য।
=> দেহ ইত্যাদি যা কিছু বস্তু নিজের বলে মনে করা হয়, সেই সমস্ত কিছু ভগবানের প্রসন্নতার জন্য তাকে সর্ব সমর্পণ করে নিজের জন্য কিছুই না রাখাকে এমনকি শরীর নির্বাহের চিন্তা রহিত হওয়াকে বলে আত্মসমর্পণ।
শিবশক্তির এই হল নয়টি অঙ্গ। এই গুলি ভোগ ও মোক্ষ প্রদানকারী। এর দ্বারা জ্ঞান প্রকাশিত হয় এবং ভক্ত বিজ্ঞানী হয়ে ওঠে।
=> যিনি তার হৃদাকাশে মহাদেব মহেশ্বরের দিব্য জন্ম-কর্ম-লীলা চিন্তা করে প্রেমভরে তা উদাত্তকণ্ঠে গীত করেন তার এই ভজন সাধনকে বলা হয় কীর্তন।
=> নিত্য মহাদেব পরমপুরুষ তৎপুরুষ মহেশ্বরকে সর্বদা ও সর্বত্র ব্যাপক (সকল বস্তুর মধ্যেই তিনি বিদ্যমান) জেনে যিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সব সময়ে নির্ভয়ে থাকেন তার সেই ভক্তিকে বলা হয়ে থাকে স্মরণ।
=> অরুণোদয় থেকে শুরু করে সব সময়ে প্রভুর কৃপাকে বা তার অনুকূলতাকে মনে রেখে মন-বুদ্ধি-চিত্ত-হৃদয় এবং ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা নিরন্তর মহেশ্বরের সেবা করা হয় তাকেই সেবন নামক ভক্তি বলা হয়।
=> নিজেকে প্রভুর সেবক মনে করে অন্তর থেকে সর্বদা প্রভূ ভোলানাথের প্রিয় সম্পাদন করাকে দাস্য বলা হয়।
=> নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী শাস্ত্রীয় বিধি দ্বারা পরমাত্মারূপী আমাকে সর্বদা পাদ্য-অর্ঘ্য ইত্যাদি ষোড়শোপচারে বা পুষ্প-গন্ধ ইত্যাদি পঞ্চোপচারে পূজন করাকেই অর্চন বলা হয়ে থাকে।
=> অন্তরে ধ্যান ও বাক্য দ্বারা স্তোত্র বন্দনামূলক মন্ত্রাদির পাঠ করতে করতে শরীরের আট অঙ্গে ভূমি স্পর্শ করে ইষ্টদেবকে নমস্কার করাকে বলা হয় বন্দন।
=> প্রাণেশ্বর মহাদেব মহেশ্বর মঙ্গল-অমঙ্গল যা কিছুই সংঘটিত করেন না কেন তা ভক্তের মঙ্গল সাধনের জন্য অন্তরের এই রকম দৃঢ় ভক্তিকে বলা হয়ে থাকে সখ্য।
=> দেহ ইত্যাদি যা কিছু বস্তু নিজের বলে মনে করা হয়, সেই সমস্ত কিছু ভগবানের প্রসন্নতার জন্য তাকে সর্ব সমর্পণ করে নিজের জন্য কিছুই না রাখাকে এমনকি শরীর নির্বাহের চিন্তা রহিত হওয়াকে বলে আত্মসমর্পণ।
শিবশক্তির এই হল নয়টি অঙ্গ। এই গুলি ভোগ ও মোক্ষ প্রদানকারী। এর দ্বারা জ্ঞান প্রকাশিত হয় এবং ভক্ত বিজ্ঞানী হয়ে ওঠে।
ভগবান বিশ্বকর্মাকে নিয়ে নানা অজানা গল্প জেনে নিন একনজরে
কে এই বিশ্বকর্মা?
