বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

Who is Allah বা কে আল্লা ?

হে নবী, ওদেরকে বলো, আমি কেবল মক্কার অধিষ্ঠাতা আল্লাহর আরাধনা করতে আদিষ্ট হয়েছি (কোরান, ২৭/৯১)। এখানে, মক্কার কোন আল্লার কথা বলা হয়েছে ? জানতে হলে পড়ুন এই পোস্টটি।
মুসলমানরা নিজেরা যেমন আল্লাকে ভয় পায়, তেমনি অন্যকেও সেই আল্লার ভয় দেখায়, যেন আল্লা একটা সাংঘাতিক ভয়ংকর জাতীয় কিছু, সাংঘাতিক ভয়ংকর তার ক্ষমতা!
বাংলাদেশের এক বিখ্যাত সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চোধুরী 2015 সালের জুলাই মাসে একবার বলে ফেললো, ‘হযরত মুহম্মদ ‘আল্লাহ’ নামটি নিয়েছিলেন প্যাগানদের এক দেবতার নাম থেকে’। এখানে উল্লেখ্য যে, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে মক্কায় যারা মূর্তি পূজা করতো তাদেরকে বলা হয় প্যাগান।
গাফফারের ওই কথা শুনে মুসলমানদের মধ্যে সে কী প্রতিক্রিয়া ! না, এটা হতেই পারে না, নবী, মুশরিকদের দেবতার নাম থেকে আল্লার নাম নেবে কেনো ? এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, তাই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লা শব্দটি আছে, হযরত মুহম্মদ সাল্লায়লাহু ওয়া সাল্লাম প্যাগানদের দেবতার থেকে আল্লা নাম নিতে যাবে কেনো ? গাফফার নাস্তিক হয়ে গেছে, ও কাফের মুশরিক, ওকে হত্যা করা দরকার, ইত্যাদি ইত্যাদি।
যে সত্য কথা বলে বা সত্যকে ধারণ করে, মুসলমানদের কাছে সে ই- নাস্তিক, কাফের, মুরতাদ; কারণ, আগা গোড়া সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর মুসলমানদের বসবাস, তাই সত্য কথা শুনলেই তাদের গা জ্বালা করে, এলার্জি বেড়ে যায়; কারণ, প্রকৃত সত্য ও মুসলমান দুটাই সম্পূর্ণ বিপরীতর্মী দুটো ব্যাপার।
আমার লেখায় আমি ইসলামের গোমর ফাঁস করি ব’লে মুসলমানদের সেটা সহ্য হয় না, কিন্তু তারা তার জবাব লেখার মাধ্যমে দিতে না পেরে পাইকারিভাবে রিপোর্ট করে, ফলে আমার কোনো আই.ডি ই আমি বেশিদিন চালাতে পারি না, মাঝে মাঝেই ব্লক হয়ে যাই। আমি জানি এই পোস্টের জন্যও হাজার হাজার রিপোর্ট পড়বে এবং আইডি ব্লক হবে, কিন্তু তবু সত্য প্রকাশ থেকে আমি বিরত হবো না; কারণ, ইসলামের রীতি ই তো, যে সত্য প্রকাশ করবে সেটা যদি মুহম্মদের বিরুদ্ধে যায় তাকে হত্যা করে তার মুখ বন্ধ করা, সেক্ষেত্রে এরা না হয় আমার শুধু আই.ডি ই ব্লক করতে পারছে, এটা এমন আর কী ক্ষতির বিষয় ?
কিন্তু এইসব হিজড়েপনা বাদ দিয়ে প্রকৃত পুরুষের মতো কাজ করার জন্য মুসলমানদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, এই পোস্টে আমি যেসব যুক্তি তুলে ধরবো, প্রত্যেকটার রেফারেন্সসহ পাল্টা যুক্তি তুলে ধরতে পারলে, আমি কথা দিচ্ছি ইসলামের বিরুদ্ধে লিখা আমি বন্ধ করে দেবো; শুধু তাই ই নয় ইসলামের বিরুদ্ধে আমার যত পোস্ট আছে সবগুলোর যুক্তি খণ্ডন যদি মুসলমানরা করতে পারে ইসলাম গ্রহন করে আমি মুসলমান হয়ে যাবো। কাপুরুষের মতো পেছন থেকে ছুরি মেরে আইডি ব্লক করার জন্য রিপোর্ট না করে পুরুষ হওয়ার জন্য তোদেরকে একটা সুযোগ দিলাম, চেষ্টা করে দ্যাখ।
অনেকেই জানেন যে, কাবা একসময় মন্দির ছিলো এবং তাতে ৩৬০টি দেব-দেবীর মূর্তি ছিলো, কুরাইশদের সাথে ১০ বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি থাকা সত্ত্বেও, মাত্র ২ বছরের মাথায় সেই চুক্তি ভঙ্গ ক’রে, কুরাইশদেরকে কোনো পূর্ব সিগন্যাল না দিয়ে অর্থাৎ কুরাইশদের অপ্রস্তুত অবস্থায়, মুহম্মদ জনশক্তির জোরে প্রথমে রাতের বেলা মক্কা আক্রমন ক’রে কাবা দখল করে এবং পরদিন নিজের হাতে কাবার মধ্যে থাকা মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলে। এই ৩৬০টি দেব-দেবীর মধ্যে প্রধান দেবতা ছিলো মহাদেব শিব। এই মহাদেব শিব যে কত গুরুত্বপূর্ণ দেবতা ছিলো, তার প্রামন পাবেন নিচের এই ঘটনায়-
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে ‘মাকতেব-এ-সুলতানিয়া’ নামের একটি গ্রন্থাগার আছে, যেখানে পশ্চিম এশিয়ার অনেক পুঁথি রাখা আছে। এরকম একটি পুঁথির নাম ‘সায়র-উল-ওকুল’, যার মধ্যে প্রাক ইসলামী যুগের আরবের অনেক কবিদের কবিতা আছে। সেই গ্রন্থে মুহম্মদের এক চাচা, ‘উমর-বিন-হাসনাম’ এর একটি কবিতা আছে; এই কবিতাটি একবার মক্কার নিরকটবর্তী ওকাজের মেলায় শ্রেষ্ঠ কবিতা বলে বিবেচিত হয়েছিলো। নিচে কবিতাটির প্রথম ৬ লাইন আরবিতে এবং পরে তার বাংলায় অনুবাদ দেখে নিন:
“ওয়া আহলোলাহা আজাহু আর্মিমান মহাদেব ও,
মানাজেল ইলামুদ্দিনে মিনজুম ওয়া সয়াত্তারু,
ওয়া সাহাবি কেয়ম ফিম কামিল হিন্দে ইয়োমান,
ওয়া ইয়াকুলুন লাতাহাজান ফৈন্নাক তারাজ্জারু,
মায়াসেয়ারে আখলাকান হাসনান কুল্লাহুম,
নাজমুল অজ্জাত্ সুম গবুল হিন্দ।"
এর অর্থ- যদি কেউ একবার শ্রদ্ধাভরে মহাদেব এর পূজা করে, তবে সে ন্যায় ও আধ্যাত্মিকতার চরম শিখরে পৌঁছতে পারে। হে প্রভু, তুমি আমার এই জীবন নিয়ে নাও, বদলে আমার এই প্রার্থনা পূরণ কর যে, আমি অন্তত পক্ষে একদিনের জন্যও হিন্দে (ভারতে) যেতে পারি এবং সেখানকার আধ্যাত্মিকতার পবিত্র পরিবেশে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি। কারণ, হিন্দে তীর্থ করার ফলে মানুষ অনেক মহৎ কাজ করার পুন্য অর্জন করে এবং সেখানকার পুন্যাত্মা শিক্ষকের স্পর্শে জীবন ধন্য করতে পারে।”
আপনার অনেকেই জানেন, মহাদেব শিব এর মাথায় শোভা পায় চন্দ্র। এই চন্দ্রের আরেক বাংলা নাম ‘সোম’, এই সূত্রেই কোথাও কোথাও শিবের মন্দিরকে বলা হয় সোমনাথের মন্দির, যার মধ্যে একটি মন্দিরকে গজনীর সুলতান মাহমুদ ১৭ বার আক্রমন করে ধ্বংস করেছিলো। বাংলা সাত বারের নাম এসেছে আমাদের সৌরজগতের সাতটি গ্রহের নাম থেকে, এর মধ্যে ‘রবি’ হলো সূর্য আর ‘সোম’ মানে চন্দ্র, অন্য ৫টি নাম, ৫টি গ্রহের নামে। এই ৭ বারের নাম, মানব সভ্যতায় হিন্দু মুনি ঋষিদের অবদান; কারণ, এই বার প্রকরণ জ্যোতিষ শাস্ত্রের বিষয়, যে জ্যোতিষ শাস্ত্র বেদের একটি অংশ এবং যা পৃথিবীতে আছে প্রায় ৮/১০ হাজার বছর যাবৎ। সুতরাং সপ্তাহের ৭ বারের জন্য শুধু মুসলমানরা নয়, পৃথিবীর সকল জাতি হিন্দুদের কাছে ঋণী।
যা হোক, এই চন্দ্রের বাংলা প্রতিশব্দ যেমন সোম, তেমনি এর আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘আল্লাত’। শিবের মাথায় চন্দ্র থাকে বা থাকতো বলে আরব এলাকায় এর আরেক নাম ছিলো চন্দ্রের দেবতা বা ‘চন্দ্রদেবতা’। চাঁদ, পৃথিবীর প্রাচীন সমাজে ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, তখনও সৌর ক্যালেণ্ডার চালু না হওয়ায় দিন ও মাস গণনায় এবং বিকল্প আলোর ব্যবস্থা না থাকায় রাতের আঁধার কাটাতে চন্দ্রের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম এবং একারণেই মুহম্মদ তার ইসলামে চাঁদের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে; এজন্যই এই আধুনিক যুগেও যেখানে চাঁদের আর কোনো দরকারই নেই, সেখানেও প্রাচীন ধ্যান ধারণার অধিকারী মুসলমানরা চাঁদ না দেখে রোযা ও ঈদ পালন করতেই পারে না। কেননা, মুহম্মদ যেহেতু বলে গেছে যে, "তোমরা চাঁদ দেখে রোযা ও ঈদ পালন করো"। এইসব মুহম্মদীয় আদেশ নির্দেশের প্রকৃত কারণ না বোঝার কারণেই, এই আধুনিক যুগে বাস করেও মুসলমানরা কোনোদিনই আধুনিক হতে পারে নি আর পারবেও না। কারণ, মুসলমানরা এইটুকুও বোঝে না যে, তখন দিনের হিসেব রাখার জন্য মুহম্মদ চাঁদ দেখে রোযা ও ঈদ পালন করার কথা বলে গেছে; কেননা, তখন দিন ও মাসের হিসেব রাখার জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। কিন্তু গরু খেয়ে খেয়ে গরুতে পরিণত হওয়ায় এসব যুক্তি তাদের মাথায় ঢোকে না, আর যাদের মাথায় এসব ঢোকে, আর যখন তারা এসব বলতে যায়, তখনই তারা মুসলমানদের চোখে হয়ে যায়- নাস্তিক, কাফের, মুরতাদ; মুসলমানদের ভবিষ্যত কী ?
অবশ্য মুসলমানদের ভবিষ্যতের দরকারই বা কী ? জিহাদের নামে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ আর নাস্তিকদের কুপিয়ে মারতে পারলেই তো তাদের ৭২ হুর সমৃদ্ধ বেহেশত নিশ্চিত, সাথে গেলমান নামের কিছু হিজড়াও ফ্রি; পৃথিবীতে মুসলমানদের উদ্দেশ্যই তো এটাই- জিহাদে গিয়ে মরা অথবা মারা। কোনোটাতেই তাদের কোনো লস নেই। বেঁচে থাকলে গনিমতের নামে লুটের মাল আর তার মধ্যে অমুসলিম নারী, আর মরে গেলে তো বেহেশতের ৭২ ন্যাংটা হুর।
যা হোক, শিবের মাথায় চন্দ্র থাকার কারণেই আরবদের মধ্যে, কাবায় রক্ষিত চন্দ্রদেবতা, তাদের কাছে প্রধান দেবতা হয়ে উঠেছিলো এবং চন্দ্রের আরবি নাম ‘আল্লাত’ থেকে বিবর্তিত হতে হতে আস্তে আস্তে ঐ দেবতার নাম হয়ে উঠেছিলো আল্লা বা আল্লাহ, যে আল্লাহকে মুহম্মদ তার আল্লাহ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিলো কিন্তু তার মূর্তিকে করেছিলো অস্বীকার এবং প্রচার করেছিলো- আল্লা নিরাকার, তার কোনো মূর্তি নেই; যে কথাটি গাফফার চৌধুরী বলে লতিফ সিদ্দিকীর মতো এক প্রকার প্রায় ফেঁসে যেতে লেগেছিলো। যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি, বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী আমেরিকায় গিয়ে হজ বিরোধী মন্তব্য করায় এখন জেলে, জেল থেকে সে কোনোদিন মুক্তি পাবে কি না সন্দেহ, আর মুক্তি পেলেও অন্ধ মুসলমানরা তাকে বাংলাদেশে বাঁচতে দেবে কি না সন্দেহ। বাঁচতে হলে লতিফকে তসলিমা নাসরিনের মতো বিদেশে গিয়েই বাস করতে হবে, ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলায় যে তসলিমা নাসরিন ১৯৯৩ সাল থেকে বিদেশে।
এখন কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, কাবার মধ্যে রক্ষিত প্রধান দেবতার নামই যে ছিলো আল্লা, তার প্রমান কী ? যাদের মনে এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাদেরকে দুটো প্রশ্ন করছি, আপনার কি মনে হয় তথ্য প্রমান যুক্তি যোগাড় না করেই এটা নিয়ে আমি লিখতে বসে গেছি ? আর রেফারেন্স ছাড়া এরকম একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়ের অবতারণা করে, এটাকে একটা রাবিশ পোস্ট বানানোর জন্য কি সময় নষ্ট করে লিখছি ? অপেক্ষা করুন, সব প্রমান পাবেন; কারণ, আমি যা বলি তা প্রমান করার ক্ষমতা আমার আছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যাচ্ছে, কাবায় রক্ষিত ঐ চন্দ্রদেবতা বা আল্লার তিনজন মেয়ে ছিলো এবং যাদের নাম ছিলো লাত, উজ্জা ও মানাত। এদের মূর্তি শুধু কাবার মধ্যেই ছিলো না, আরবের বিভিন্ন এলাকাতেও ছিলো এবং সেসব জায়গাতেও তারা পূজিত হতো। নাখালায় উজ্জার মূর্তি ছিলো, মুহম্মদের নির্দেশ খালেদ নামের এক মুসলমান সেই মূর্তি ধ্বংস করে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- লাত, উজ্জা ও মানাত ব’লে যাদের কথা বলা হচ্ছে এবং এদের পিতা হিসেবে যাকে বলা হচ্ছে, সে ই যে মুহম্মদের আল্লা বা তার নাম থেকেই যে মুহম্মদ আল্লা নামটি নিয়েছে, তার প্রমান কী ?
কোরানের ৫৩ নং সূরা, ‘আন নাজম’ এর ১৯, ২০ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
“এখন বলো, তোমরা কি এই ‘লাত’ ও ‘উজ্জা’ এবং তৃতীয় আর একটি দেবী ‘মানাত’ এর প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে কখনো কিছু চিন্তা-বিবেচনা করেছো ?”
সম্ভবত আল্লার নাম ভাঙিয়ে কোরানের বাণী হিসেবে মুহম্মদ এই প্রশ্নটি তার বিরোধী মক্কাবাসীকে করেছিলো। তখন মক্কাবাসী সম্ভবত এই উত্তর দেয় যে, কেনো, এরা তো আল্লার কন্যা। এর পর মুহম্মদ আবার আল্লার নাম ভাঙ্গিয়ে কোরানের বাণী হিসেবে বলে,
“তোমাদের জন্য কি পুত্রসন্তান! আর কন্যাগুলো শুধু আল্লার জন্য ?” (কোরান, ৫৩/২১)
এখানে কিন্তু স্পষ্টভাবে এই প্রশ্ন করা হচ্ছে যে, “কন্যাগুলো শুধু আল্লার জন্য?”
তাহলে এখানে কোন কন্যার কথা বলা হয়েছে এবং কোন আল্লার কন্যার কথা বলা হয়েছে ?
প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, মুহম্মদ যখন মক্কাবাসীকে এই প্রশ্ন করে যে, লাত, উজ্জা ও মানাত, এরা আসলে কারা ? মক্কাবাসী উত্তর দেয়, এরা আল্লার কন্যা। কিন্তু মানুষের তো সাধারণভাবে কন্যা ও পুত্র উভয়ই থাকে, তাই মুহম্মদ উল্টো প্রশ্ন করে, তোমাদের জন্য পুত্র সন্তান আর আল্লার জন্য শুধু কন্যা ? এই কথোপকথনের বিষয়টিই ৫৩নং সূরার ১৯, ২০ ও ২১ নং আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
আরেকটি ঐতিহাসিক তথ্য- মুহম্মদের যে বংশে জন্ম, বংশ পরম্পরায় সেই কুরাইশ বংশের কাছে ছিলো কাবার রক্ষণাবেক্ষণ ও কাবা উপলক্ষে মক্কায় আগত লোকজনের দেখা শোনা ও তাদের সেবাযত্নের ভার। মক্কায় একটি কূপ ছিলো, যাকে বলে জমজম কূপ, এই কূপের জলের জন্যই মক্কায় প্রথম জনবসতি গড়ে উঠে। ইসলামের ইতিহাস তো দখলের ইতিহাস। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দের আগে পৃথিবীতে ইসলামের নাম বা দুর্গন্ধ না থাকলেও, মুহম্মদ, তওরাত ও বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্বকে দখল করে কোরানের মধ্যে ঢুকিয়ে বললো আদম ও হাওয়া ই পৃথিবীর প্রথম মানব মানবী, যাদেরকে সৃষ্টি করেছিলো আল্লা। অথচ আদম ও হাওয়া পূর্ববর্তী সংস্করণ এ্যাডাম ও ইভের কাহিনীর যখন জন্ম, তখন কোরানের আল্লার জন্মই হয় নি। খ্রিষ্টানরা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে বলতো গড আর ইহুদিরা বলতো জেহোবা বা জিহোবা। তারপর, মুসারও পূর্ববর্তী নবী, যে মুসা ইহুদি ধর্মের জনক, সেই মুসার আগের নবী ইব্রাহিমকে দখল করার জন্য তার সম্পর্কে মুহম্মদ বলে,
“ইব্রাহিম না ছিলো ইহুদি, আর না ছিলো খ্রিষ্টান, বরং সে তো ছিলো একনিষ্ঠ মুসলিম।” (কোরান, ৩/৬৭)
অথচ মুসার আমলে ইসলাম এবং আল্লার নাম-গন্ধও ছিলো না।
ইসলামকে বানাতে মুহম্মদের যা কিছু দরকার, এইভাবে তার সব কিছু ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের থেকে মুহম্মদ দখল করেছে, আর যখনই সেই সব বিষয় নিয়ে ইহুদি খ্রিষ্টানরা কোনো প্রশ্ন তুলেছে, তখনই মুহম্মদ তাদের বিরুদ্ধেই পাল্টা অভিযোগ করেছে, তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ বিকৃত করে ফেলেছে। বোঝেন ঠেলা। জোর যার মুল্লুক তার, এই কথাটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য ইসলাম ও মুসলমানদের বেলায়।
যা হোক এই দখল প্রক্রিয়ায় ইসলাম দাবী করে যে, ইব্রাহিম যখন তার স্ত্রী হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইলকে মক্কার মরুভূমিতে নির্বাসন দিয়েছিলো, তখন একদিন পানির জন্য হাজেরা, সাফা ও মারওয়া পর্বতের মধ্যবর্তী জায়গায় সাতবার দৌড়াদৌড়ি করেছিলো, যার জন্য মুসলমানরা এখনও হজ করতে গেলে সাফা ও মারওয়ার মধ্যে দৌড়ায়; হাজেরার সেই দৌড়াদৌড়ির সময় জিবরাইল ফেরেশতা সেখানে উপস্থিত হয় এবং নিজের পায়ের খুর দিয়ে মাটি খুড়লে সেখানে জম জমকূপের সৃষ্টি হয়। জিবরাইলের পায়ের খুর আছে, এটা আবার কী অদ্ভূত জন্তু কে জানে, ইসলামের তো একটা অদ্ভূত জন্তু আছে, বোরাক, যার দেহ ঘোড়ার কিন্তু মুখ নারীর।
যা হোক, ইসলাম মানুষকে তার কর্মের স্বীকৃতি দিতে ভীষণভাবে কৃপণ; কারণ, সকল মুসলমান এটা বিশ্বাস করে যে, মানুষের কোনো ক্ষমতা নেই, যা ক্ষমতা তা শুধু আল্লার, আর মানুষ যা করে তা আল্লা ই করায়। তো সব কিছু যখন আল্লা ই করায়, তখন ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে বা কিছু লিখলে তোদের পাছায় এত লাগে কেনো, হ্যাঁ ?
যা হোক, এটা নিশ্চিত যে, কেউ না কেউ কোনো এক সময় মক্কার ঐ জমজম কূপ খনন করেছিলো, কারণ, মক্কা ছিলো তৎকালীন বাণিজ্য নগরী সিরিয়ায় যাওয়ার পথে, সিরিয়ার বিপরীত দিকের অন্যান্য এলাকার মানুষের বিশ্রামস্থল। একারণে মক্কায় সকল ধর্মের লোকদের জন্য কাবা মন্দির স্থাপিত হয়, যাতে লোকজন বিশ্রাম করার সাথে সাথে ধর্মকর্মও করতে পারে। এজন্যই কাবার মধ্যে শুধু হিন্দুদের মূর্তিই ছিলো না, ছিলো সেই সময়ের মানুষের বিশ্বাসের সকল দেব-দেবী, এমন কি যীশুর মা, মেরি এবং যীশু খ্রিষ্টের মূর্তিও ছিলো। এভাবে বিভিন্ন মানুষের বিশ্বাসের দেব-দেবীকে স্থান দিতে দিতে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৬০টিতে, বিষয়টা কখনো কল্পনা করেছেন ৩৬০ টা মানে কতগুলো মূর্তি ? বর্তমানেও পৃথিবীতে এমন কোনো মন্দির বা সংগ্রহশালা সম্ভবত নেই, যেখানে এতগুলো মূর্তি আছে। প্রকৃতপক্ষে কাবা ছিলো এক বিশাল সংগ্রহশালা এবং এই সংগ্রহের মধ্যে মহাদেব শিব ছিলো প্রধান দেবতা, যার আরবি নাম হয়ে উঠেছিলো আল্লাহ।
মক্কা যেহেতু মরূভূমি এবং সেখানে যেহেতু কোনো চাষবাস হতো না বা এখনো হয় না, তাই ইসলাম পূর্ববর্তী মক্কার লোকজনের আয়ের প্রধান উৎস ছিলো এই পথচলতি মানুষের সেবার বিনিময়েপ প্রাপ্ত অর্থ। এ কারণে মক্কার লোকজন সব ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করতো এবং তাদের কাবায় ঐ সকল মানুষের বিশ্বাসের মূর্তি স্থাপন করতো বা করতে দিতো, যাতে তারা সন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে বেশি বেশি অর্থ দেয়, ঠিক যেমন পর্যটন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল দেশ বা জাতি এখনও করে; এই কাবার ইতিহাস এবং কাবাকেও, মুহম্মদ, আদম ইব্রাহিম ইসমাইলের নামে নানা কাহিনী বানিয়ে দখল করে।
যা হোক, মক্কার সেই জমজম কূপ, মুহম্মদের জন্মের কিছু আগে ভূ প্রাকৃতিক কারণে হারিয়ে যায়। জল না থাকায় মক্কায় আগের মতো লোক জন আর আসছিলো না বা থাকছিলো না। তখন কাবার দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলো মুহম্মদের দাদা আব্দুল মোতালেব এর উপর। বলা যায়, সে ই ছিলো কাবার সেবায়েত বা পুরোহিত। তো জলের অভাবে লোকজন আগের মতো আর না আসায় মক্কার লোকজন পরে ভয়াবহ অভাবের মধ্যে। তাই জমজম কূপ পুনরুদ্ধারের জন্য মোতালেব বেপরোয়া হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তার প্রচেষ্টা যদি সফল হয়, তাহলে সে তার ১০ পুত্রের মধ্যে থেকে একজনকে কাবার প্রধান দেবতা আল্লার উদ্দেশ্যে বলি দেবে। এরকম বিশ্বাস ও ঘটনা প্রাচীন সমাজের জন্য অসম্ভব কিছু নয়।
মানুষ বেপরোয়া বা ডেসপারেট হলে কি না করতে পারে, মোতালেবও তার প্রচেষ্টায় সফল হয়, পুনরায় খুঁজে বের করে জম জম কূপ বা এমনও হতে পারে, সে আরেকটি কূপ ই খনন করে, এ আর অবিশ্বাস্য বা অসম্ভব কী, মাটি খুঁড়লে পানি তো পাওয়া যাবেই, এই ৫০/১০০ বছর আগেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার কূপ ছিলো। কিন্তু এইসব বাস্তব ইতিহাস দিয়ে তো আর ইসলাম বানালে হবে না, ইসলামের জন্য দরকার ছিলো কোনো এক অদৃশ্য আল্লার সাথে সবকিছুর এক অদৃশ্য কানেকশন। এজন্য মুহম্মদ- কাবা, জমজম সবকিছুকে দখল করে নিজের মতো তাদের ইতিহাস বানিয়ে তার সেই কল্পিত আল্লার সাথে জুড়ে দিয়েছে।
যা হোক, জমজম কূপ যখন ফিরে পাওয়া গেলো, তখন কোন পুত্রকে বলি দেওয়া হবে তার জন্য একটা লটারী করা হলো এবং সেই লটারীতে নাম উঠলো মুহম্মদের বাপ আব্দুল্লাহর। তখন হয়তো তার নাম ছিলো শুধু আব্দুল বা আব্দুল এর সাথে আরো কোনো শব্দ থাকলেও থাকতে পারে; কিন্তু ইসলামের ইতিহাস থেকে সেটা সম্ভবত হারিয়ে গেছে, তাই তা আর জানার কোনো উপায় নেই।
তো মোতালেব যেহেতু প্রতিজ্ঞা করেছে যে, জমজম কূপের বিনিময়ে সে তার এক পুত্রকে কোরাবানী দেবে, সেই কোরবানীতে নাম উঠেছে এক পুত্রের, তাকে কি এখন সত্য সত্যই হত্যা করা হবে ? এরকম প্রশ্ন উঠতে থাকে মক্কাবাসীদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত মক্কাবাসীদের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত হয় যে মোতালেব এর কোনো পুত্রকে কোরবানী দেওয়া বা হত্যা করা হবে না, তার বিনিময়ে ১০০ উট কোরবানী দেওয়া হবে এবং যেহেতু মোতালেব এর পুত্র আব্দুল এর নাম কোরবানীর জন্য সিলেক্ট হয়েছে, তাই আব্দুলকে কাবার প্রধান দেবতা আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হবে, অর্থাৎ সে হবে আল্লাহর দাস, এজন্য আব্দুল+ আল্লাহ এই দুই শব্দ মিলে তার নাম হয় আব্দুল্লাহ, যার পুত্রের নাম মুহম্মদ এবং যে মুহম্মদের জন্মের পূর্বেই মারা যায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মুসলমানরা এইসব ইতিহাস না জানলেও, তারা তো এটা স্বীকার করবে যে, আব্দুল্লাহ মানে আল্লাহর দাস, তাহলে এই আল্লা কোন আল্লা, যার দাস বানানো হচ্ছে কোনো একজন মানুষকে ?
এই আল্লা, সেই আল্লা ই যে কাবার মধ্যে স্থাপিত প্রধান দেবতা, যার কথা বলেছে গাফফার চৌধুরী, কোরানে যার সম্পর্কে এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তোমাদের জন্য পুত্র আর আল্লার জন্য শুধু কন্যা ? এই আয়াতের মাধ্যমে তো বলেই দেওয়া ই হচ্ছে যে, কে আল্লা।
তো এখন শেষ কথা হচ্ছে যে, মুসলমানদের যে আল্লা হিন্দুদের একজন দেবতা, সেই দেবতা্র ভয় আবার মুসলমানরা দেখায় হিন্দুদেরকেই। আমি এই বিষয়গুলো জানি বলে, যখন কেউ আমাকে আল্লার নাম দিয়ে ইহকাল বা পরকালের ভয় দেখায়, সেটা বাস্তবেই হোক আর নেট দুনিয়ার কমেন্টেই হোক, শুনলে বা পড়লেই হাসি পায়। ভাবি, কার কাছে কিসের গল্প শোনাচ্ছে ? যে পাথরের মূর্তির নাম ছিলো আল্লাহ, সেই মূর্তিকে ভেঙ্গে ফেলে আল্লাকে অদৃশ্য কোনো সত্ত্বা বানিয়ে দিলেই যে সে সর্বজ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান হয়ে যাবে, এটা মূর্খরা বিশ্বাস করতে পারে, আমি করি না।
জয় হিন্দ।

রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬

নবগ্রহ প্রণাম মন্ত্র

নবগ্রহ প্রণাম মন্ত্র কে বলেই মন্ত্রের ক্ষমতা নাই , নিশ্চই আছেই , গুরুর মুখনিঃসৃত বীজ মন্ত্রযুক্ত মন্ত্র পাঠ করিলেই আপনি নিশ্চই ভালো ফল পাইবেন , ইহার অন্যথা হইবে না
=============
ওঁ জবাকুসুমসংকাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ ।
ধ্বান্ত্যারিং সর্বপাপঘ্নম্ প্রণতোহশ্মি দিবাকরম্ ॥
দিব্যশঙ্খতুষারাভং ক্ষীরোদার্নভসম্ভবম্ ।
নমামি শশীনং ভক্তা শম্ভোর্মুকুটভূষণম্ ॥
ধরণীগর্ভোসম্ভূতং বিদ্যূতপুঞ্জসমপ্রভম্ ।
কুমারং শক্তিহন্তস্চ লোহিতাঙ্গং প্রণম্যহং ॥
প্রিয়ঙ্গুকলিকাশ্যমং রূপেনাপ্রতিমং বুধম ।
সৌম্যং সৌম্যগুণপেতং নমামি শশীনংসুতম্ ॥
দেবতানাংম্রিশিনান্চং গুরুং কনকসন্নিভং ।
বন্দে ভক্তা ত্রিলোকেশং ত্বং নমামি বৃহস্পতিম্ ॥
হিমকুন্দমৃণালাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্ ।
সর্বশাস্ত্রপ্রবক্তারং ভার্গবং প্রণম্যহ্ ॥
নিলাঞ্জনংচয়প্রক্ষ্যং রবিসূতং মহাগ্রহম্ ।
ছায়ায়ং গর্ভসম্ভূতং বন্দেভক্তা শণৈশ্চরম ॥
অর্দ্ধকায়াং মহাঘোরং চন্দ্রাদিত্যবিমর্দকম
সিংহিকায়া মহারৌদ্রং ত্বং রাহুং প্রণম্যহম্ ॥
পলাশধূমসংকাশং তারাগ্রহবির্মদকম ।
রৌদ্রং রৌদ্রত্বকং ঘোরং ত্বং কেতুং প্রণম্যহম্ ॥
গ্রহ বীজ মন্ত্রঃ
========
সূ্র্য্য মন্ত্র -- ওঁ হ্রীং হ্রীং সূর্য্যায়ঃ । জপ সংখ্যা ৬০০০ বার । দেবতা-মাতঙ্গী । ধূপ-গুগুল । বার-রবিবার । প্রশস্ত- সকাল ১২ টা পর্যন্ত ।
চন্দ্র মন্ত্র -- ওঁ ঐং ক্লীং সোমায়ঃ । জপ সংখ্যা ১৫০০০ বার । দেবতা-কমলা । ধূপ- সরলকাষ্ঠ । বার-সোমবার । প্রশস্ত-সন্ধা ৬-৯ পর্যন্ত ।
মঙ্গল মন্ত্র -- ওঁ হুং শ্রীং মঙ্গলায়ঃ । জপ সংখ্যা-৮০০০ বার । দেবতা-বগলামুখী । ধূপ-দেবদারু । বার-মঙ্গলবার । প্রশস্ত-সকাল ১২ টা পর্যন্ত ।
বুধ মন্ত্র -- ওঁ ঐং স্ত্রীং শ্রীং বুধায়ঃ । জপ সংখ্যা-১০০০০ বার । দেবতা-ত্রিপুরাসুন্দরী । ধূপ-সঘৃত দেবদারু । বার-বুধবার । প্রশস্ত-বেলা ১২টা পর্যন্ত ।
বৃহস্পতি মন্ত্র -- ওঁ হ্রীং ক্লীং হুং বৃহস্পতয়ে । জপ সংখ্যা-১৯০০০ বার । দেবতা-তারা । ধূপ-দশাঙ্গ । বার-বৃহস্পতিবার । প্রশস্ত-বেলা ১২ পর্যন্ত ।
শুক্র মন্ত্র -- ওঁ হ্রীং শুক্রায়ঃ । জপ সংখ্যা-২১০০০ বার । দেবতা-ইন্দ্র । ধূপ-গুগুল । বার-শুক্রবার । প্রশস্ত-সন্ধ্যাবেলা ।
শণি মন্ত্র -- ওঁ ঐং হ্রীং শ্রীং শনৈশ্চরায়ঃ । জপ সংখ্যা ১০০০০ বার । দেবতা-দক্ষিনাকালী । ধূপ-কৃষ্ণাগুরু ।বার শনিবার । প্রশস্ত সন্ধ্যাবেলা ।
রাহু মন্ত্র -- ওঁ ঐং হ্রীং রাহবে । জপ সংখ্যা-১২০০০ বার । দেবতা-ছিন্নমস্তা । ধূপ-দারুচিনি । বার-শনি/মঙ্গল বার ।
প্রশস্ত সন্ধ্যাবেলা ।
কেতু মন্ত্র -- ওঁ হ্রীং ঐং কেতবে । জপ সংখ্যা-২২০০০ বার । দেবতা-ধূমাবতী। ধূপ-মধূযুক্ত দারুচিনি । বার-শনি/মঙ্গল বার
Image may contain: candles and indoor

শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬

রমনা কালী মা

আসুন আজ আমরা ঢাকা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক রমনা কালী মা তার প্রতিমা দর্শন করি পাথরের বেদীর উপর শ্রীশ্রী ভদ্রকালীর সুউচ্চ প্রতিমা। চতুর্ভুজা মা দেবাদিদেব মহাদেব এর উপর দণ্ডায়মান; দু’পাশে ডাকিনী-যোগিনী। মায়ের কণ্ঠে মুণ্ডমালা ও লাল জবা ফুলের মালা। তিনি লাল বস্ত্র পরিহিতা। মা ভদ্রকালীর এই প্রতিমার সামনে দাঁড়ালেই মনে এক বিচিত্র অনুভূতি জাগে। বিক্ষিপ্ত চিত্ত ভক্তিভাবে ভরে যায়।
মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ এ বর্বর পাকিস্থানি সেনাদের ধ্বংসযজ্ঞের কথা ভাবলে এখনও যেন বুকটা কেঁপে ওঠে। ১৯৭১ সালের ২৬ ও ২৭ মার্চ- এই দুটো দিন রমনা কালী মন্দিরের পবিত্র ভূমি ঘিরে যে বিভীষিকার রাজত্ব তৈরি হয়েছিলো তা ইতিহাসের নিকৃষ্ট বর্বরতার একটি উদাহরণ। এক তীর্থভূমি রাতারাতি পরিনত হয়েছিলো বধ্যভূমিতে। ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল- এই ৩০ বছর এখানে কোন মন্দিরই ছিল না।
জনশ্রুতি আছে যে, প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে বদ্রীনাথের যোশীমঠ থেকে গোপাল গিরি নামে এক উচ্চমার্গের সন্ন্যাসী প্রথমে ঢাকায় এসে সাধন ভজনের জন্য উপযুক্ত একটি আখড়া গড়ে তোলেন। শঙ্করাচার্যের দশনামী সন্ন্যাসীদের অন্যতম গিরি সম্প্রদায়ের মন্দিরটিই কালক্রমে রমনা কালী মন্দির হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মূল কালীমন্দিরটি প্রায় ৩০০ বছরেরও আগে নির্মাণ করেন আরেক সাধু হরিচরন গিরি। তবে, মন্দিরটির প্রধান সংস্কার কাজ হয়েছে ভাওয়ালের রানী বিলাসমণি দেবীর আমলেই


বৈদিক পুরুষার্থ ও সনাতন ধর্ম

আসুন আজ আমরা আলোচনা করবো বৈদিক পুরুষার্থ ও সনাতন ধর্ম নিয়ে প্রতিটি মানুষের জীবনের উদ্দেশ্যকে বলা হয় পুরুষার্থ। প্রতিটি মানুষই জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি, সাফল্য, স্বচ্ছন্দ, যশ, খ্যাতি, অমরত্ব(কীর্তিদ্বারা) প্রভৃতি চায়। বৈদিক ঋষিরা মানবজীবনের এই সকল চাওয়া পাওয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। কাম ও আর্থ। এই দুটি শব্দ দ্বারা মানব জীবনের সমস্ত কামনাবাসনা প্রকাশ করা যায়। কাম ও আর্থ না থাকলে জীবন পরিপূর্ণ হয়না বা বলা যায় কাম ও আর্থ ছাড়া জীবনই হয়না। কিন্তু, প্রত্যেকটি কাজেরই কিছু নীতি থাকে। নীতিবর্জিত যেকোন কাজই ব্যক্তি ও সমাজের সুদূরপ্রসারী ক্ষতি করে থাকে এবং নীতিভ্রষ্ট সমাজের ধ্বংসই নিয়তি। তাই বৈদিক ঋষিদের মতে, যে নীতিদ্বারা কাম ও আর্থ পরিচালিত হবে, তা হবে ধর্ম। ধর্মই পথ দেখাবে মানুষ, সমাজ ও প্রকৃতির পরস্পর নির্ভরশীল সহাবস্থানের, ঠিক করে দেবে পারস্পরিক সম্পর্কের নৈতিকতা, তৈরি করবে ব্যক্তিত্ব, নির্ধারণ করবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক চরিত্র, উন্মেষ ঘটাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের এবং মানুষের সুপ্ত ঐশ্বরিক গুনসমূহের ধাপে ধাপে চর্চার মাধ্যমে তার মনুষ্যগুণের সর্বোচ্চ পরিস্ফুরন ঘটাবে। আর, এই গুণসমূহের সর্বোচ্চ পরিস্ফুটনের দ্বারা মানুষের সাথে ঈশ্বরের পার্থক্য ঘুচে যাবে, মানুষ হয়ে উঠবে সচ্চিদানন্দ, তাঁর ভেতরকার ব্রহ্ম জেগে উঠবে, আর আত্মা পরমাত্মায় লীন হয়ে যাবে। এই, অন্তিম অবস্থাকেই বৈদিক ঋষিরা কাম ও আর্থের বাইরে এক অন্তিম লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যার নাম মোক্ষ।
সুতরাং, বেদ মতে পুরুষার্থ চারটি। যথাঃ কাম, আর্থ, ধর্ম ও মোক্ষ।
ব্যাপারটা আর একটু খোলাসা করা যাক।
বেদমতে ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেননি। বরং, সকল সৃষ্টি ঈশ্বরেরই প্রকাশ। অর্থাৎ, এক ঈশ্বরই সর্বজীবে ও সর্বভূতে অধিষ্ঠিত। সৃষ্টির সাথে ঈশ্বরের গুনগত কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য কেবল প্রকাশভেদে। সৃষ্টি গুণে অপূর্ণ ও অপ্রকাশিত, কিন্তু ঈশ্বর সম্পূর্ণ ও প্রকাশিত।
ঈশ্বরকে বলা হয়, সচ্চিদানন্দ। এটি তিনটি শব্দের যুক্তাক্ষর; সত, চিত ও আনন্দ।
সত= যা সর্বদা বিরাজমান; অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নেয় এবং যা সময় দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। যেমনঃ সৃষ্টি, প্রকৃতি, মহাবিশ্ব ইত্যাদি।
চিত= যিনি সচেতন বা চেতনাধারী। যিনি ন্যায়, অন্যায়, ভুল শুদ্ধ বিচার করতে পারেন, এমন বিবেকবান। যেমনঃ জীবজগত (বিশেষ করে মানুষ)
আনন্দ= যিনি সর্বদা আনন্দময়; সুখ, দুঃখ, জরা, ব্যাধি, রাগ, ক্ষোভ, বিদ্বেষ, জীবন মৃত্যুর অতীত, সর্ব গুণান্বিত, সম্পূর্ণ। চিরসচেতন, সর্বত্র ও অনন্ত।
অর্থাৎ, আমরা দেখি প্রকৃতি বা সৃষ্টি হল সত, জীব হল সত ও চিত উভয়ই। আর ঈশ্বর হল সচ্চিদানন্দ। কারণ, তিনি সত ও চত এর পাশাপাশি পূর্ণ প্রকাশিত আনন্দময়। জীবের (এক্ষেত্রে মানুষের) সাথে ঈশ্বরের পার্থক্য কেবল গুণাবলীর প্রকাশে। মানুষের সুপ্ত, ঈশ্বরের সম্পূর্ণ প্রকাশিত।
মানুষের সুপ্ত চেতনা বা গুণের প্রকাশের অনুঘটক হল ধর্ম।
No automatic alt text available.

কে বলেছে ভগবান নাই

আসুন আজ আমরা জানবো বৈদিক জীবন চারণ ও হিন্দু ধর্ম পবিত্র বেদ; সৃষ্টির প্রারম্ভে আপ্তকাম মহর্ষিগন কর্তৃক হৃদয়ে প্রাপ্ত মহাবিশ্বের সংবিধান,একটি পরিপূর্ন জীবনবিধি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমাদের আচরন ও কার্যবিধি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে সনাতন মানব ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করছি বৈদিক জীবনাচরন।
১. একজন বৈদিক ধর্মালম্বীর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য থাকা উচিত তার চারিত্রিক উন্নয়ন।
ওঁ বিশ্বানি দেব সবিতর দুরিতানি পরসুব।
যদভদ্রম তান আসুভ।। যজুর্বেদ ৩০.৩
অনুবাদ- হে পরমেশ্বর,আমি যাতে আমার খারাপ গুনসমূহ বর্জন করতে পারি এবং সত্গুনসমূহকে আয়ত্ত্ব করে নিজ চরিত্রের উন্নতি ঘটাতে পারি।
২. মাহিরভূর্মা প্রদাকুর
অতনর্ভা প্রেহি(যজুর্বেদ ৬.১২) অর্থাত্ হে মনুষ্য,হিংস্র বা উগ্র হয়োনা।নমনীয় ও সত্যনিষ্ঠ হও।
৩. ম ভ্রাতা ভ্রাতারম অরত্যহ অথ (অথর্ববেদ ৩.৩০.৬)
অর্থাত্ সকল মানুষ ই ভাই-ভাই এবং একজন ভাই যেনো কখনো অন্য ভাইয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা না করে।
৪.গরীব-দুঃখী ও বিপদগ্রস্তদের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা বৈদিক ধর্মালম্বীর কর্তব্য।
শত হস্ত সংহারা,সহস্র হস্ত সংকীরথ।(অথর্ববেদ ৩.২৪.৫)
অনুবাদ-আয় করতে হাতটিকে শতটিতে বৃদ্ধি কর আর দান করতে তাকে হাজারে রুপান্তরিত কর।
"সামর্থবানদের উচিত গরীবদের দান করা।তাদের দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া উচিত,মনে রাখা উচিত অর্থসম্পত্তি চিরস্থায়ী নয়।আজ যে ধনী সে ধন কাল তার নাও থাকতে পারে! (ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৫)
৫.পানিদূষন,বায়ুদূষন,মাটি দূষন করবেননা-
মাপোমৌস্রাদ্ধিহিন্স্রী (যজুর্বেদ৬.২২)
অর্থাত্ পুকুর,নদী,খাল,বনাঞ্চল এসব দূষিত বা ধ্বংস করোনা।
"বায়ুতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকি,একে দূষিত
করোনা।" (যজুর্বেদ ৬.২৩)
পৃথ্বীম মা হিন্সিম অর্থাত্ মাটির দূষন
করোনা। (যজুর্বেদ ১৩.১৮)
৬ .মা গৃধ কস্য স্বিদ্ধনম (যজুর্বেদ ৪০.১) অর্থাত্ লোভাতুর হয়োনা
৭.যেকোন ধরনের অশ্লীলতা বৈদিক ধরমালম্বীদের জন্য বর্জনীয়-
"হে নারী ও পুরুষ,তোমরা ভদ্র ও সংযত হও।পোশাক-পরিচ্ছেদ ও আচরনে অশ্লীলতা ও অসভ্যতা বর্জন কর।"(ঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯)
অশ্লীল কথা না বলা,শোনা বা দেখা নিয়ে পবিত্র বেদ এর উপদেশ
ওঁ ভদ্রং কর্ণেভি শৃনুয়াম
দেবা ভদ্রংপশ্যেমাক্ষ ভির্যজত্রা।
স্থিরৈরঙ্গৈস্তস্টুবাঁ সস্তনুভির্ব্যশে ম
দেবহিতং যদায়ুঃ।। (যজুর্বেদ ২৫/১১)
দেবাঃ-ঈশ্বর, যজত্রা- আরাধনা করি,কর্ণেভি-কান দিয়ে,ভদ্রম- ভদ্র বা শ্লীল কথাবার্তা, শৃনুয়াম- শুনি,অক্ষভি- চোখ দিয়ে যেন,ভদ্রম- শ্লীল ,ভদ্র এবং মঙ্গলময় দৃশ্য, পশ্যেম- দেখি,স্থিরৈ-সুদৃঢ় (সত্কর্মসম্পাদনে), অঙ্গৈ-অঙ্গ, তনুভি-শরীর দ্বারা,তষ্টুবাংস-ঈশ্বরের স্তুতি করতে,যত্-যে, আয়ু-আয়ু, দেবহিতম- আরাধ্যসেবায় লাগে, সস্তনুভির্ব্যবেশম- তাই যেন প্রাপ্ত হই।
অর্থাৎ, হে ঈশ্বর,আমরা যেন তোমার যজন করি,কান দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় কথাবার্তা শুনি,চোখ দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় দৃশ্য দেখি।তোমার আরাধনাতে যে আয়ুস্কাল ও সুদৃড় দেহ প্রয়োজন তা যেন আমরা প্রাপ্ত হই।
৮.(ঋগ্বেদ ১.৮৯.২) দেবানাম সখ্যমুপ্সেদীনাম ব্যায়াম অর্থাত্ বিদ্বান ও সচ্চরিত্র লোকেদের সাথে বন্ধুত্ব কর,দুশ্চরিত্রদের বর্জন কর।
৯."কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে গড়ে তোল।"(ঋগবেদ ১০.৬০.১২)
১০."সর্বভূতের কল্যানের জন্য নিজের মনস্থির কর।" (যজুর্বেদ ৩৪.১)
১১.অন্যো অন্যস্ময় ভল্গ বদন্তথ (অথর্ববেদ ৩.৩০.৫) অর্থাত্ সদা সত্যাশ্রয়ী ও সত্যবাদী হবে।
সত্যবদ্ধতি ত্বম সূর্যন্তু (অথর্ববেদ ৪.১৬.৬) অর্থাত্ সত্যবাদীকে সর্বদা সম্মান করবে।
১২.একজন বৈদিক ধর্মালম্বী সর্বভূতে সমদর্শী হবে।তার জন্যে কেউ ছোট নয়,কেউ বড় নয়।সকলেই এক অমৃতের সন্তান!
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস
এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায়
যুবা পিতা স্বপা রুদ্র
এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ ॥ (ঋগবেদ ৫.৬০.৫)
বঙ্গানুবাদ : কর্ম ও গুনভেদে কেউ ব্রাহ্মন,কেউ ক্ষত্রিয়,কেউ বৈশ্য,কেউ শুদ্র।তাদের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয়।
ইহারা ভাই ভাই । সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে ।ইহাদের পিতা তরুন শুভকর্ম ঈশ্বর এবং জননীরুপ প্রকৃতি। পুরুষার্থী সন্তানই সৌভাগ্য প্রাপ্ত হন।
১৩.একজন বৈসপ্ত মর্যাদাঃ কবয়স্তস্তক্ষুস্তাসামেকামিদভ্যয়হুরো ঘাত।। ঋগবেদ ১০.৫.৬
"সপ্ত হল নিষেধসমূহ যা নির্দেশিত হয়েছে,জ্ঞানীগন যাকে সবসময় এড়িয়ে চলেন,যেগুলো মানুষকে সর্বদাই বিপথগামী করে।"কি সেই সপ্ত মহাপরাধসমূহ ? মহর্ষি যস্ক তাঁর নিরুক্ত সংহিতায় বর্ননা করেছেন,
"চুরি,অশ্লীলতা ও ব্যভিচার,হত্যা,ভ্রুননিধন,অগ্নিসংযোগ,নেশা/ মদ্যপান,অসততা।"দিক ধর্মালম্বীর জন্য যেকোন ধরনের নেশাজাতীয় পদার্থ নিষিদ্ধ।
১৪.বৈদিক ধর্ম মানবতার ধর্ম। এখানে কোন ধরনের অস্পৃশ্যতা প্রথার কোন সুযোগ নেই-
অথর্ববেদ ৩.৩০.৬
মানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ বো যুনজমি।
সমঞ্চোহগ্নিং যপর্যতারা নাভি মিবাভিতঃ।।
বঃ-তোমাদের,পপা-পান,সমানী- একসঙ্গে একপাত্রে হউক,বঃ অন্নভাগাঃ- তোমাদের আহারও একসাথে হউক,বঃ- তোমাদিঘে,সহ- সঙ্গে,সমানে যোক্ত্রে-এক বন্ধনে,যুনজমি-যুক্ত করেছি,সম্যন্চঃ-সবাই মিলে,অগ্নিং সপর্যত- একসাথে উপাসনা কর(যজ্ঞাদি,ধ্যন),ইব- যেমন,অরাং নাভিং অভিত-যেমন করে রথচক্রের চারপাশে অর থাকে।
অর্থাত্,হে মনুষ্যগন তোমাদের ভোজন ও আহার হোক একসাথে,একপাত্রে, তোমাদের সকলকে এক পবিত্র বন্ধনে যুক্ত করেছি,তোমরা সকলে এক হয়ে পরমাত্মার উপাসনা(যজ্ঞাদি,ধ্যন) কর ঠিক যেমন করে রথচক্রের চারদিকে অর থাকে!
বৈদিক জীবনবিধি মেনে চলুন,একটি মহৎ পৃথিবী গড়ে তুলুন।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