স্বর্গের কারিগর - শিল্পী ও নির্মাতাদের দেবতা বিশ্বকর্মা। ব্রহ্মাপুত্র বিশ্বকর্মাই গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেন। ঈশ্বরের প্রাসাদের নির্মাতাও বিশ্বকর্মা। দেবতাদের রথ ও অস্ত্রও তৈরি করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই।
মহাভারত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলের শিল্পকলার দেবতা, সকল দেবতার প্রাসাদ, সকল প্রকার অলঙ্কারের নির্মাতা। বিবরণ অনুযায়ী তাঁর চার বাহু, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে জলের কলস, বই, দড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি যন্ত্র।
"ওঁ দংশপালঃ মহাবীরঃ সুচিত্রঃ কর্মকারকঃ।
বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃকতঞ্চ বাসনামানো দণ্ডধৃক।।
ওঁ বিশ্বকর্মণে নমঃ।"
ধ্যান ও প্রনাম মন্ত্র অনুসারে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার যে চিত্র পাওয়া যায়- তাতে তিনি একাধারে মহাবীর ও দয়াদি অষ্টগুন যুক্ত । তিনি সৃষ্টির নির্মাতা ও ধাতা । তিনি মান দণ্ড ধারী মহাশিল্পী। আবার তিনি মহাযোদ্ধা।
ঋক্ বেদের দশম মণ্ডলের দুটি সুক্তে ( ৮১, ৮২) বিশ্বকর্মার স্তুতি পাওয়া যায়। সেই ভাবার্থ অনুসারে - দ্যুলোক ও ভূলোক উভয়ই প্রথমে জলাকার ও সম্মিলিত ছিল। ক্রমে উভয়েরই চতুঃসীমা যতই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তারা পরস্পর দূরবর্তী হতে হতে ক্রমে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায় । সুধীর বিশ্বকর্মা মনে মনে চিন্তা ও উত্তম রূপে নিরীক্ষণ করে এই বিরাট সৃষ্টি চক্র প্রবর্তন করেন। এই বিশ্ব তাঁরই কর্ম বলে তিনি বিশ্বকর্মা।
বেদে যিনি মুখ্যতঃ বিশ্বস্রষ্টা , পুরানে তাঁকে দেখি দেবশিল্পী হিসাবে। তিনি "কর্তা শিল্প সহস্রাণাম" অর্থাৎ তিনি সহস্র শিল্পের অধিকর্তা।
তিনি "দেবানাং কার্য্যসাধকঃ" অর্থাৎ দেবতাদের শিল্পের কার্য্য সাধক। বিশ্বকর্মার জন্ম বিষয়ে পুরানে নানা আখ্যানের অবতারনা করা হয়। কোনো পুরান মতে তাঁর জন্ম অষ্টবসুর অন্যতম প্রভাসের ঔরসে দেবগুরু বৃহস্পতির ভগিনী বরবর্ণিনীর গর্ভে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান মতে প্রজাপতি ব্রহ্মার নাভিদেশ থেকে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি বলে লেখা আছে। বেদে এই বিশ্বকর্মাকে অজাত পুরুষ বা সনাতন পুরুষ রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশ্বকর্মা নানান শিল্প রচনা করেন। কুবেরের মহল, স্বর্গের দেবসভা, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা পুরী, জগন্নাথের বিগ্রহ, রাবনের স্বর্ণ লঙ্কা, ভগবান শিবের ধনুক, ত্রিশূল- সব এঁনার সৃষ্টি। এছাড়া মার্কণ্ড পুরানে দেখতে পাই ইনি দেবীকে অভেদ্য কবচ, পরশু ও নানান অস্ত্র প্রদান করেছিলেন। বিশ্বকর্মার হস্তে দাঁড়িপাল্লা থাকে। দাঁড়িপাল্লার দুটি পাল্লা জ্ঞান ও কর্মের প্রতীক। উভয়ের সমতা বজায় রেখেছেন তিনি। এছাড়া তিনি হাতুরী ধারন করেন- যা শিল্পের সাথে জড়িত। তিনি যে শিল্পের দেবতা।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বিশ্বকর্মা দেবতাদের শিল্পী। তিনি দেবশিল্পী নামে পরিচিত। বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা তাঁর মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস তাঁর পিতা। বিশ্বকর্মার বাহন হাতি।
বিশ্বকর্মা বৈদিক দেবতা, ঋগবেদের ১০ম মণ্ডলে ৮১ এবং ৮২ সূক্তদ্বয়ে বিশ্বকর্মার উল্লেখ আছে। ঋগবেদ অনুসারে তিনি সর্বদর্শী এবং সর্বজ্ঞ। তাঁর চক্ষু, মুখমণ্ডল, বাহু ও পদ সবদিকে পরিব্যাপ্ত। তিনি বাচস্পতি, মনোজব, বদান্য, কল্যাণকর্মা ও বিধাতা অভিধায় ভূষিত। তিনি ধাতা, বিশ্বদ্রষ্টা ও প্রজাপতি।
বিশ্বকর্মার কিছু অমর সৃষ্টি -
—————————————
হিন্দু পুরাণ জুড়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার বিভিন্ন নির্মাণ। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি-চার যুগ ধরে ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার অমর কীর্তিরা। সত্যযুগে বিশ্বকর্মা তৈরি করেছিলেন স্বর্গলোক। এই প্রাসাদ থেকেই দেবরাজ ইন্দ্রের মর্ত্যলোক শাসন করতেন। ত্রেতা যুগে বিশ্বকর্মা সৃষ্টি করেন সোনার লঙ্কা। দ্বাপর যুগে সৃষ্টি করেন দ্বারকা। কলিযুগে বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ।
***সোনার লঙ্কা -
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ত্রেতা যুগে রাবণ রাজার রাজধানী ছিল সোনার লঙ্কা। পার্বতীর সঙ্গে বিয়ের পর মহাদেব প্রাসাদ নির্মাণের ভার দেন বিশ্বকর্মাকে। স্বর্ণপ্রাসাদ নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। গৃহপ্রবেশের পুজোর জন্য রাবণ রাজাকে আমন্ত্রণ জানান মহাদেব। পুজোর পর দক্ষিণা স্বরূপ মহাদেবের কাছে স্বর্ণলঙ্কা চান রাবণ। রাবণের হাতে স্বর্ণলঙ্কা তুলে দেন মহাদেব। সেই থেকেই রাবণের রাজধানী স্বর্ণলঙ্কা।
***দ্বারকা -
দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি। মহাভারতে দ্বারকাই কৃষ্ণের কর্মভূমি হিসেবে উল্লিখিত। হিন্দুদের অন্যতম দর্শনীয় ও পূজনীয় শহর দ্বারকা।
***হস্তিনাপুর -
কলিযুগে কৌরব ও পাণ্ডবদের রাজধানী হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে হস্তিনাপুরে অভিষিক্ত করেন কৃষ্ণ।
***ইন্দ্রপ্রস্থ -
পাণ্ডবদের শহর ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই। পাণ্ডবদের থাকার জন্য এক টুকরো জমি দিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। সেই খাণ্ডবপ্রস্থে ভাইদের সঙ্গে থাকতেন যুধিষ্ঠির। পরে খাণ্ডবপ্রস্থে রাজধানী নির্মাণের জন্য বিশ্বকর্মাকে আমন্ত্রণ জানান কৃষ্ণ। তৈরি হয় ইন্দ্রপ্রস্থ। এই ইন্দ্রপ্রস্থ ছিল মায়ানগরী। প্রাসাদের মাটি দেখলে মনে হত যেন স্বচ্ছ্ব জল টলটল করছে। পুকুরের স্বচ্ছ্ব জলের মধ্যে দিয়ে আয়নার মতো চকচক করতো মাটি। প্রাসাদ তৈরির পর পাণ্ডবদের নিমন্ত্রণ রক্ষায় ইন্দ্রপ্রস্থে যান কৌরবরা। মায়ানগরীর মায়া বুঝতে না পেরে পুকুরের জলে পড়ে যান দুর্যোধন। তাকে পড়ে যেতে দেখে হেসে উঠেছিলেন দ্রৌপদী। অন্ধ বাবার অন্ধ ছেলে বলে দুর্যোধনকে অপমান করেন দ্রৌপদী। এই ঘটনা থেকেই সূত্রপাত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের।
বিশ্বকর্মা বিশ্বভুবন নির্মাণ করেন। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকেয়র শক্তি প্রভৃতি তিনি তৈরি করেছেন। শ্রীক্ষেত্রর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনি নির্মাণ করেছেন।
বিশ্বকর্মা পূজা হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আশিস কামনায় এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকর্মা চতুর্ভুজ ও গজারূঢ়। তাঁর আকৃতি অনেকটা কার্তিকের মতো।
ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়। কলকারখানায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে বিশ্বকর্মার পূজা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য দেব-দেবীর মতোই মূর্তি গড়ে অথবা ঘটে-পটে বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়। সূতার-মিস্ত্রিদের মধ্যে এঁর পূজার প্রচলন সর্বাধিক। তবে বাংলাদেশে স্বর্ণকার, কর্মকার এবং দারুশিল্প, স্থাপত্যশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিগণও নিজ নিজ কর্মে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকেন। এ সময় প্রত্যেকের ঘরে বিশেষ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয় এবং কোথাও কোথাও পূজার পরে ঘুড়ি ওড়ানো হয়।
সমগ্র ভারতবর্ষে নয়, বিশ্বকর্মা পুজো মূলত অসম, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড (দেরাদুন)-এর কিছু কিছু অঞ্চলে পালিত হয়। ভারতবর্ষের বিশ্বকর্মা একটি দলিত সম্প্রদায়ের নাম, বিশ্বকর্মা সেই সম্প্রদায়ের আদিম-সভ্য পুরুষ।। বিশ্বকর্মা পিছিয়ে-পড়া এক জনজাতির ঐতিহাসিক এবং অপ্রতিরোধ্য প্রতিভার বিরল দৃষ্টান্তবিশেষ।
বিশ্বকর্মা যে শুধু কর্মে সুদক্ষ তা নয়, তিনি বেশ কিছু গ্রন্থও লিখে রেখে গেছেন উত্তরসূরীদের জন্য। এবার আলোচনা করব বিশ্বকর্মার লেখক-প্রতিভা এবং লেখালেখি বিষয়ে।
বিশ্বকর্মার রচিত স্থাপত্যশিল্প বিষয়ক গ্রন্থটির নাম "বাস্তুশাস্ত্রম"। "মানসার" এবং "ময়মতম" গ্রন্থে বস্তু ও বাস্তু শব্দদুটিকে সমার্থক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। 'বস্তু' শব্দ থেকে 'বাস্তু' কথাটা এসেছে। 'বাস্তু' শব্দের অর্থ পৃথিবী। ব্যাপক অর্থে সমস্ত প্রাণীর আবাসস্থলই বাস্তু। অর্থাৎ, স্রষ্টার যে-কোনো সৃষ্টিই বাস্তু। কাজেই শুধু পরিকল্পিত মনুষ্যগৃহই নয়, দেবতা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর আবাসকেই বাস্তু বলে। বাস্তুশাস্ত্রে বাস্তু শব্দের অর্থ ব্যাপক। এই শিল্পকে নির্মাণ শিল্পকে না-বুঝিয়ে পরিকল্পনা, নির্মাণ, চিত্র, অলংকরণ, স্বর্ণ-চর্ম-বয়নশিল্প, অস্ত্রশিল্প, পোতনির্মাণ, মূর্তিনির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত আছে।
পুরাণে উল্লেখ আছে, চারটি বেদের মতো চারটি উপবেদও আছে। উপবেদগুলি হল আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ এবং স্থাপত্যবেদ। এই উপবেদ স্থাপত্যবিদ্যা বা বাস্তুবিদ্যার রচয়িতা হলেন বিশ্বকর্মা। বলা হয় তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রধান বাস্তুকার। তাঁর রচিত অন্তত দশখানি পুথি এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে মৎস্যপুরাণের ২৪২ থেকে ২৪৭ অধ্যায়, অগ্নিপুরাণের ১০৪ থেকে ১০৬ অধ্যায়, গরুড়পুরাণের ৪৬ থেকে ৪৭ অধ্যায়, ভবিষ্যপুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণের তৃতীয় খণ্ড, বিভিন্ন আগম, শুক্রনীতিসারের চতুর্থ অধ্যায়, বৃহসংহিতা, গৃহ্যসূত্র, অর্থশাস্ত্র প্রভৃতিতে বাস্তুশাস্ত্রের আলোচনা পাই। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় গণপতিশাস্ত্রী বাস্তুবিদ্যা বা বাস্তুশাস্ত্রম গ্রন্থটি আবিষ্কার করে মুদ্রিত করেন। বিশ্বকর্মার নামে প্রচলিত বাস্তুশাস্ত্রটির নাম "বিশ্বকর্মাবাস্তুশাস্ত্রম"।
আর্যাবর্তের শিল্পধারা বিশ্বকর্মার দ্বারা প্রবর্তিত বলে মনে করা হয়। বিশ্বকর্মার "বাস্তুশাস্ত্রম"-এর প্রথমেই বলা হয়েছে, জগতের কল্যাণ কামনায় এই শাস্ত্র প্রচার করছেন - "বাস্তুশাস্ত্রং প্রবক্ষ্যামি লোকানাং হিতকাম্যয়া"। বিশ্বকর্মার নামে এরকম গ্রন্থ অন্ততপক্ষে দশটি পাওয়া গেছে।
কী আছে "বাস্তুশাস্ত্রম" গ্রন্থটিতে?