এক জন যোগী বেদ বিদ, এর কথা শুনবো যার নাম দয়া নন্দ সরস্বতী

আসুন বন্ধু গণ আজ আমরা এমন এক জন যোগী বেদ বিদ, এর কথা শুনবো যার নাম দয়া নন্দ সরস্বতী , উনি মহৎ পুরুষ ওনার চরণে প্রণাম আজ হতে প্রায় ১৮০ বছর আগের কথা।সমুদ্রতীরের অনাবিল সৌন্দর্যময় রাজস্থানের টঙ্কর গ্রামে ঘটে গেল একটি বেদনাবিধুর অঘটন।গ্রামের প্রসিদ্ধ পন্ডিত ব্রাহ্মণ কর্ষণজি লাল তিওয়ারী ও যশোদাবাই এর একমাত্র কন্যা অজানা রোগে মৃত্যুবরন করল।শোকের আবহ কাটতে না কাটতেই কর্ষণজি লাল এর ছোটভাই কলেরায় মারা গেলেন।
কাকার মৃত্যুতে অতি আদরের ভাতিজা(কর্ষনজির ছেলে) কেঁদে আকুল হলেন।সবসময় কাকার সাথে ঘুরে বেড়ানো কিশোরটি যেন কোনভাবেই যেন প্রিয়জন বিচ্ছেদের এই বেদনা মেনে নিতে পারছিল না। কর্ষণজি গ্রামের শিবপূজারী ব্রাহ্মণগোত্রের প্রধান ছিলেন।সেই সুবাদেই পুত্র মূলশঙ্কর তিওয়ারী ছোটবেলা থেকেই পূজাঅর্চনা,শাস্ত্রপাঠে দক্ষ হয়ে উঠলেন।মায়ের স্নেহসুলভ নিষেধের সত্ত্বেও বালক মূলশঙ্কর ঠিক করল সে শিবরাত্রির উপবাস রাখবে।দিনটা ভালোই ভালোই কাটল।রাতে সবাই উপবাসের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেও মন্দিরে রাত জেগে বসে থাকল ছোট্ট ভক্ত মূলশঙ্কর।সারারাত বসে নৈবেদ্য ঠাকুরপ্রতিমাকে নিবেদন করবে এই তার ইচ্ছা।কিন্তু অবাক হয়ে ছেলেটি লক্ষ্য করল এত কষ্ট করে ভক্তদের দেয়া নৈবদ্য খেয়ে যাচ্ছে ইঁদুরের দল,মূর্তিমান ঠাকুরের তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ ই নেই!
আপাতদৃষ্টিতে ছোট এই ঘটনাটিই কিন্তু গভীর রেখাপাত করেছিল বালক মূলশঙ্করের নিষ্কলুষ মনষ্পটে যে কিনা প্রিয়জন বিয়োগের প্রেক্ষিতে খুঁজে ফিরছিল মৃত্যু নামক নির্মম বাস্তবতার রহস্যপট! শিবরাত্রির অন্ধকার ওই রাতটি যদি হয় অজ্ঞানতার অন্ধকার যা ঢেকে রেখেছিল পবিত্র আর্যভারতকে তবে মূলশঙ্করের ভক্ত মনের ওই জিজ্ঞাসু হতাশা ছিল সেই অন্ধকারকে সরিয়ে জ্যোতির্মোচন করার শুরু যা জন্ম দিয়েছিল মহাঋষি দয়ানন্দ স্বরস্বতী নামক মহানক্ষত্রের!
সেই বালক মনে যে একবার সূচনা হয়েছিল বৈরাগ্যের তা ক্রমশ বাড়তে লাগল।প্রচলিত সংস্কারের প্রতি সংশয়াত্মা মূলশঙ্কর ক্রমে বেদাদি শাস্ত্রপাঠের দিকে মনোনিবেশ করলেন,প্রত্যাখ্যান করলেন উচ্চশিক্ষার জন্য কাশী যাবার প্রস্তাব।পুত্রের এহেন দশা দেখে ক্রমশ ভীতসন্ত্রস্ত পিতামাতা তার বিয়ে ঠিক করলেন,ভাবলেন সংসারের প্রতি মনোনিবেশ হলে বৈরাগ্য হয়তো কেটে যাবে।কিন্তু যার মধ্যে লুকিয়ে আছে আর্যাবর্তের গৌরব ফিরিয়ে আনার আদিম শক্তিরাশি তার ক্ষেত্রে কি আর এহেন সরল সমীকরন খাটে!
এমতাবস্থায়,১৮৪৬ সালে,২২ বছর বয়সে,ঠিক বিয়ের দিনে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন!
তরুন মুলশঙ্কর যে বয়সে করবিভাগের কর্মকর্তা পিতার ধনপ্রাচুর্যে হেসে,খেলে জীবনকে উপভোগ করবেন সেই বয়সে সকল জাগতিক মায়া ছেড়ে তিনি সন্ন্যাস গ্রহন করলেন।১৫ টি বছর বনে জঙ্গলে,দুর্গম হিমালয়ে,তীর্থ থেকে তীর্থে ঘুরে বেড়ালেন একজন সদ্গুরুর আশায়।এসময় অধ্যয়ন করলেন প্রচুর শাস্ত্রাদি,অভ্যাস করলেন নানা প্রকার যোগপদ্ধতির,সান্নিধ্যে আসলেন অগনিত মুণি-পূন্যাত্মার।তাদের ই একজন ছিলেন স্বামী পূর্ণাশ্রম।তিনি মূলশঙ্করকে বললেন,"এ পৃথিবীতে একজন ই আছেন যিনি তোমার সকল সংশয় দূর করতে পারবেন।তিনি হলেন মথুরার বীর্যানন্দ দন্দীশা।তুমি তার কাছে যাও।"
একথা শুনে তিনি যাত্রা করলেন মথুরায়,তখন ১৮৬০ সাল।অন্ধমুনি বীর্যানন্দের গুরুকুলেই তিনি খুঁজে পেলেন তাঁর প্রার্থিত জ্ঞানসাগর।বীর্যানন্দ অবাক হয়ে দেখলেন যে মূলশঙ্কর সংস্কৃত ব্যকরণ ও শাস্ত্রাদিতে অত্যন্ত দক্ষ!যমুনায় স্নান করিয়ে দীক্ষাসম্পন্ন করলেন নবশিষ্যের!তাঁর নতুন নাম হল দয়ানন্দ সরস্বতী যিনি পরবর্তীকালে মহাঋষি পদে খ্যাত হন।
প্রায় দশটি বছর গুরুর নিকট কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করলেন তিনি।এবার তার বিদায়ের পালা।বিদায়বেলায় গুরুদক্ষিণা কি দিলেন?কপর্দকহীন এক সন্ন্যাসী,যার প্রতিদিনকার আহার জোটে দান হতে তিনি কিইবা গুরুদক্ষিণা দেবেন!এই সর্বহারা লোকটি ই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দক্ষিণা দিলেন,তিনি কথা দিলেন তাঁর পুরো জীবন তিনি বেদ অমৃত প্রচারের জন্য,মানুষের নিকট ধর্মের আলো পৌঁছে দেবার জন্য উত্সর্গ করবেন!শিবরাত্রির সেই সংশয়,২৫ বছরের এই অমানুষিক শ্রম,কঠোর তপস্যা যেন এক উদ্দেশ্য খুঁজে পেল!
শুরু হল আলো ছড়ানোর যাত্রা,দয়ানন্দ পুরো ভারতবর্ষ পদব্রজে ঘুরতে বের হলেন।গেলেন কুম্ভ মেলায়,দেখলেন ধর্মের নামে পাণ্ডাদের দৌরাত্ব,দেখলেন মানুষ মানুষকে ছোঁয়না,মানুষের হাতে খায়না,আর্যাবর্তের সন্তান হয়েও বিদেশীদের কাছে মাথানত করে আছে বীরহৃদয় হিন্দুগণ।এই দুর্দশা দেখে অন্তরে নিদারুণ ব্যাথা অনুভব করলেন তিনি।
একদিন দেখলেন এক মহিলা এক মৃত সন্তানকে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন।যে কাপড়ে মুড়িয়ে বাচ্চাটিকে এনেছিলেন ভাসিয়ে দেবার জন্য ভাসানোর সময় সেই কাপড়টি পর্যন্ত নিয়ে নিলেন!আশ্চর্য হয়ে স্বামীজি এর কারন জিজ্ঞেস করলেন,জানতে পারলেন এতই দরিদ্র সেই মহিলা যে মৃত সন্তানকে শেষ কাপড়ের টুকরোটিও দেবার সামর্থ্যও তার নেই!দয়ানন্দ বুঝলেন শুধু ধর্মীয় ঐতিহ্য পতনের গ্লানি ই নয়,প্রিয় ভারতবর্ষ ভুগছে সীমাহীন দারিদ্র্যের অপঘাতে।
ভারতের সব প্রান্তের বিখ্যাত সব পণ্ডিতদের সাথে তাঁর ঐতিহাসিক সব বিতর্কসভা অনুষ্ঠিত হল।সেইসব কুসংস্কারাচ্ছন্ন,মানুষের ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে যারা ফায়দা লুটে চলেছে যুগের পর যুগ,যারা প্রচার করেছিল শুদ্র ও নারীদের বেদ ও শাস্ত্রে অধিকার নেই,যারা শুদ্রদের অস্পৃশ্য ঘোষণা করেছিল,যারা কেড়ে নিয়েছিল জনগণের মন্ত্র পাঠের অধিকার,যারা বিধবা মহিলাদের অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য করেছিল।দয়ানন্দজী প্রথমবারের মত সুবিধাবঞ্চিত,অবহেলিত,নিপীড়িত দলিত জনগোষ্ঠীদের হরির সন্তান তথা হরিজন নামে আখ্যায়িত করেছিলেন,প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নারীর সমঅধিকারের শাস্ত্রীয় ভিত্তি,প্রমাণ করেছিলেন পবিত্র বেদে সকলের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে,মানবতার জয়গান গাওয়া হয়েছে।
তাঁর বিখ্যাত বিতর্কসভার মধ্যে হৃষীকেশ এর নামজাদা পণ্ডিত হীরা বল্লভ ও তাঁর ৯ জন সঙ্গী পণ্ডিত এর সাথে বিতর্কের কথা স্মরণ করা যেতে পারে।৮ দিন ব্যাপী এই বিতর্ক প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা করে অনুষ্ঠিত হত।এই ছিল তাঁর জয়যাত্রার সূচনা।
আরেকটি স্মরণীয় বিতর্কসভা ছিল কাশীর বিতর্কসভা।মহর্ষি যখন কাশীতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সভা সমাবেশ করতে লাগলেন তখন তাঁর জাগরণী,যুক্তিময় মানবতার বাণীতে পুরো শহরে এক বিশাল সারা পরে গেল।হাজার হাজার লোক আসতে থাকল তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহনে।তখন কাশীর পণ্ডিতদের টনক নড়ল।তাঁরা বুঝতে পারলেন যে তাঁদের অন্ধবিশ্বাস দিয়ে নিরীহ লোকদের পরিচালনা করার দিন ফুড়োতে চলেছে।ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাঁরা কাশীর তৎকালীন রাজার কাছে নালিশ দিলেন যে দয়ানন্দ তাদের ভুলপথে পরিচালিত করছেন।তখন কাশীর রাজা এক বিতর্কের আয়োজন করলেন।সহস্র সহস্র লোকের জমায়েত হল,কাশীর সমস্ত পণ্ডিত একদিকে আর দয়ানন্দজী আরেকদিকে।দয়ানন্দজীর অতিমানবীয় জ্ঞানালোকের চ্ছটায় তারা ত্রাহি ত্রাহি রব করতে লাগলেন।না পেরে তারা দয়ানন্দজীর দিকে পাথর ছুঁড়তে শুরু করলেন,রক্তাক্ত করলেন তাঁকে।এমন পরিস্থিতিতে লজ্জিত হয়ে রাজা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন।সবাই বুঝে নিল কে জয়ী হয়েছিল!
তাঁর জীবনের সবচেয়ে ঐতিহাসিক বিতর্কসভা ছিল ১৮৬৯ সালের ২২ শে অক্টোবর বারানসীর বিতর্কসভা যাতে সমগ্র ভারতের ৩৯ জন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত তাঁর সাথে বিতর্কে অংশ নিতে মিলিত হন।প্রায় ৫০০০০ দর্শনার্থীর অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত এই সভায় দয়ানন্দ জীর জয় ভারতের ইতিহাসে তাঁকে অনন্য আসনে প্রতিষ্ঠা করে।
পবিত্র বেদের আলো ছড়িয়ে দেবার জন্য প্রতিষ্ঠা করলেন অসঙ্খ্য গুরুকুল যাতে সারা ভারতবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করল জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণায়।এর মধ্যে ফররুখাবাদ(১৮৬৯),মিরজাপুর(১৮৭০),কাশিগঞ্জ(১৮৭০),আলীগড়(১৮৭০) এবং বারানসি গুরুকুল(১৮৭৩) উল্লেখযোগ্য।
১৮৭৪ সালে তিনি বোম্বেতে আমন্ত্রন পেলেন সেখানকার পণ্ডিতদের সাথে বিতর্কের জন্য।২০ শে অক্টোবর এর সেই বিতর্কতে জয়লাভ ই তাঁকে তাঁর অমর সংগঠন আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচন করে দেয়।সেখানে সবাই তাঁর গভীর পাণ্ডিত্যে এতই মুগ্ধ হলেন যে তাঁরা বেদ প্রচারে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করলেন স্বামীজিকে প্রধান বানিয়ে।শুরু হল আর্য সমাজের ঐতিহাসিক পথচলা।
বোম্বেতে থাকাকালীন সময়েই তিনি আহমেদাবাদের প্রখ্যাত পণ্ডিত গোপালরাও হরিমুখ এর সাথে বিতর্ক করার আমন্ত্রণ পান।রওনা দিলেন আহমেদাবাদের উদ্যেশ্যে।স্থানীয় পণ্ডিতদের বিতর্কে হারিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন আর্য সমাজের আহমেদাবাদ শাখা।
এর ই মধ্যে প্রকাশিত হল তাঁর কালজয়ী গ্রন্থ ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ যা ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রভূত ভূমিকা পালন করেছিল।তিনি ই প্রথম বিদেশী সম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন যে কারনে প্রাক্তন ভারত রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ তাঁকে ‘আধুনিক ভারতের অন্যতম রুপকার’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
তাঁর মৃত্যুর ইতিহাস অতি বেদনাদায়ক।যোধপুরের মহারাজা যশবন্ত সিং দয়ানন্দজীর আদর্শে এতই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে তিনি ঠিক করলেন তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করবেন।দয়ানন্দজীকে রাজা আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর প্রাসাদে আতিথ্য গ্রহন করতে।তিনি আমন্ত্রণ গ্রহন করলেন।একদিন দয়ানন্দজী রাজার সাথে কথা বলার জন্য তাঁর বিশ্রামকক্ষে গেলেন,সেখানে তিনি রাজাকে নান্নি জান নামক এক নর্তকীর সাথে দেখে ফেললেন।তখন মহর্ষি রাজাকে অত্যন্ত ভৎসরনা করলেন এবং তাঁকে এসব অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে মানা করলেন।দয়ানন্দজীর এই আচরণ ওই নর্তকীর মনে অত্যন্ত দুঃখ দিল এবং সেই মহিলা এর প্রতিশোধ নেবেন বলে ঠিক করল। নান্নি জান দয়ানন্দকে খাবার সরবরাহকারী বাবুর্চিকে ঘুষ দিয়ে তাঁর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিল।২৯ শে সেপ্টেম্বর রাতে খাবার খেয়ে ঋষি ঘুমোতে শুলেন।কিছুক্ষন পর অসহ্য ব্যাথায় জেগে উঠলেন তিনি।তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর খাবারে বিষ মেশানো হয়েছে।রাজা তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকলেন।তাঁর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে উঠল।তাঁর ব্যাথা এতই তীব্র হয়ে উঠল যে বাবুর্চি অনুশোচনায় থাকতে না পেরে তাঁর কাছে নিজের দোষের কথা স্বীকার করল।দয়ানন্দজী সেই বাবুর্চিকে ক্ষমা করে দিলেন এবং নিজের গচ্ছিত শেষ সম্পদ অল্প কিছু অর্থ তার হাতে দিয়ে তাকে সেখান হতে পালিয়ে যেতে বললেন,নাহলে যে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবেন!!!এভাবে মৃত্যুর আগেও উজ্জ্বল মহানুভবতার দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন তিনি!!!
এই বিষক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে প্রায় এক মাস পরে ২৬ শে অক্টোবর,১৮৮৩ সালে তিনি দেহত্যাগ করলেন।
সারাজীবন দয়ানন্দ ছিলেন যুক্তি ও প্রমাণের অটল বিশ্বাসী।তিনি যুক্তিহীন কোন কথাতেই কখনো বিশ্বাস করতেন না,সেটা তথাকথিত শাস্ত্রবাণী ই হোক আর যাই হোক।এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বর্ণনা করা যাক।একবার তিনি প্রাচীন ভারতের মানবদেহের অঙ্গসংস্থান(এনাটমি) নিয়ে লেখা একটি শাস্ত্র পড়ছিলেন।পড়ার কিছুদিন পর দেখলেন নদীতে একটি লাশ ভাসছে,হয়তো দুর্ভিক্ষ বা অন্য কোন কারনে কোন মৃত্যুজনিত লাশ হয়ত!মহর্ষি উদীচ্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান,রক্ত-মাংস খাওয়া বা ধরা তাঁর কল্পনার বাইরের কর্ম।কিন্তু না,তিনি এগিয়ে গিয়ে নদী থেকে লাশটা তুলে আনলেন।এর ব্যাবচ্ছেদ করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন এর ভেতরের অংশগুলি।দেখলেন অনেককিছুই মিলছে না সেই শাস্ত্র এর বর্ণনার সাথে।তৎক্ষণাৎ সেই শাস্ত্র তিনি ছুঁড়ে মারলেন নদীর জলে যা তৎকালীন সময়ে কোন ধর্মীয় পণ্ডিতের চিন্তারও বাইরে!!!
তাঁর এই অনন্য গুনের কারনেই দেশী বিদেশী অসংখ্য পণ্ডিত ব্যাক্তিবর্গ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন।এদের মধ্যে লন্ডনে India House এর প্রতিষ্ঠাতা শ্যামজী কৃষ্ণ বর্মা ,লালা রাজপুত রাই, বিনায়ক দামোদর সর্বাকর,মদন লাল ঢিংরা,রাম প্রসাদ বিসমিল,মহাদেব গোবিন্দ রানাদে,ম্যাডাম ক্যামা,সুভাষ চন্দ্র বোস,শ্রী সত্যমূর্তি,পণ্ডিত লেখরাম,মহাত্মা হংসরাজ,রাজীব দিক্ষীত।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গুণমুগ্ধদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ,ঋষি অরবিন্দ,রাষ্ট্রপতি রাধাকৃষ্ণান,বল্লভভাই প্যাটেল,শ্যাম প্রসাদ মুখারজি উল্লেখযোগ্য।
আমেরিকান দার্শনিক এন্ড্রু জ্যাকসন ডেভিস মহর্ষিকে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
এছাড়া বিখ্যাত স্কটিশ লেখক নিনিয়ান স্মার্ট, ব্রিটিশ লেখক বেঞ্জামিন ওয়াকার প্রমুখ তাঁর বিশেষ অনুরাগী ছিলেন।
তাঁর অমোঘ বাণী এখনও আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যায়,
“হে প্রিয় ভারতবাসী,আমি তোমাদের কাছে নতুন কোন ধর্ম প্রচার করতে আসিনি,আমি আসিনি কোন নবী বা অবতার সাজতে,আমি শুধু তোমাদের সেই পবিত্র বাণী স্মরণ করিয়ে দিতে এসেছি যা প্রিয় আর্যভুমির সহস্র বছরের গ্লানিতে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছিল!”
প্রজ্বলিত এই মহানক্ষত্র, যাঁর আলোকচ্ছটায় ঝলসে যায় অন্ধকারের অপলাপ,অযুত পঙ্কিলতার মাঝে দাড়িয়ে থাকা এক সুউচ্চ অটল পর্বতশৃঙ্গ তিনি যার পদচারনার জ্যোতিতে দূর হয় পাপের অপরেখা,তিনি যুক্তিবুদ্ধির এমন ই এক দেবময় জ্যোতিঃপুঞ্জ যা ছিন্ন করে সকল কুযুক্তিকে, মুক্ত করে আশার সেই শুভ্রপ্রভাতকে,তিনি ছড়িয়েছিলেন আদিত্যময় সেই বেদরাশিপুঞ্জ যা ম্রিয়মাণ ছিল পবিত্র আর্যভুমির হাজার বছরের দুর্দিনবাহিকায়,তিনি খ্রিস্ট পরবর্তী পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বেদবিদ,ধর্মজ্ঞ,মহাত্মা,জ্যোতির্ময় যোগীপুরুষ,মহাঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী।এই অবিস্মরণীয়,একমেবাদ্বিতীয়ম মহামনিষীর ১৯১ তম আবির্ভাবতিথিতে তাঁর প্রতি রইল সর্বোচ্চ সম্মান,শ্রদ্ধার্ঘ।

পবিত্র বেদ অঅমৃত সমান ঋদগবে

ঋদগবে ১০।৮২।০৬ন তং বিদাথ য় ইমা জজানান্যদ্যুষ্মাকমন্তরং বভূব।
নীহারেণ প্রাবৃতা জল্প্যা চাসুতৃপ উক্থশাসশ্চরন্তি।।
অনুবাদ: [হে মানুষ!] তুমি তাঁকে অর্থাৎ পরমাত্মাকে বুঝতে পারছ না। তিনিই এই জগতকে রচনা করেছেন। তিনি তোমাদের মাঝে বিরাজমান অথচ তোমাদের থেকে পৃথক। বিষয়াসক্ত মানবেরা অবিদ্যার কুয়াশা ও শুকনো তর্কে ডুবে থেকে সাংসারিক বিষয়কেই তৃপ্তির লক্ষ্য মনে করে এবং বহু শাস্ত্র পাঠকেরাও ইতস্ততঃ ভ্রমণ করে।
এই মন্ত্র দ্বারা এটি স্পষ্ট হচ্ছে যে ঈশ্বর সর্বব্যাপী হয়েও, আমাদের মাঝে বিরাজিত হয়েও আমাদের থেকে পৃথক। এই মন্ত্র আরো বলছে এত নিকটে থাকার পরেও আমরা তাঁকে অনুভব করতে পারছি না। কেন? “নীহারেণ প্রাবৃতা জল্প্যা চাসুতৃপ” অর্থাৎ বিষয় ভোগে ডুবে থাকার ফলে অবিদ্যার কুয়াশার দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে এবং কুতর্ক বলে বিষয় ভোগকেই সেরা বিবেচনা করায় আমাদের এই অবস্থা। যতদিন আমাদের ভোগবাদকে বুদ্ধিযোগ বা জ্ঞানযোগে রূপন্তরিত না করব ততদিন আমরা আমাদের সবথেকে নিকটতর সত্ত্বাকে অনুধাবন করতে পারব না।
এই মন্ত্র আরো বলছে, বহুশাস্ত্রপাঠীরাও দিক ভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ইতস্ততঃ ভ্রমণ করছে। উপনিষদ আমাদের বলে কেবল শাস্ত্রপাঠ করে ব্রহ্মলাভ হয় না। তোতাপাখির মত কেবল বেদ আওড়ে গেলাম, কিন্তু কি বলল তার কিছুই বুঝলাম না; তবে এই পাঠ আপনার বৃথা। তাই আপনি যখনই শাস্ত্র পাঠ করবেন তা বুঝে পাঠ করবেন। এতেই আস্তে আস্তে আপনার মাঝে বিকাশিত হবে জ্ঞানের, ধীরে ধীরে আপনি এগিয়ে যাবেন ঈশ্বর লাভের পথে।
ওঁ শান্তি! শান্তি! শান্ত

Image may contain: 1 person , text

ভগবদ্গীতায় চারটি যোগের কথা বলা হয়েছে

 কোই প্রাণ দিয়া ডাকার মতো ভক্তি সোহো করে ডাকুন তো কিছু দিন ? দেখুন তো উনি আসেন কি না ? শ্রীমৎ ভগবদ্গীতায় চারটি যোগের কথা বলা হয়েছে ----
১.কর্মযোগ
২. জ্ঞানযোগ
৩. ধ্যানযোগ
৪. ভক্তিযোগ।
-
কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ এবং ধ্যানযোগের মাধ্যমে ভগবানকে আংশিক ভাবে জানা যায়। কিন্ত ভগবদ্গীতায় ভগবান বলেছেন -- “ভক্ত্যা মামভিজানাতি” অথাৎ ভক্তির দ্বারাই ভগবানকে পূর্ণরূপে জানা যায়। তাই ভক্তিযোগই হচ্ছে ভগবানকে লাভ করার -সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা।
-
নীচে ভক্তির নয়টি পন্থা অনুশীলন করে ভগবানকে লাভ করেছেন তাঁদের দৃষ্টান্ত দেওয়া হল --
১. শ্রবণ --- মহারাজ পরীক্ষিত কেবল শ্রবণের মাধ্যমে ভগবদ্ধাম লাভ করেন। তিনি শ্রীল শুকদেবের নিকট থেকে কেবলমাত্র ৭ (সাত) দিন শ্রীকৃষ্ণ মহিমা শ্রবণ করেছিলেন।
২. কীর্তন --- শ্রীল শুকদেব গোস্বামী কীর্তনের মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করেন। তাঁর পিতা মহান ঋষি ব্যাসদেবের নিকট থেকে লব্দ অপ্রাকৃত সংবাদ- ভগবৎ গুন অবিকৃতভাবে কীর্তনের মাধ্যমে।
৩. স্মরণ --- মহারাজ প্রহ্লাদ ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত দেবর্ষি নারদ মুনির উপদেশ অনুসারে সর্বদা ভগবানকে স্মরণের মাধ্যমে পরম গতি প্রাপ্ত হন।
৪. বন্দনা --- কেবল স্তবের দ্বারা ভগবানের বন্দনা করার মাধ্যমে অক্রুর পরমপদ প্রাপ্ত হন।
৫. অর্চন --- (পূজা)- মহারাজ পৃথু কেবল ভগবানের পূজা করার মাধ্যমে সর্বোচ্চ সিদ্ধি প্রাপ্ত হন।
৬. পাদসেবন (সেবা) --- সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, লক্ষীদেবী কেবল একস্থানে উপবেশন করে শ্রী নারায়ণের পাদসেবা করে সাফল্য লাভ করেন।
৭. দাস্য (আজ্ঞা পালন) --- শ্রীরামচন্দ্রের সেবক মহাভক্ত হনুমান কেবল ভগবানের আজ্ঞা পালনের মাধ্যমে পরম গতি লাভ করেন।
৮. সখ্য ( ভগবানের সঙ্গে সখ্যতা স্থাপন) --- মহাবীর অর্জুন ভগবানের সঙ্গে সখ্যতা করার মাধ্যমে পূর্ণ সিদ্ধি অর্জন করেন। অত্যন্ত প্রীত হয়ে ভগবান অর্জুন ও অর্জুনের ভবিষ্যৎ অনুগামী মানুষদের জন্য ভগবদ্গীতার অমৃতময় জ্ঞান উপদেশ করেন।
৯. আত্মনিবেদন --- মহারাজ বলি তাঁর যথা সর্বস্ব এমনকি নিজ দেহটিকে ও ভগবানকে নিবেদনের মাধ্যমে পূর্ণ সাফল্য প্রাপ্ত হন।
অম্বরীষ মহারাজ উপরোক্ত নয়টি ভক্তির পন্থাই অনুশীলন করতেন এবং এভাবেই তিনিও পরমপদ প্রাপ্ত হন।মূলতঃ সকলের হৃদয়ে ভগবানের প্রতি ভক্তি গুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু জড় জাগতিক সঙ্গের প্রভাবে তা জড় কলুষের দ্বারা আবৃত হয়ে রয়েছে। এই জড় কলুষ থেকে আমাদের হৃদয়কে নির্মল করতে হবে। তাহলে সুপ্ত কৃষ্ণ ভক্তি জাগ্রত হবে। সেটিই হচ্ছে ভক্তিযোগের পূর্ণ পন্থা। ভক্তিযোগ অনুশীলন করতে হলে সদ্গুরুর তত্তাবধানে কতগুলো বিধিনিষেধ পালন করতে হবে। যেমন - সূর্য উদয়ের পূর্বে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে আরতি করা, হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ও কীর্তন করা। ফুল তুলে ভগবানের শ্রীচরণে নিবেদন করা, ভোগ রান্না করে তা ভগবানকে নিবেদন করা, ভক্ত সঙ্গ করা, নিরন্তর শুদ্ধ ভক্তের কাছ থেকে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবন করা, এই ভক্তিযোগ অনুশীলন করলে আমাদের হৃদয়ের কলুষতা দূরীভূত হয়। আমরা কৃষ্ণ ভক্তির স্তরে উন্নীত হতে পারি। তাই সদ্গুরুর তত্ত্বাবধানে বিধিবদ্ধ ভাবে ভক্তিযোগ অবলম্বন করলে অবশ্যই কৃষ্ণ ভক্তি লাভ করা যায়।