————————————————
সুপরিকল্পিতভাবে গৃহনির্মাণ, গ্রাম ও নগরের পত্তনের নিয়মাবলি এবং বিধিনিষেধ তাঁর গ্রন্থটিতে পাওয়া যায়।
বিশ্বকর্মা রচিত এই গ্রন্থে গৃহ, মন্দির, গ্রাম, নগর, যন্ত্র প্রভৃতির বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়। এই গ্রন্থের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল -
(১) সর্বপ্রথম গৃহারম্ভের কাল পরীক্ষা, উপকরণ সংগ্রহ, জমি পরীক্ষা, বিভিন্ন দিক নির্ণয়, ভবন লক্ষণ প্রভৃতি বিভিন্ন পরিচ্ছেদে আলোচিত হয়েছে।
(২) বাসযোগ্য গৃহ ছাড়াও বিদ্যালয়, চিকিৎসালয়, সর্বসাধারণের ব্যবহার্য গৃহ, পাকশালা, শৌচাগার, পুষ্করিণী, উদ্যান প্রভৃতি কোনদিকে থাকবে, আলো-বাতাস প্রবেশের কীরকম হবে, সবই সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে।
(৩) বিশ্বকর্মার খ্যাতি পুরাণাদিতে দেবশিল্পী হিসাবে পাওয়া যায়। বিভিন্ন মন্দির ও তার উপকরণ প্রভৃতির বিস্তৃত আলোচিত হয়েছে। মন্দিরের কাজে ব্যবহারের জন্য আট প্রকার কাঠ এবং সাধারণ গৃহস্থদের গৃহনির্মাণের জন্য তেইশ প্রকারের কাঠের ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। কাঠগুলি কাটার পর পনেরো দিন জলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখলে তাতে পোকা ধরবে না। এই প্রসঙ্গে বিশ্বকর্মা লিখেছেন - "কাষ্ঠং নো ভক্ষ্যতে কীটের্যদি পক্ষং ধৃতং জলে"।
(৪) দেওয়ালের প্রস্থ ও উচ্চতা, ভিতের গভীরতা, দরজা ও জানালার পৃথক পৃথক মাপের বর্ণনাও এই গ্রন্থটিতে পাওয়া যায়।
ভারতীয় স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসে বিশ্বকর্মার "বাস্তুশাস্ত্রম" গ্রন্থটির অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। ইতিহাসের উপাদান হিসাবে "বাস্তুশাস্ত্রম" এক অমূল্য সম্পদ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মশাস্ত্র বেদে মাত্র তেত্রিশটি দেবতার উল্লেখ থাকলেও হিন্দুরা বিশ্বাস করেন তাদের দেবতা তেত্রিশ কোটি। অবশ্য বেশির ভাগ দেবতা স্বর্গে বাস করলেও বেশ কিছু দেবতা এই ধরাধামেই বসবাস করতেন বলে কেউ কেউ মনে করেন। এদেরই একজন দলিত গোষ্ঠীভুক্ত দেবতা বিশ্বকর্মা তথা বিশ্বকর্মা ঠাকুর। ইনার জন্য সারা বছরে একদিন মাত্র নির্ধারণ করেছেন শ্রমজীবী ভক্তেরা। ইনি নিরুপদ্রব দেবতা। ইনি ক্রোধী নন, বদমেজাজি নন।ইনি পুজো পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে বাঁশ নিয়ে দৌড়ে বেড়াননি। ইনাকে ভয় পেয়ে সাধারণ মানুষ তটস্থ হয়ে থাকেন না। ইনিও কার্তিক ঠাকুরের মতো ঘরের ছেলে। ভাদ্র মাসের ৩১ তারিখে ইনি পূজিত হন। আগের আষাঢ়-শ্রাবণ মাসটা তুমূল বর্যাকাল।এ সময় কোনো কার্য নির্মাণ করা যায় না। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে সমস্ত মানুষের হাতে প্রচুর টাকাপয়সা আসে, সেইসঙ্গে বৃষ্টি-বাদলার উৎপাতও নেই। অতএব নির্মাণশিল্পের স্রষ্টা তথা গুরু বিশ্বকর্মাকে স্মরণ করে ঝাঁপিয়ে পড়ো কর্মযজ্ঞে।