আসুন আজ আমরা জানাবো আমাদের সনাতন ধর্ম কেন মানব ধর্ম হিন্দু ধর্ম মানবের ধর্ম

 হিন্দু নামটা আমাদের দেওয়া নয়, পরের দেওয়া নাম। সংস্কৃতে এ শব্দটি নেই, কিন্তু এই নামটা আমরাও ছাড়তে পারি না। একেবারে চামড়ার সাথে মিশে গেছে। যেমন, একটি মানুষের নাম ঢেমনা। ঢেমনা মানে একটি লতার শেকড়। কিন্তু, নাম একবার হয়ে গেছে, তাই মানুষ তার নাম ঢেমনাই বলতে হবে। তেমনি, আমাদের ধর্মের নামও থাকবে হিন্দু। কিন্তু, হিন্দু আমাদের নাম নয়। এর একটি সুন্দর নাম আছে। নামটি হল “সনাতন ধর্ম”।
সনাতন মানে চিরস্থায়ী, চিরকালের ধর্ম। আসল নামটা হল মনুষ্যত্ব- এটাই মূল ধর্ম। মূল তত্ত্বটাই “মানবধর্ম”। প্রাচীন নাম সনাতন ধর্ম- মানব মাত্রেই এটা ধর্ম। আর এ জন্যই এই ধর্মে “conversion” নেই। ধর্মে কখনো convert করা যায় না। আপনার মধ্যে যদি মনুষ্যত্ব না থাকে, তবে আপনাকে মনুষ্যত্ব দেবার চেষ্টা করতে হবে। কি করে দেব? উপদেশ আর আদর্শ। আমি নিজে মানুষ হয়ে আপনার সাথে মেলামেশা করতে করতে আপনি আমাকে দেখে মানুষ হয়ে যাবেন। এই জন্যই হিন্দু ধর্মে convert করার কোন চেষ্টাই করা হয় নি। যেটা মানব ধর্ম, সেখানে আবার conversion কিসের? আপনি মানুষ আপনাকে অপর ধর্মে নেবার কোন অর্থ হয় না। যে মনুষ্যত্ব অর্জন করে নি, তাকে মনুষ্যত্ব দেবার চেষ্টা করা যায়; মানুষকে মনুষ্যপদ বাচ্য করে তোলবার চেষ্টা করা যায়।
তবে হ্যাঁ, শুধুমাত্র উপদেশ দিয়ে মানুষ গড়া কষ্টকর। চুরি করো না, মিথ্যা বলো না, হিংসা করো না, মানুষ হও, মানুষ হওয়া উচিত- ইত্যাদি উপদেশের সাথে একটি পরম আদর্শের যোগ করে দিতে হয়- যার কাছে যেতে হলে, যার কৃপা পেতে হলে আগে মানুষ হওয়া দরকার। যে চোর, সে তার অনুগ্রহ পায় না। যে মিথ্যাবাদী, তিনি তাকে শাস্তি দেন। এ ভাবে একটি বড় জিনিসের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। যেমন, মানুষকে ভাল করার জন্য পুলিশের ভয়, রাজার ভয়, জেলখানার ভয়- ইত্যাদি ব্যবস্থা সমাজকে রাখতে হয়েছে। তেমনি, মানুষকে মানুষ করার জন্য ভয়, ভালোবাসা, প্রেম, প্রীতি ইত্যাদি মিলিয়ে ঈশ্বরের সাথে একটা সম্পর্ক রাখতে হয়। অর্থাৎ মনুষ্যত্বের সাথে দেবত্বের আলো দেওয়া প্রয়োজন। লক্ষ্যটা মনুষ্যত্ব পর্যন্তই থাকবে না, আরও উপরে লক্ষ্যটি রাখতে হবে, তবেই ঠিক ঠিক মনুষ্যত্ব লাভ হবে।

যেকোনো বিদ্যা তা জোতিষ , চিকিসা , তন্ত্র , মন্ত্র ধর্ম

, অতিলৌকিক কোনো ঘটনা ,ভগবান , ঈস্বরে এগুলি খুবই জটিল ও গুহ্য , বিজ্ঞানীগণ যুক্তিবাদী গণ হয় তো বলিবেন ২ ও ২ যোগ করিলেই ৪ হয় , কিন্তু এই সব শাস্ত্র গুলি তে তা হয় না , হয় এর জন্য কোটি নিষ্টা ও সদ্ গুরুর আশীর্বাদ প্ৰয়োজন হয় , সর্বোপরি এই বিষয় গুলি সম্পর্কেই জ্ঞেন প্রাপ্ত করতেহলেয় যে, সাধনা ও নিয়ম এর দরকার তা আমরা মানি না , তাই কোনো ভুল হলেই সবাই কটূক্তি , ও রে রে কোরিয়া গলাবাজি করেন ,যা হোক সব বিষয়ে সমালোচনা প্ৰয়োজন, করুন বেশি করে সমালোচনা , কিন্তু তা বলেই না ধর্মের বিনাশ হবে না সত্যের পরাজয় , মনে রাখতে হবে যতক্ষণ এই শরীরে প্রাণ আছেই ততক্ষন সব সত্যি , ওই প্রাণ শক্তি দেহ হতে নির্গত হলেই সব শেষ , তারপর মানেই মৃত্যুর পর কি হয় কোথায় যাই , পরের জগৎ কি ? কি বিজ্ঞানী যুক্তি বাদী গণ কিছু ধারণা দিন তো আমি জানতে চাই ? হা হা হা যত বড়ো বেটা বীরপুঙ্গব হন , এই চোখ মুজিলেই সব ঘন অন্ধকার

জেনে নিন,কিছু প্রনাম মন্ত্রঃ 🌴🌹


১. গোবিন্দ প্রণাম মন্ত্র।

ওম ব্রহ্মাণ্ড দেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চঃ জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমঃ॥
২. শ্রীগৌরাঙ্গ প্রণাম মন্ত্র।
নমো মহাবাদান্যা কৃষ্ণপ্রেম-প্রদায় তে ।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্য-নাম্নে গৌরত্বিষে নমঃ ॥
৩. প্রভু শিবের প্রনাম মন্ত্র।
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হে তবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর।।
৪. শ্রী কৃষ্ণ প্রনাম মন্ত্র।
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপথে।
গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহস্তুতে ।। ১
ওঁ ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমো নমঃ ।। ২
৫. শ্রী রাধারানী প্রণাম মন্ত্র।
তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গীং রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী।
বৃষভানু সূতে দেবী তাং প্রণমামি হরি প্রিয়ে।।
৬. শ্রীশ্রীসীতা-রাম-প্রনামমন্ত্র ।
রামায় রাম-ভদ্রায় রামচন্দ্রায় মেধষে ।
রঘুনাথায় নাথায় সীতায়ৈ পতয়ে নমঃ ॥
৭. দেবীদূর্গার প্রণাম মন্ত্র।
যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃ রূপেন সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নম:
৮. সরস্বতীর প্রণাম মন্ত্র।
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচরসারে।
কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীণাপুস্তক রঞ্জিত হস্তে ভগবতি ভারতী দেবী নমস্তে ।
সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে ।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্ত্ত তে ॥
৯. শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।
গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।
রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।
১০. লক্ষ্মী দেবীর প্রনাম মন্ত্র।
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমঽস্তু তে।।
১১. মা কালীর প্রনাম মন্ত্র।
জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রা কালী কপালিনী দূর্গা শিবা সমাধ্যার্তী সাহা সুধা নমস্তুতে
১২. দেহ শুচীর মন্ত্র।
ওঁ অপবিত্র পবিত্রোবা সর্বাবস্থান গতহ্বপিবা।
যৎ সরেত পুন্ডরিকাক্ষং স বাহ্য অভ্যান্তরে শুচি।। ১
পাপোহং পাপ কর্মাহং পাপাত্মা পাপ সম্ভাবান্ ।
ত্রাহি মাং পুন্ডরীকাক্ষং সর্ব পাপো হরো হরি।। ২
১৩. গুরু প্রণাম মন্ত্র।
অখন্ড মন্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম।
তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।। ১
অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।। ২
গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর।
গুরু রেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।। ৩
১৪. শ্রী পঞ্চতত্ত্ব প্রণাম মন্ত্র।
পঞ্চতত্ত্ব আত্মকং কৃষ্ণং ভক্তরূপ স্বরূপকম্ ।
ভক্ত অবতারং ভক্তাখ্যাং নমামি ভক্ত শক্তিকম্ ।। ১
১৫. তুলসী প্রণাম মন্ত্র
বৃন্দায়ৈ তুলসী দৈব্যে প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ ।
কৃষ্ণ ভক্তি প্রদে দেবী সত্যবত্যৈঃ নমঃ নমঃ ।। ১
১৬. সূর্য প্রণাম মন্ত্র।
ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং।
ধ্বান্তারিং সর্ব পাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।। ১
১৭. বিশ্বকর্মা প্রনাম মন্ত্র।
দেবশিল্পিন্ মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধক।
বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্টফলপ্রদ॥
১৮. শনিদেবের প্রণাম মন্ত্র।
ওঁ নীলাঞ্জন দলশ্যামো ভিন্নাঞ্জন সমদ্যুতিঃ ।
শনৈশ্চরগ্রহঃ পুংসাং সদা শান্তিং প্রযচ্ছতু ।
নীলাঞ্জন চয়প্রখ্যং রবিসূনুং মহাগ্রহম্ ।
ছায়ায়া গর্ভসম্ভুতম্ বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম্ ॥
১৯. শ্রীবলরাম-প্রণামমন্ত্র
নমস্তে তু হলগ্রাম ! নমস্তে মুষলায়ুধ ! নমস্তে রেবতীকান্ত ! নমস্তে ভক্ত-বৎসল ! নমস্তে বলিনাং শ্রেষ্ঠ ! নমস্তে ধরণীধর ! প্রলম্বারে ! নমস্তে তু ত্রাহি মাং কৃষ্ণ-পূর্বজ ॥
২০. শ্রীশ্রীগৌর-নিত্যানন্দ-প্রণামমন্ত্র
বন্দে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-নিত্যানন্দৌ সহোদিতৌ ।
গৌড়োদয়ে পুস্পবন্তৌ চিত্রৌ শন্দৌ তমোনুদৌ ॥
আজানুলম্বিত-ভুজৌ কনকাবদাতৌ
সঙ্কীর্ত্তনৈক-পিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম-পালৌ
বন্দে জগৎ-প্রিয়করৌ করুণাবতারৌ ॥
২১. পিতা প্রনাম মন্ত্র।
পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম,
পিতাহি পরমং তপ।
পিতোরি প্রিতিমা পন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব
দেবতাঃ।।
২২. মাতা প্রনাম মন্ত্র।
মাতা জননী ধরিত্রী, দয়াদ্র
হৃদয়া সতী।
দেবীভ্যো রমণী শ্রেষ্ঠা নির্দ্দোশা সর্ব
দুঃখ হারা।।

আসুন বেদ সম্বন্ধেই কিছু আলোচনা করি


Image may contain: fire, night and candles
 জীবনের ধারা প্রবাহ সম্বন্ধেই বেদ কি বলেই দেখি আমরা কেন বেদসমূকে সত্য বলে স্বীকার করব? বেদসমূহ হচ্ছে সরাসরি ভগবানের বাণী, যা সৃষ্টির প্রারম্ভে প্রকাশিত হয়েছিল । যখন আপনি একটি মোটর সাইকেল কেনেন, তখন তার সঙ্গে একটি ইন্স্ট্রাক্শন ম্যানুয়াল বা ব্যবহার-বিধি নির্দেশিকা থাকে, যাতে ব্যাখ্যা করা থাকে কিভাবে ঐ মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করা যেতে পারে । ঠিক তেমনি, সৃষ্টির সময়ে ভগবান আমাদেরকে বৈদিক শাস্ত্র প্রদান করেন, যাতে ব্যাখ্যা করা থাকে এই জগত কেমন, কোথা থেকে উদ্ভূত, কিভাবে এই জগতে আচরণ করা উচিত ।
কয়েকটা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে বৈদিক জ্ঞান অভ্রান্ত । স্মরণাতীত কাল পূর্বে রচিত হলেও এমন সব তথ্য বেদে বর্নিত হয়েছে, বিজ্ঞান যা অতি সম্প্রতি আবিষ্কার করতে শুরু করেছে ।
১. ডালটন পরমানু আবিষ্কার করেছেন দু’শো বছরও হয় নি । আজ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বে রচিত শ্রীমদ্ভাগবতের মূল শ্লোকে পরমানু অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম কণা – এই তথ্য দেওয়া হয়েছে । ব্রহ্মসংহিতাতেও(৫/৩৫) বলা হয়েছে যে, শৃঙ্খলাযুক্ত জড় পদার্থের বিন্যাসে বৃহত্তম ইউনিট বা একক হচ্ছে ব্রহ্মান্ড, ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে পরমাণু (অন্ডান্তরস্থপরমাণুচয়া-অন্তরস্থং) । এইরকম সর্ববৃহৎ
ইউনিট বা ব্রহ্মান্ড একটি নয়, কোটি কোটি (একোহপ্যসৌরচয়িতুং জগদন্ডকোটিং – ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৬) ।
২. পাঁচশো বছর আগে ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলেই এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, পৃথিবী সমতল – গোল নয় । বেদে (যা সময়ের আদি থেকে বিদ্যবান এবং পাঁচ হাজার বছর আগে যা লিপিবদ্ধ হয়েছে) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে যে পৃথিবী গোল – ‘ভূ-গোল’ ।
৩. ক্রিস্টোফার কলম্বাস পাঁচশো বছর আগে জানতেন না যে পৃথিবীতে সাতটি মহাদেশ রয়েছে । রয়েছে সাতটি মহাসাগর । কিন্তু বৈদিক শাস্ত্রে স্মরণাতীত কাল থেকে এই সব তথ্য রয়েছে ।
৪. আইনস্টাইন স্থান ও কালের আপেক্ষিক সম্পর্ক বা আপেক্ষিকতাবাদ আলোচনা করেছেন মাত্র কিছু বছর আগে । কিন্তু ভাগবতপুরাণে ৫০০০ বছর পূর্বেই কুকুদ্মি মুনির আপেক্ষিকতা বিষয়ক অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে ।
৫. জড় বিজ্ঞান এখনো মন কি তা জানাতে পারছে না; আজ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বে বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে স্থূল-শরীর কঠিন(ভূমি), তরল(জল), গ্যাসীয়(বায়ু), তাপ(অগ্নি), আকাশ – ইত্যাদি পাঁচটি স্থূল উপাদানে তেরী, এবং মন, বুদ্ধি ও অহংকার – এই তিনটি সূক্ষ উপাদানে তেরী সূক্ষ শরীর । অর্থাৎ মন একটি জড় উপাদান (ভ.গী. – ৭/৪) ।
৬. বলা হয় যে শতকের গুণনীয়কের হিসাব ২/৩ হাজার বছর পূর্বে উদ্ভাবিত হয়েছে । অথচ বেদে অজস্র স্থানে শতকের গুণনীয়ক সংখ্যায় সহস্র-লক্ষ-কোটি-অর্বুদ-পরার্দ্ধের পর্যন্ত উল্লেখ রয়েছে । যেমন ৮৪ লক্ষ জীব প্রজাতির হিসাব (চতুর্লক্ষশ্চ মানবাঃ), আত্মার আয়তন (কেশাগ্রের ১০০০০ ভাগের এক ভাগ), কোটি কোটি ব্রহ্মান্ডের হিসাব (একোহপ্যসৌ রচয়িতুং জগদন্ডকোটিং/কোটিষ্বশেষ বসুধাদি বিভূতি ভিন্নম্ - ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৬) ইত্যাদি ।
গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকে যখন বিশ্বের গণিতবিদ্ বিজ্ঞানীরা একটি অংকের কোণোভাবেই সমাধান করতে পারছিলেন না, দক্ষিণ ভারতের ক্ষণজন্মা গণিতবিদ্ (৩২ বছরে মারা যান) রামানুজম্ বৈদিক গণিতের সাহায্যে দুইভাবে সেই জটিল অংকের সমাধান বের করে গণিতবিদদের বিস্মিত করেন ।
৭. এমন কি চিকিৎসাবিদ্যার সঙ্গে সম্পর্ক-রহিত, সম্পূর্ণ অপ্রাকৃত মহাগ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবত এও আমরা মানব ভ্রূণবিদ্যা বা গাইনিকোলজির এক উজ্জল বিবরণ দেখতে পাই, যেখানে মাতৃগর্ভে ১ম মাস থেকে ১০ম মাস পর্যন্ত মাসানুযায়ী ভ্রূণদেহের বিকাশের পরযায়ক্রমিক বিশদ ও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা প্রদত্ত হয়েছে । আজ অত্যাধুনিক জটিল যন্ত্রপাতির সাহায্যে যা জানা যাচ্ছে বৈদিক শাস্ত্রে তা হাজার হাজার বছর পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে ।
৮. বেদে বলা হয়েছে যে উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ – সকল জীবের দেহের মধ্যে রয়েছে প্রাণ, জীবনী শক্তি বা আত্মা । অথচ বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে এই বিশ্বাস প্রচার করতেন যে উদ্ভিদের প্রাণ নেই – যতদিন না জগদীশ চন্দ্র বসু তাঁর পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করে দেখলেন যে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে ।
৯. বেদ দাবী করেন যে এমনকি আগুনের মধ্যেও জীব রয়েছে । কিন্তু বিজ্ঞানীরা ভাবতেন যে, ফোটানো জলে বাঁচতে পারে না ব্যকটেরিয়া (সে জন্যই তাঁরা জল ফোটানোর মাধ্যমে নির্জীবকরণ করতেন) । কিন্তু সাম্প্রতিক চিকিৎসা গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে, এক ধরনের জীবানু রয়েছে যারা আগুনের মধ্যেও বাঁচতে সক্ষম, তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘আগুন ব্যকটেরিয়া’ (Fire Bacteria) । এছাড়া বহু প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণে এবং এমনকি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখেও তাঁরা ব্যকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন ।
১০. বেদে বিভিন্ন অবতারসমূহ বা মহাপরুষগনের বিশদ বিবরন-সহ ভবিষ্যতে তাঁদের আবির্ভাবের নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী প্রদত্ত হয়েছে । শ্রীমদ্ভাগবতে এরকম সাত জন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাবের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছেঃ- বুদ্ধদেব – শ্রীমদ্ভাগবতঃ- ১/৩/২৪, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু – শ্রীমদ্ভাগবতঃ- ১১/৫/৩২, মহাভারত – ১২৭/৯২/৭৫; চাণক্য –শ্রীমদ্ভাগবতঃ- ১২/১/১১; চন্দ্রগুপ্ত এবং সম্রাট অশোক – শ্রীমদ্ভাগবতঃ- ১২/১/১২, যীশু – ভবিষ্যপুরাণ
১১. মেডিকেল বিজ্ঞানে এখন উন্নতর মানের সার্জারী আমরা দেখতে পাই কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে তা আগে বর্ণনা করা হয়েছে যেমনঃ- ঘনেশের মাথায় হাতির মাথা সংযোজন, দক্ষের মাথায় ছাগলের মাথা সংযোজন ইত্যাদি ।
১২. আজকাল দেখা যাচ্ছে টেষ্টটিউব বেবি উৎপাদন হচ্ছে যা আমাদের শাস্ত্রেও বনর্ণা করা হয়েছে যেমনঃ- দ্রোনাচার্য, গান্ধারির ১০০ পুত্র ইত্যাদি ।
১৩. বেদে উল্লেখ আছে সব মল অপবিত্র কিন্তু গরুর গোবর পবিত্র, তাই যে কোন পূজাপার্বণে বা মাটির ঘরে গোবর লেপন করা হয় । বিজ্ঞানীরা ১৯৪০ সালে গোবরের মধ্যে প্রতিষেধক গুনাবলি আবিষ্কার করেন ।
১৪. বর্তমানে আমরা যে মেডিটেশন বা বিভিন্ন মেথড দেখতে পাই তা আমরা বেদ থেকেই পেয়ে থাকি ।
১৫. গণিতশাস্ত্রে যে পাটিগণিত ও জ্যামিতি দেখতে পাই তা আগে যজুর্বেদে বনর্ণা করা রয়েছে ।
১৬. গোবিন্দ স্বামী নিউটনের ১৮০০ বছর পূর্বেই ‘ইন্টারপোলেশন ফর্মূলা’ (Interpolation formula) আবিষ্কার করেন । ভটৈশ্বরাচার্য নিউটনের ১০০০ বছর পূর্বেই ‘ব্যাকওয়ার্ড ইন্টারপোলেশন ফর্মূলা’ (Backward Interpolation formula) আবিষ্কার করেন । নীলকান্ত মুণি নিউটনের ৮০০ বছর পূর্বেই ‘সমধর্মী ক্রম’ (Infinite Geometric Progression convergent series) আবিষ্কার করেন ।
১৭. পরমেশ্বরাচার্য লুইলারের ৪০০ বছর পূর্বেই ‘লুইলার ফর্মূলা’ আবিষ্কার করেন ।
১৮. ইতিবাচক ও নেতিবাচক (Positive and Negative) সংখ্যা প্রথম লেখা হয় ব্রহ্মগুপ্ত কতৃক রচিত ‘ব্রহ্মস্পুত সিধান্তে’ গ্রন্থে । তাও হাজার বছর আগে ।
১৯. কোপার্নিকাসের চেয়ে কমপক্ষে ১০০০ বছর পূর্বে আর্যাভট্ট ‘নিগূঢ় তত্ত্ব’ আবিষ্কার করেন ।
২০. বৈদিক শাস্ত্রে পৃথিবীর ব্যাস হল ৭৮৪০ মাইল আর বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর ব্যাস ৭৯২৬.৭ মাইল । বৈদিক শাস্ত্রে লেখা আছে পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব ২৫৩০০০ মাইল দূরে আর বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব ২৫২৭১০ মাইল ।
২১. বোদ্ধায়ন কতৃক সর্বপ্রথম পাই "pi" এর মান গনণা করা হয় এবং তিনি পিথাগোরাস তত্ত্বের ধারনা ব্যাখ্যা করেন । ইউরোপিয় গনিতবিদদের পূর্বে ৬ষ্ঠ শতকে তিনি এটি আবিষ্কার করেছিলেন । ব্রিটিশ পন্ডিতগন কতৃক ১৯৯৯ সালে তা পরীক্ষিত হয় ।
২২. ভারত থেকে বীজগণিত, ত্রিকনোমিতি এবং ক্যালকুলাস এসেছে । একাদশ শতকে শ্রীধরআচার্য কতৃক দ্বিঘাতের সহসমীকরন (Quadratic equations) নির্ণীত হয় ।
২৩. গ্রীক ও রোমানদের দ্বারা ব্যবহৃত সবচেয়ে বড় সংখ্যা ছিল ১০৬ যেখানে বৈদিক সময়ে খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বছর শুরুর দিকে হিন্দুরা সুনির্দিষ্ট নাম সহ 1053 এর মতো বড় । এমনকি বর্তমানেও সবচেয়ে বড় ব্যবহৃত সংখ্যা হচ্ছে টেরাঃ 1012 

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

স্মশানেই মা কালী কেন থাকেন

“  ? বন্ধুগণ আজ আপনাদের ওই কোথায় শুনাবো , মন দিয়া শুনুন শ্মশান” শব্দের অর্থ- শম স্থান । মৃত স্থান । চলতি কথায় যেখানে শবদাহ করা হয় সেই ক্ষেত্র শ্মশান ভূমি নামে পরিচিত । করালবদনী আদ্যাশক্তি মায়ের বিচরণ ক্ষেত্র এই শ্মশান । মা কালীকে ধ্বংসের দেবী বলা হয়। এই “ধ্বংস” বলতে সর্বনাশ করা নয়। এর অর্থ- “সংহরন” অর্থাৎ দেবী নিজেই এই সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড রচনা করেছেন- আবার তিনিই গুটিয়ে নেন। ঠিক যেমন মাকড়শা নিজেই জাল বোনে আবার নিজেই গুটিয়ে নেয় । জীব কর্মফল ভোগান্তে মায়ের কোলে আশ্রয় পেয়ে পায় অসীম শান্তি ও আনন্দ । এই শ্মশান তাই মাকালীর ক্রীড়া ক্ষেত্র ।
শ্মশান কে বৈরাগ্যভূমি বলা হয়। শ্মশানকে তপঃ সাধনার ভূমি বলা হয় । ১০ মিনিট শ্মশানে বসে থাকলে জড় দেহের নশ্বরতার প্রতিচ্ছবি আমাদের চোখের সামনে আসে। জীব তাঁর খাঁচা নিয়ে বড়ই অহংকার করে , কিন্তু খাঁচা থেকে পাখী মুক্ত হলে খাঁচা শ্মশানে এক মুঠো ভস্মে পরিণত হয়। জ্ঞানী গণ এই তত্ত্ব উপলব্ধি করে দেহ সুখ বিসর্জন দিয়ে সাধন ভজনে মন দেয়। শ্মশান কেই তাই তপঃ সাধনার কেন্দ্র করে বহু যুগ থেকে অনেক সাধক সাধিকারা সাধন ভজনে নিমগ্ন হয় । মৃত্যু কাউকে ছাড়ে না। এক রূপবতী অপ্সরা তুল্যা কন্যার মৃত্যুর হলে শ্মশানে তার দেহ এক মুঠো ভস্ম হয়- অপরদিকে এক কুৎসিত চেহারা বিকৃত ব্যাক্তির মৃত্যু হলে তাঁর শ্মশানে দেহের পরিণতি এক মুঠো ছাই। মৃত্যুর কাছে কোন ভেদাভেদ নেই। ধনী গরীব নির্ধন কাঙ্গাল সকলের মৃত্যুর পর দেহ ভস্মেই পরিণত হয় । সাধু গণ এই তত্ত্ব জানেন। কালের করাল গ্রাস থেকে কারোর মুক্তি নেই। তাই কালের কাল মহাকালকে গ্রাসকারীনি আদ্যাশক্তি মহামায়া কালীর উপাসনাতেই নিমগ্ন হন ।
কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, অহংকার, বাসনা গ্রস্ত এই শরীর । আত্মার এই সকল বোধ নেই। দেহান্তে এই রিপুগণের ক্রীড়া ক্ষেত্র শরীর টি জলন্ত চিতাতে ভস্ম হয়। রিপু গনের নাশ হলেই সাধকের মনে বৈরাগ্য জাগ্রত হয়। তাই এই রিপুর খেলার মাঠ শরীর টি জলন্ত চিতায় দগ্ধ হয় বলে মা কালী শ্মশানে বিরাজ করেন। মা তারা দেবী জলন্ত চিতায় অধিষ্ঠান করেন । ভগবতী ছিন্নমস্তা পদতলে মদন রতি দলিতা করেন । এই হোলো শ্মশানের পরিচয় । শ্মশান মন্দিরের মতোই পবিত্র। মন্দিরে শাস্ত্র পাঠ করে জড় দেহের পরিণামের কথা বলা হয়। শ্মশানে গেলে সেটার জীবন্ত উদাহরণ সচক্ষে দেখা যায়। তাই শ্মশান মা কালীর
Image may contain: 3 people , closeup

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

-মহালয়া মানে কি

Image may contain: one or more people
প্রশ্নঃ--মহালয়া মানে কি এবং কেনই বাএই মহালয়া আপনারা কি জানেন ?????.উত্তরঃ-সবাই নিশ্চই জানেন মহালয়া মানে দূর্গাপূজার দিন গোনা , মহালয়ার ৬দিন পর মহাসপ্তমী,তাই দেবিকে আমন্ত্রন জানানো ইত্যাদি।মহালয়ার তার চেয়েবড় গুরুত্ব আছে, সেটা কি আপনারা কেউ জানেন???.মহালয়া মানে পিতৃপক্ষের শেষ আরদেবীপক্ষের শুরু । হিন্দুধর্ম মতে, পিতৃপক্ষ (সংস্কৃত: पितृ पक्ष) পূর্বপূরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত।পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনিই সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকেপিতৃলোকে নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মেরএকজনেরমৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মেরএকজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় (ঈশ্বর) লীন হন এবং এইপ্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের উর্ধ্বে উঠে যান। এই কারণে, কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানহয়ে থাকে এবং এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যম একটিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।.ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। আসল দূর্গা পূজা হলো বসন্তে , সেটাকে বাসন্তী পূজা বলা হয় । শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবীর অকাল-বোধন বলা হয় ।.সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে , বিবাহ করতে গেলে প্রয়াতদের উদ্দেশ্যেঅথবা যাদের পিতা-মাতা নেই তাদের পিতা-মাতার জন্য, সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি- অঞ্জলি প্রদান করতে হয় । তর্পণ মানেখুশি করা । ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগে এদিনে এমনই করেছিলেন । সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরূষের স্মরন করেন,পূর্বপূরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্নাদের মর্তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্নার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া।.পিতৃপক্ষেরও এটি শেষদিন। পৌরাণিক মতে, মহাভারতের মহাযুদ্ধে কর্ণ যখন মারা যান, তখন তার আত্মাকে খাদ্য হিসেবে গয়না উৎসর্গ করা হয় । বিস্মিত,বিমূঢ় কর্ণ এর কারণ জানতে চান দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে । ইন্দ্র জানান যে,কর্ণ তার জিবদ্দশায় কখনও পূর্বপুরুষের প্রতি খাবার,জল অর্পন করেননি, বরং তার দানের বিষয় ছিল শুধুই সোনা। আর সেই কর্মফলই তার প্রতি ফিরে এসেছে। কর্ণ তা জানতেন নাবলে তাকে ১৬ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসতে সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে তিনিপিতৃপুরুষকে জল এবং খাবার অর্পন করতে পারেন । এই সময়কালই পিতৃপক্ষ হিসাবেপরিচিত হয় । মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী,চতুর্দশী ও অমাবস্যা। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীহ্মা মায়ের পুজার।এই দিনেই দেবীর চহ্মুদান করা হয় । মহিষাসুরমর্দিনীদেবী দূর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস ।.পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। ব্রম্মার বরঅনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবেনা। ফলতঅসীম হ্মমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হতে চায় । ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সন্মিলিত ভাবে “মহামায়া” এর রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহবাহিনী দেবী দূর্গা নয় দিন ব্যাপি যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করলেন ।

রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বেদে আল্লাহ শব্দটির কোন উল্লেখ নেই