হস্তীকে দেবশিল্পীর বাহন বলা হয় । বিশ্বকর্মার মন্ত্রে দেবশিল্পীকে "মহাবীর" বলা হয় । হস্তীর মহাবলের কথা সর্বজন সুবিদিত। এই দিকে থেকে হস্তী বাহন হিসাবে যথা উপযুক্ত । এছাড়া হাতী দিয়ে কাজ করানোর কথা অতি প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে । কর্ম- কর্মের ফলে শিল্পের বিকাশ । আর বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পের দেবতা। তাই কর্মঠ হস্তী তাঁর বাহন ।
আসুন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার চরণে প্রার্থনা জানিয়ে বলি-
ওঁ দেবশিল্পি মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক।
বিশ্বকর্মন্নমস্তূভ্যং সর্বাভীষ্টপ্রদায়ক।
মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
অগ্নিদেবতাকে সাক্ষী রেখে সাত পাকে বাধা বিয়ের সবচেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম।


☆❀হরে কৃষ্ণ❀☆
অগ্নিদেবতাকে সাক্ষী রেখে সাত পাকে
বাধা বিয়ের সবচেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম।
জানেন কি শুধু আগুনের চারপাশে ঘোরাই
নয়, এই সময়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিতে হয়
একে অপরকে।☞জেনে নিন সাত পাক ঘোরার
সময় যে সাতটি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ঃ-
☞১ম প্রতিশ্রুতি- প্রথমে বর তাঁর বউ এবং তাঁর
ভাবী সন্তানদের যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি
দেন।
বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি
তাঁর স্বামী এবং তাঁর পরিবারের যত্ন
নেবেন।
☞২য় প্রতিশ্রুতি- এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে
তিনি তাঁর স্ত্রীকে সবরকম পরিস্থিতি
থেকে রক্ষা করবেন।
বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি
স্বামীর সবরকম যন্ত্রণায় পাশে থাকবেন।
☞৩য় প্রতিশ্রতি- এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে
তিনি তাঁর পরিবারের জন্য রোজগার করবেন
এবং তাঁদের দেখভাল করবেন।
একই প্রতিশ্রুতি এবার কনেও করেন।
☞৪র্থ প্রতিশ্রুতি- স্ত্রীর কাছে তাঁর
পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া এবং
একইসঙ্গে স্ত্রীর সমস্ত মতামতকে গুরুত্ব
দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বর।
স্ত্রী তাঁর সমস্ত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন
করার প্রতিশ্রুতি দেন।
☞৫ম প্রতিশ্রুতি- যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে
স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি
দেন বর।
স্বামীকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দেন
স্ত্রী।
☞৬ষ্ঠ প্রতিশ্রুতি- স্ত্রীর প্রতি সত্য থাকার
প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী।
স্ত্রীও স্বামীর প্রতি সত্য থাকার
প্রতিশ্রুতি দেন।
☞৭ম প্রতিশ্রুতি- শুধু স্বামী হিসেবেই নয়, বন্ধু
হিসেবেও সারাজীবন স্ত্রীর সঙ্গে
থাকার প্রতিশ্রুতি দেন বর।
বিনিময়ে স্ত্রীও স্বামীর সঙ্গে জীবনের
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
জয় সনাতন
সতীদাহ কি হিন্দু ধর্মের প্রথা ?


#পুরো_পোস্টটি_মনোযোগ_সহকারে_পড়ার_অনুরোধ_রইল
















এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)