বেদ সম্বন্ধে সম্পূর্নই অজ্ঞ জাকির নায়েক দাবী করেছে যে বেদ এ ‘আল্লাহ’ শব্দটি আছে।তাহলে পরোক্ষভাবে সে স্বীকার করে নিল যে দেবভাষা সংস্কৃত সকল ভাষার আদি এবং আরবি ভাষারও উত্‍পত্তি ওই সংস্কৃত ভাষা থেকেই!
মূল আলোচনা শুরুর পূর্বে পাঠকদের স্মরন করিয়ে দেই আরবীতে ‘আল্লাহ’ শব্দটি দুইটি অংশ ‘Al'(The) এবং ‘Ilah'(Subject of worship) নিয়ে গঠিত।
ঋগবেদ এ ইলা এবং অলা নামক দুটি শব্দ আছে।জাকির যে মন্ত্রেই এই শব্দদুটো পাচ্ছে সেখানেই ইসলামিক তাকিয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রলাপ বকছে যে সঠিকভাবে উচ্চারন করলে তা নাকি আল্লাহ হয়!(নতুন সংস্কৃত উচ্চারন পদ্ধতি আবিস্কার)।আরো মজার বিষয় হল ইলা এবং অলা দুটি আলাদা শব্দ ই কিভাবে একটি নির্দিষ্ট শব্দ(আল্লাহ) নির্দেশ করে?
ভন্ড জাকিরের দাবী(অপ্রকৃতিস্থের প্রলাপ) অনুযায়ী ঋগবেদ ২.১.১১,৩.৩০.১০,৯.৬৭.৩০,১.১৩.৩ এই চারটি মন্ত্রে ‘আল্লাহ’ শব্দটি রয়েছে।মন্ত্রগুলোর সরলার্থ সহ দেখে নেয়া যাক-
অলাত্নো বল ইন্দ্র ব্রজো গোঃ পুরা হন্তোর্ভয়োমানো
ব্যয়ার।
সুঘান পথো অক্ষণোন নিরজে গোঃ পরাবন বাণীঃ পুরুহূতং ধমন্তী।।
(ঋগবেদ ৩.৩০.১০)
অনুবাদ-হে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের চালনাকারী,শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিদের বিঘ্ন সৃষ্টিকারীরা অবশ্যই তোমার নিকট শাস্তি প্রাপ্ত হয়।সত্‍ ও সাধুদের জন্য তুমি পথ করেছ সুপ্রশস্ত।
স্পষ্টতই যেহেতু সুক্তটি ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে সেহেতু অলা এখানে ইন্দ্রের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ইলা সরস্বতী মহী তিস্রো দেবির্ময়োভুবঃ।
বহিঃ সীদংত্বস্রিধ।।
(ঋগবেদ ১.১৩.৯)
অনুবাদ-মাতৃভাষা ­,মাতৃসভ্যতা ও মাতৃভূমি(ইলা) এইতিন দেবী;তারা যেন কল্যানময়রুপে অন্তঃকরনে অবস্থান নেয় অনন্তকাল।
এখানে ইলা মাতৃভূমি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
ত্বমগ্নে অদিতির্দেব দাসুসে ত্বং হোত্রা ভারতী বর্ধসেঘিরা।
ত্বমিলা ষতহিমাসি দক্ষসি ত্বং বর্ত্রহা বসুপতে সরস্বতী।।
(ঋগবেদ ২.১.১১)
অনুবাদ-হে প্রকাশমান পরমাত্মা,সকলের আশ্রয়দাতা,আমাদের এই স্তব গ্রহন কর।তুমি এই বর্নিল ঋতুময় মাতৃভূমিকে সম্পদশালী কর,নাশ কর অসত্‍ এর।
এখানে ত্বম-ইলা(তুমি ইলা) অর্থাত্‍ ইন্দ্রের অপর একটি নাম হিসেবে ইলা ব্যবহৃত হয়েছে।
অলায়স্য পরাশুরননশ্য ত্বম পবস্ব দেব সোম।
অখুঃ চিদেব দেব সোম।।
(ঋগবেদ ৯.৬৭.৩০)
অনুবাদ– হে মঙ্গলদায়ক,ঐশ্বর্যশালী পরমেশ্বর,তুমি সাধুলোকের শত্রুদের ধ্বংস কর,অসত্‍ এর বিনাশ কর।
এখানে অলা বলতে সোমকে নির্দেশ করা হচ্ছে।
জাকির নায়েকের মতে প্রতিটি সংস্কৃত অভিধান এ ই আল্লাহ শব্দটি আছে এবং এর অর্থ হিসেবে ঈশ্বর দেয়া আছে।সবচেয়ে বিখ্যাত সংস্কৃত অভিধান যা Dr. Monier Williams কর্তৃক লিখিত (A Sanskrit-English Dictionary, Motilal Benarasidass, Delhi,1981) এ আল্লাহ বলে কোন শব্দ নেই।যে কাছাকাছি শব্দগুলো সেখানে আছে তা হল অলা যার অর্থ সেখানে দেয়া ‘কাঁকড়াবিছের লেজের হুল”, অলাত যার অর্থ দেয়া আছে “কয়লা” এবং আল যার অর্থ দেয়া হয়েছে “বিষাক্ত পোকা থেকে নির্গত তরল বিষ।”
অন্যতম বিখ্যাত সংস্কৃত অভিধান (The Student’s Sanskrit-English Dictionary by Vaman Shivaram Apte, Motilal Benarasidass, Delhi, 2005) এ একটি শব্দ আছে যা হল অল্লা যার অর্থ দেয়া হয়েছে “মা”
সুতরাং ইসলামিক অপপ্রচারকদের থেকে সতর্ক থাকুন।

শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

একটি অকৃজ্ঞ ও লোভী ইঁদুর এবং মহাতপা মুনীর কাহিনী

Image may contain: 1 person , beard
গৌতম মুনির আশ্রমে মহাতপা নামে এক মুনি বাস করতেন। তিনি ছিলেন পরম যোগী। ঋষি মহাতপা যখন ভগবানের মহিমা কীর্তন করতেন সেসময় একটি ইঁদুর এসে চুপটি করে ঋষির সামনে বসে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে সেই মহিমা শ্রবণ করত।ইঁদুরের মত একটি জীবের মধ্যেও এত ভক্তি দেখে ঋষি মহাতপার সেই ইদুরের প্রতি অত্যন্ত করুণা হল।তিনি ভাবলেন, এই ছোট্ট জীব ইঁদুরের সবসময় বৃহৎ জীবদের ভয়ে থাকতে হয়।যেকোনো সময় কোনো বৃহৎ জীবের হাতে তার প্রাণ যেতে পারে।তিনি ঠিক করলেন এই ইঁদুরটির
এরকম জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন যাতে সে ভয় না পেয়ে সসম্ভ্রমে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।
ঋষি মহাতপার এমনই অলৌকিক শক্তি ছিল যে তিনি যাকে যা বলতেন সেটিই সত্যি হতো।তাই ইঁদুরটির দুঃখ দূর করার জন্য ঋষি মহাতপা ভগবানের কাছে ইঁদুরটিকে সিংহে রূপান্তরিত করার জন্য প্রার্থনা করলেন। আর তক্ষুনি সেই ছোট্ট ইঁদুরটি এক বিরাট সিংহে রূপান্তরিত হল।
যেহেতু এখন সে সিংহ হয়েছে তাই সে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে গর্জন করতে করতে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। অন্য জন্তুরা তাকে অবনত হয়ে সম্মান নিবেদন করতো এবং তার নামে 'জয় পশুরাজ কি -জয়' বলে জয়ধ্বনি দিত।বনের অন্যান্য পশুরা আসল ব্যাপারটি কিছুই জানতো না।প্রকৃত সত্যটি জানতেন শুধু ঋষি মহাতপা। কৃত্রিম সিংহটিও এই ব্যাপারে সচেতন ছিল যে তার প্রকৃত বংশপরিচয় জানেন শুধু ঋষি মহাতপা। তার মনে ভয় ছিল যে কোনদিন যদি কেউ তার আসল পরিচয় জেনে ফেলে যে সে সিংহ নয়,সে একটি ইঁদুর, তাহলে সেদিন থেকে কেউ আর তাকে ভয় পাবে না,সম্মান করবে না।তার এই মানসিক সমস্যা দূর করে নিশ্চিত হবার জন্য কৃত্রিম সিংহটি একদিন ভাবল,যদি ঋষি মহাতপাকে হত্যা করা যায়
তাহলেই আর কেউ কিছু জানতে পারবে না।
পরদিন সিংহ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঋষি মহাতপাকে হত্যা করতে এলো। কিন্তু ঋষি তাঁর যৌগিক ক্ষমতাবলে সিংহের অভিপ্রায় জানতে পারলেন। মূর্খ সিংটি আসলে তার ক্ষমতা টিকে থাকার লোভে অন্ধ হয়ে একথা বুঝতে পারে নি যে, যে তাকে ইঁদুর থেকে সিংহে পরিণত করেছিল, সে পুনরায় তাকে ইঁদুর করে দিতে পারে।আর হলোও তাই।ঋষি মহাতপা সিংহের বদমতলব বুঝতে পেরে তাকে আবার ইঁদুরে পরিণত করে দিলেন।
হিতোপদেশঃ
প্রথমত,ঋষি মহাতপার দিক দিয়ে দেখতে গেলে ইঁদুরের প্রতি তাঁর করুণা যথার্থ করুণা ছিল না।প্রকৃত করুণা হল সেটাই যার ফলে যেকোনো জীবই ভগবানের সান্নিধ্য লাভের যোগ্য হয়ে ওঠে। এই গল্পের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইঁদুরটি ভক্তিভরে প্রতিদিন ভগবানের মহিমা শ্রবণ করত।কিন্তু ইঁদুরটিকে আরও বেশি করে ভগবানের মহিমা কীর্তন না শুনিয়ে বা ভগবানের প্রসাদ সেবন না করিয়ে(যার ফলস্বরূপ হয়তো ইঁদুরটি পরবর্তী জন্মে অধ্যাত্ম সাধনশীল মানবজন্ম লাভ করতে পারতো) তিনি তাকে সিংহে পরিণত করলেন। এটা এখানে বিধির উপর বিধানগিরির অপরাধ হয়ে গেল। ভগবানই আমাদের একমাত্র স্রষ্টা, তিনি জানেন,জীবের কর্মফল অনুযায়ী কাকে কোন জীবন দান করলে তার মঙ্গল হবে।প্রকৃত ভক্ত তাই যোগীর ন্যায় অলৌকিক শক্তি কামনা করেন না,যার ফলে অহংকার উৎপন্ন হয়ে ভক্তিজীবনকে নষ্ট করে।অতএব পার্থিব করুণা প্রকৃত করুণা নয়।এর দ্বারা পরিশেষে কারোরই কল্যাণ হয় না। পারমার্থিক করুণাই প্রকৃত করুণা।
দ্বিতীয়ত, সিংহ বা ইঁদুরটির দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমরা এই শিক্ষা লাভ করি যে আমরা এই জগতের কোনো শক্তি বা বিষয়ই যে আমার নয় এই কথা ভুলে গিয়ে লোভে বা অহমিকায় অন্ধ হয়ে যদি আমরা স্রষ্টার বিরুদ্ধাচরণ করি,তাহলে যা কিছু আমরা অর্জন করি না কেন তা সবই হারিয়ে ইঁদুরটির(পুনর্মুষিক ভবঃ) মতোই আমাদের অবস্থা হবে। তাই সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাটি হল,সকল সময়ে ভগবানের শরণাগত থাকা।
গল্পটি পড়ে আপনার অনুভূতির কথা বা কি শিখতে পারলেন তা কমেন্টে জানাবেন।
শেয়ার করে সকলকে জানার সুযোগ করে দিন।

শিবলিঙ্গ সম্পর্কে ৭টি তথ্য আপনার যাবতীয় ধারণা বদলে দেবে!

Image may contain: plant and outdoor
শিবলিঙ্গের পূজা হিন্দুদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। শিব মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গের অবস্থান বহু প্রাচীন যুগ থেকেই ভারতে প্রচলিত রয়েছে।
এই রীতি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণাও মানুষের মনে রয়ে গিয়েছে। এখানে রইল শিবলিঙ্গ সম্পর্কে ৭টি তথ্য, যা সকলেরই জেনে রাখা প্রয়োজন.....
১. শিবলিঙ্গের পূজা কেবল ভারত আর শ্রীলঙ্কায় সীমাবদ্ধ নয়:
প্রাচীন রোমে ‘প্রায়াপাস’ নামে যে বিগ্রহের পূজা হতো, অনেকের মতে সেটি শিবলিঙ্গই ছিল। হরপ্পা-মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু শিবলিঙ্গ।
২. শিবলিঙ্গে থাকে মোট তিনটি অংশ:
সবচেয়ে নীচের চারমুখী অংশটি থাকে মাটির নীচে। তার উপরের অংশটি আটমুখী, যা বেদীমূল হিসেবে কাজ করে। আর একেবারের উপরের অর্ধবৃত্তাকার অংশটি পূজিত হয়। এই অংশটির উচ্চতা হয় এর পরিধির এক তৃতীয়াংশ। এই তিনটি অংশের সবচেয়ে নীচের অংশটি ব্রহ্মা, তার উপরের অংশটি বিষ্ণু ও একেবারে উপরের অংশটি শিবকে প্রতীকায়িত করে। বেদীমূলে একটি লম্বাকৃতি অংশ রাখা হয়, যা শিবলিঙ্গের মাথায় ঢালা জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই অংশের নাম গৌরীপট্ট, যা মূলত যোনিপ্রতীক।
৩. শিবলিঙ্গ পূজার মধ্যে কোনও অশ্লীলতা নেই:
শিবলিঙ্গ একই সঙ্গে শিবের সৃজনাত্মক ও ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতীক। অনেকে যে একে পুরুষাঙ্গের পূজা হিসেবে ব্যাখ্যা করে অশ্লীলতা বলে মনে করেন, তা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা। তা ছাড়া, হিন্দু ধর্মে শিবকে নিরাকার বলে মনে করা হয়। কাজেই তাঁর লিঙ্গ যে একেবারেই প্রতীকী বিষয়, তা বোঝা প্রয়োজন।
৪. স্বামী বিবেকানন্দের ব্যাখ্যা: 
স্বামীজী ‘অথর্ববেদ’-এর শ্লোক উদ্ধৃত করে শিবলিঙ্গকে আদি ব্রহ্মের স্বরূপ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর মতে, আদি ও অন্তহীন ব্রহ্মের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।
৫. শিবলিঙ্গের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
শিবলিঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাবে এর লম্বাকৃতি অংশটিতে পরপর তিনটি খাঁজ কাটা রয়েছে। বিজ্ঞানী নিলস বোরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই তিনটি খাঁজ আসলে অণুর তিনটি উাপাদান— প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রনের প্রতীক। এই তিনটি উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। অর্থাৎ কার্যত ব্রহ্মাণ্ডের গঠনের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।
৬. শিবলিঙ্গের বৈদিক ব্যাখ্যা:
শিবলিঙ্গ যেহেতু ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক সেহেতু শিবলিঙ্গ পূজা করার অর্থ, আদি শক্তির সঙ্গে চৈতন্যের মিলনকে স্মরণে রাখা। এই ‘মিলন’-এর অর্থ অবশ্য শারীরিক মিলন নয়, বরং এ এক অতিপ্রাকৃত মিলন। প্রসঙ্গত এ কথাও বলা প্রয়োজন যে, সংস্কৃত ভাষায় ‘লিঙ্গ’ শব্দটির অর্থ কিন্তু পুরুষাঙ্গ নয়, বরং চিহ্ন। নির্গুণ শক্তি যখন সগুণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে তখন লিঙ্গই হয়ে ওঠে সেই রূপান্তরের চিহ্ন।
৭. শিবলিঙ্গের গায়ে যে সাপটি থাকে তা আসলে সুপ্ত চেতনার প্রতীক:
শিবলিঙ্গের গায়ে অনেক সময়ে যে সাপটি প্যাঁচালো অবস্থায় দেখা যায়, সেটি আসলে কুলকুণ্ডলিনীর প্রতীক। এই শক্তির জাগরণকে চিহ্নিত করে শিবলিঙ্গ।